শ্বাসফুল

আচ্ছা মা, বিয়ের আগে আসিফের সঙ্গে কি কারো সম্পর্ক ছিল?

শায়লা জাবীন
শায়লা জাবীন শায়লা জাবীন
প্রকাশিত: ০৫:১১ পিএম, ২১ জানুয়ারি ২০২৩
ছবি- সংগৃহীত

বেশ সকালে ঘুম ভেঙে গেলো জারার, পাশ ফিরে দেখে ওপাশ ফিরে আসিফ ঘুমাচ্ছে, উঠে বসে ঘড়ি দেখলো জারা, এরপর আস্তে করে উঠে ওয়াশরুম থেকে এসে জ্যাকেট, জুতা পরলো এরপর পকেটে কিছু জিনিস ভরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

সকালটা এত সুন্দর, সতেজ চারপাশ। অনেক রকমের পাখি একসঙ্গে ডাকছে, চারপাশে ঘন কুয়াশা, নিকট দূর ও ঝাঁপসা, যদিও একা তবুও মন ভালো হয়ে গেলো, হাঁটতে হাঁটতে জারার চোখে পড়লো কালকের লাল বাক্সটা, কুয়াশায় ভিজে আছে ওপরটা, সে পকেট থেকে একটা টিস্যু বের করে উঠিয়ে নিলো, খুলে দেখলো ছোট্ট সেই নাকফুল।

এরপর বাক্সটা পকেটে রেখে সামনের দিকে এগোলো, বায়ে মোড় নিতেই গাছটা চোখে পড়লো, ফুলে ফুলে ভরা, কাল সন্ধ্যায় এই গাছটার কথাই মালতি বলছিলো, ধুতুরা ফুল। গাছের ডাল, পাতা ও কান্ড ভালো করে লক্ষ্য করলো যারা, একটু গন্ধ ও শুকলো এরপর সামনে এগুলো, রাস্তায় শামছুর সঙ্গে দেখা, জারাকে দেখে একটু যেন চমকালো, এরপর স্বাভাবিক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো ম্যাডাম এত সকালে উঠছেন? চা নাস্তা কিছুই তো মনে হয় খান নাই, আমি এখন গিয়ে তৈরি করবো।

আমি তো অনেক আগে ঘুমিয়েছি, তাছাড়া ছোটবেলা থেকেই সকালে উঠার অভ্যাস, তুমিও তো বেশ সকালে উঠেছো, ঘুমিয়েছো অনেক দেরিতে বলে শামছুর দিকে তাকালো। শামছু কোনো কথা খুঁজে পেলো না, হেসে বললো হেঁটে আসেন, চা নাস্তা রেডি হয়ে যাবে।

জারা সামনে এগোলো। রঙিন শাড়ি পরা মেয়েরা লাইন ধরে সারি বেঁধে বাঁশের ঝুড়ি নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে, এত সুন্দর লাগছে। ছবি তুলতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু অনুমতি না নিয়ে তো তোলা ঠিক হবে না। জারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে, পায়ে সস্তা দুই ফিতার রাবারের স্যান্ডেল, আচ্ছা ওরা কি সুখী? নাকি দুঃখ কষ্টে ভরা মন, পুড়ে যায় সারাক্ষণ...

জারার চোখে পানি চলে আসলো, পানি ঢাকতেই উল্টাপথে হাঁটা ধরলো, সাথে সাথেই চোখে পড়লো কেয়ারটেকার পরিমল ধুতুরা গাছের নিচে কিছু একটা খুঁজছে... একটু পাশেই মালতি দাঁড়িয়ে ফুল নিয়ে মাথায় দিলো আর খিলখিল করে হাসছে

জারা শর্টকাট ছেড়ে অন্যপথে বাংলোর দিকে হাঁটা দিলো, একটা রবীন্দ্রসংগীত মাথায় ঘুরছে...

‘এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম,
প্রেম মেলে না, শুধু সুখ চলে যায়
এমনি মায়ার ছলনা’

তার শাশুড়ি নিগার সুলতানা দাঁড়িয়ে, জারাকে দেখে বলো সকালেও তুমি একা বেরোলে? আসিফকে নিতে, আপনার ছেলে তো ঘুমায়... কই আমি তো একটু আগেই দেখলাম বাবুর্চি আর কেয়ারটেকারের সঙ্গে বকবক করতে।
জারা চুপ হয়ে গেলো...

শোনো মা, যদিও এটা তোমাদের ব্যক্তিগত বিষয়। তোমরা আধুনিক ছেলেমেয়ে, সবই বোঝো তবুও বলি, বাচ্চা নিবা না? নিয়ে ফেলো... জারা তার শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি মা?

বলো...

আসিফের কি কারো সঙ্গে প্রেম ছিল? কোনো কারণে বিয়ে হয়নি, হতেই তো পারে, একদমই অস্বাভাবিক কিছু না। নিগার সুলতানা অবাক হয়ে জারার দিকে তাকালেন, মেয়েটাকে সে খুবই পছন্দ করেন, মুখে বললো এই কথা কেন বলছো, তোমরা কি সুখী না?

এটা তো আমার প্রশ্নের উত্তর হলো না মা...

আসিফ সারাজীবনে পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থেকেছে, প্রেম তো দূরের কথা, আমি কখনো ওর কোনো মেয়ে বন্ধু দেখিনি, ওর বন্ধুবান্ধব সব ছেলে। নিজের ছেলে বলে বলছি না মা, আসলেই সে খুবই সাদামাটা। কি সমস্যা আমাকে কি বলা যায়?

নাহ ঠিক আছে, কিছু না...
চলেন চা খাই, খিদা লাগছে
শিরিন নাহার গায়ে শাল জড়াতে জড়াতে এসে বললেন, সাত সকালে বউ শাশুড়ির কি এত গল্প?
জারা বললো, তোমাকে বলবো কেন?
দুই মা একসাথে হেসে উঠলো...

নাস্তা শেষে সবাই বের হলো গাড়িতে করে শুধু জারা ছাড়া, শরীর ভালো লাগছে না, বলে থেকে গেলো।
শিরিন বলছে ঠান্ডার মধ্যে অত সকালে বের হলি কেন অচেনা জায়গায়।

আসিফ শুনে কিছুই বললো না, শুধু বললো আমি যাই তাদের নিয়ে, তোমার কোনো কিছু দরকার হলে আমাকে ফোন দিও, আর পরিমল আছে, শামছুকে বলো দুপুরে কি খাবে।

জারার এত কান্না পেলো, কোনো রকম ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো, কান্না আর থামে না...

‘এরা ভুলে যায়, কারে ছেড়ে কারে চায়।
ভুলে যায়, কারে ছেড়ে কারে চায়।
সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না।’

জ্যাকেট থেকে লাল বক্সটা বের করলো বেশ সাবধানে, হাতে হ্যান্ড গ্লাফ্স পরে নাকফুল টা হাতে নিলো, ঘরে লাইট দিয়ে ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখলো...
কপালে চিন্তার ভাঁজ।

আবার আগের মতো সব রেখে একটা ট্রান্সপ্যারেন্ট ব্যাগে ঢুকালো বাক্সটা। এরপর পকেট থেকে বের করলো ধুতুরা ফুল, বীজ, পাতা, গাছের বাকল। এগুলো সব রাখলো আর একটা ট্রান্সপারেন্ট ব্যাগে। খাটের ওপর বসলো, আসিফের পাশটা তাকিয়ে দেখলো, আসিফের চেঞ্জ করে রেখে যাওয়া ট্রাউজার আর টি শার্ট এর পকেট চেক করলো....
একটা ছোট্ট নীল রঙের কাগজের রশিদ।

জারা গুগলে বেশ কিছু জিনিস সার্চ করে দেখলো, তারপরে বাথরুমে গিয়ে জারা শাওয়ার নিলো অনেকক্ষণ, বের হয়ে এসে চুল মুছে আয়নার সামনে দাঁড়ালো, কান্নার জন্য চোখ ফোলা ফোলা লাগছে, চোখে ঘন করে কাজল দিয়ে অফিসে ফোন দিলো, তার বসের সঙ্গে কথা হলো ১০ মিনিট, এরপর মোবাইল থেকেই ইমেইল করলো দুইটা, বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছে, চেষ্টা করছে স্বাভাবিক থাকতে।

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]