চীনে তুষার আনন্দে মেতেছে বাংলাদেশিরা

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫২ এএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
চীনা নাগরিক রুবিনা বেইজিংয়ে এটা ছিং লুং হু পার্কে বরফ ও তুষার কার্নিভালে

আরও একটি শীতকাল এসেছে, সঙ্গে বছর ঘুরে এলো চন্দ্র নববর্ষ। নববর্ষ উপলক্ষে চীনজুড়ে এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। বসন্ত উৎসব উদযাপনের পাশাপাশি উদ্দীপনায় বরফ ও তুষার ক্রীড়ার আনন্দ উপভোগ করছে চীনা নাগরিকসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

চীনে এখন চলছে পুরোদমে শীতকাল। অনেক শহরের তাপমাত্রা এক থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠা-নামা করে। আবার কোনো কোনো শহরের তাপমাত্রা মাইনাস ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে। শীতকালে বেইজিং, হেবেই, হেইলংচিয়াং, চিনলিন, ইনার মঙ্গোলিয়া, চিয়াংসু, লিয়াওনিং, হুবেইসহ অধিকাংশ প্রদেশে প্রচুর তুষারপাত হয়।

প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে বরফ ও তুষার বিনোদন বর্তমানে বাংলাদেশসহ চীনা মানুষের বসন্ত উৎসবের ছুটি কাটানোর পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যাবতীয় বিধিনিষেধ শিথিল করার বরফ ও তুষার আনন্দ উপভোগ অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।

China1.jpgবিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বরফ নিয়ে খেলা করছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বায়েজিদ বোস্তামি

তুষার পড়ার সময় বাইরের পরিবেশ সাদা স্নিগ্ধ কাশফুলের বাগানের মতো দেখায়। রাস্তার গাছগুলো তুষারকে আলিঙ্গন করে নিয়েছে। তুষারের ভারে নুয়ে পড়ে মগডাল, পাতারাও ঝুলে আছে দোলনার মতো।

বাংলাদেশে তুষারপাত দেখা, তাও আবার নিজের চোখে দেখা, হাত দিয়ে স্পর্শ করা! তুষার নিয়ে খেলা করা! এসবইতো কল্পনার বাইরে। কিন্তু চীনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা কল্পনাকেও হার মানিয়ে নরম পালকের মতো ধবধবে সাদা তুষারে আনন্দ উপভোগ করছে। আর স্মৃতিগুলো ক্যামেরায় বন্দি করছে অনেকে।

আগে আমরা বিভিন্ন হলিউড মুভিতে বরফ পড়া দেখতাম। তখন খুব ইচ্ছে ছিল ধবধবে সাদা তুষারে আনন্দ উপলদ্ধি করা কিন্তু এই স্বপ্নটা বাস্তবায়ন হয়েছে চায়নাতে এসে। শীতকালে চায়নাতে প্রায় সব জায়গাতেই বরফ পরেছে, এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করেন শুঝৌ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রাফিদ ইবনে মাজহার।

China1.jpgতুষার ও বরফ আনন্দে মেতেছে চীনা নাগরিকরা

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বরফ পড়ে না। সেখানে শীতকালে অনেক কুয়াশা হয়। কিন্তু চায়নাতে শীতে কুয়াশা কম হলেও এখানে বরফ পড়ে। শুধু বাঙালি নয়, চীনে বসবাসরত অন্যান্য বিদেশিরা বরফ পড়ার আনন্দ উপভোগ করে এবং সবাই নিজের মতো ছবি, ভিডিও করে নিজের স্মৃতি ধারণ করে থাকে। বাঙালী হিসেবে এই ‘স্নো-ফল’ দেখতে পেরে আমি খুবই খুশী।

কথা হয় চীনা নাগরিক ওয়াং তানহোং যিনি বেইজিংয়ে বসবাস করছেন, তার বাংলা নাম রুবিনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষায় পড়াশোনা করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বরফ না দেখলেও শীতকালীন সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করেছি। শীতকালে পিঠা উৎসবে গিয়ে বিভিন্ন রকমের পিঠা খেয়েছি, বিশেষ করে ভাপা পিঠা।

China1.jpgপার্কে শিশুরা বিনোদনমূলক কার্যক্রমে নিচ্ছে

চীনে করোনাভাইরাস শিথিল হওয়ায়, এই প্রথম আমরা বরফ ও তুষারের নান ধরনের খেলাধুলার আনন্দ উপভোগ করতে পারছি। বেইজিংয়ের সামার প্যালেস, ওল্ড সামার প্যালেস, শি ছা হাই ও বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক পার্কসহ বিভিন্ন জায়গায় চীনা নাগরিকরা নানা বিনোদনমূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বায়েজিদ বোস্তামি বলেন, গত তিন বছর করোনা মহামারির কারণে চাইনিজ নিউ ইয়ার এবং স্নো ফলের যে উৎসব কোনোটাই উদযান করতে পারিনি। কিন্তু এই বছর কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় চাইনিজ জনগনসহ আমরা বাংলাদেশিরা খুব ভালোভাবে এই উৎসবগুলো উদযাপন করতে পারছি। চাইনিজ নিউ ইয়ার এবং বরফ ও তুষার আনন্দ উপভোগ, এক কথায় অসাধারণ।

China1.jpgবাংলাদেশি শিক্ষার্থী রাফিদ ইবনে মাজহার তুষারের আনন্দ উপভোগে মেতেছেন

সম্প্রতি বেইজিংয়ের সামার প্যালেস, ওল্ড সামার প্যালেস, শি ছা হাই ও বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক পার্কসহ ৬০টিও বেশি স্কেটিং মাঠ খোলা হয়েছে। অন্যদিকে, চীনের জাতীয় আলপাইন স্কি সেন্টার প্রথমবারের মতো জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

দর্শনার্থীরা বরফে স্লাইড করতে, বরফের গাড়ি ও বাইকসহ নানা বিনোদনমূলক কার্যক্রমে নিচ্ছে। অনেক স্কি প্রেমিক স্কি করতে এসেছে থাকে। পাশাপাশি গত বছর বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকের সাফল্য উপভোগ করছেন চীনারা।

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]