সেই মালা ঝরে গেছে, তবে স্মৃতিটুকু রয়ে গেছে

রহমান মৃধা
রহমান মৃধা রহমান মৃধা
প্রকাশিত: ১২:৪৩ পিএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ফুল পরাগায়নে সাহায্য করে। ফুল থেকে ফল হয়। ফুল ঝরে যায়। ঝরে পড়া ফুল দিয়ে মালা গেঁথেছিলাম, মালাখানি পরাবো কারে? এমন একটি প্রশ্ন সেদিন এসেছিল মনে। সে বহু বছর আগের কথা, সে মালা ঝরে গেছে, তবে স্মৃতিটুকু হৃদয়ে রয়ে গেছে আজও।

শনিবার, রাত দশটা বাজে, টিভিতে দেখাচ্ছে একটি ছবিতে মালা বদলের কিছু দৃশ্য। মূলত এটাই ছিল কারণ, অতীত এসে কিছুক্ষণের জন্য মনে দোলা দিয়ে গেলো। মারিয়া, আমার স্ত্রী, জিঙ্গেস করল চা খাবো কিনা! আমরা গত তিন বছর ধরে নিয়মিত রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মধু দিয়ে চা পান করি এবং বেশির ভাগ সময়ই নানা ধরনের ফুলের শুকানো পাপড়ি দিয়ে চা তৈরি হয়।

যখনই কোথাও বেড়াতে যায় চেষ্টা করি শুকনো ফুলের চা কিনতে, পেলে ছোটখাটো প্যাকেটে কিছু চা কিনে নিয়ে আসি যার মধ্যে চায়ের পাতাসহ শুকনো ফুলের পাপড়ি থাকে। ফুলের পাপড়ি দিয়ে চা সাথে সুইডিশ মধু রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করা আমাদের জন্য একটা রুটিনে পরিণত হয়েছে। চা পান করতে করতে অনেক কথার মধ্যে ফুল নিয়ে কথা শুরু হলো।

কারণ ওপরের ছবিটি দেখছেন না? ওটা আমাদের বাসায় ফুটেছে। ছোট্ট একটি গাছে এভাবে ফুল ফুটতে পারে এর আগে আমি দেখিনি। মারিয়া সব সময় বাড়িতে নানা ধরনের ফুলের টবে ফুল গাছ রোপন করে। পরে যথাসময়ে সে গাছ ফুল দেয়, তারপর সে চেষ্টা করে টেবিলে যেন সব সময় ফুলদানিতে ফুল থাকে।

আমার নামে যদি কোনো বদনাম আমার স্ত্রীর থেকে কেউ জানতে চায় বা আমার স্ত্রী আমার সম্পর্কে একটি বদনাম দেবে, সেটা হবে নিশ্চিত ‘সে তো কখনও ফুল কিনবে না, ফুল আমাকেই কিনতে হবে’। হাসিমুখে এ খবরটি সে বলবেই। যাই হোক বাসায় সব সময়ই কোনো না কোনো ফুল থাকে-

আমার হৃদয়ে যে ফুল ফুটে আছে
সে আমার আদরের সহধর্মিণী;
যে ফুল আমি ছিড়িনি, তুলিনি, ভুলিনি
সে ফুল ফুটেছে আমার ঘরে,
ভালোবেসে আকড়ে রেখেছি সে ফুল ধরে।

প্রেমিকা হয়ে সে ফুল এসেছিল হৃদয়ে,
মালা দিয়ে করেছিলাম বরণ তাকে।
সে মালা ঝরেনি, বাতাসে পড়েনি,
ফুটে আছে সে ফুল মনের মাঝে।

দেখি তারে আজও আমি সধা সাজে,
ত্রিশ বছর ধরে তারে রেখেছি ধরে,
থাকুক সে ফুল মোর হৃদয় ভরে।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]