মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা-শহীদ দিবস পালন

আহমাদুল কবির
আহমাদুল কবির আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০২:৪২ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনার মো. গোলাম সারওয়ারের তত্ত্বাবধায়নে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভাষা শহীদের স্মরণ করা হয়।

ভাষা শহীদদের সম্মানে এদিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। মালয়েশিয়া বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে নিয়ে হাইকমিশনার শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শহীদদের আত্মার মাগফেরাতে বিশেষ দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

আলোচনার শুরুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশেষ বার্তা পড়ে শোনানো হয়। এ সময়ে বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ মুভমেন্ট নামের একটি স্বল্প দৈর্ঘ্য প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। বাংলা ভাষার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাদের তিনি বিশেষভাবে স্মরণ করেন।

তিনি স্মরণ করেন ৩০ লাখ জীবন আত্মদান করা শহীদদের দুই লাখ মা-বোন যাদের ত্যাগ ও সাহসিকতার কারণে এ দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে। ভাষা আন্দোলন দেশের স্বাধীনতার পথ সুগম করে দিয়েছে। তিনি দেশের সবাইকে সত্য ইতিহাস জানতে আগ্রহী হতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার চেষ্টা করে যেতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ইউনাইটেড চাইনিজ স্কুল কমিটি ও অ্যাসোসিয়েশন অফ মালয়েশিয়া (ডং জং) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল কনফারেন্সে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার গুরুত্বের বিষয়ে জোর দেন। এতে করে সংস্কৃতিক বিচিত্র রক্ষা পায়। সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়। বহুভাষা প্রচার ও প্রসার হয়। তিনি আয়োজকদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মানুষের সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভাষা।

২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ‘ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি’ শিরোনামে এক ভার্চুয়াল কনফারেন্স আয়োজন করে। সেন্টার ফর জেনোসাইড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল অফ লিবারাল আর্টস, টেইলর ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া, মিনিস্ট্রি অব টুরিস্ট অ্যান্ড আর্টস অ্যান্ড কালচার মালয়েশিয়া সেখানে অংশ নেয়।

বিজ্ঞাপন

এই মাল্টি কালচারাল ইভেন্টে টেইলর ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়াসহ আর্জেন্টিনা, চায়না ইন্ডিয়া মালদ্বীপ শ্রীলঙ্কা ভিয়েতনাম উজবেকিস্তান তাজাকিস্তান নাইজেরিয়ার মালয়েশিয়ান হাইকমিশনাররা এই অনলাইন ইভেন্টে যোগ দেন। এই ইভেন্টটি শুরু হয় সাংবাদিক ও লেখক আব্দুল গাফফার চৌধুরী লেখা সেই বিখ্যাত গান ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’, মধ্য দিয়ে।

ভাষা শহীদদের স্মরণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা একটি স্বল্প দৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এ সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন ভিডিও বার্তায় জানান, ঐক্য এবং বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্ক পৃথিবীতে শান্তি সংহতি বজায় রাখে এবং দেশের উন্নতিতে কাজে আসে।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সকল মাতৃভাষা সংরক্ষণের দুয়ার উন্মোচন করেছে। ম্যানুয়াল বালাগুয়ের সিলাস মালয়েশিয়ান আর্জেন্টিনার হাইকমিশনার এক বার্তায় বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, তারা বাংলাদেশে তাদের হাইকমিশন খোলার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। তিনি এবারের কাতার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আর্জেন্টিনার ফুটবল সমর্থকদের বিষয়ে উল্লেখ করেন। খেলাধুলার একটা নিজস্ব ভাষা আছে যা সর্বজনীন ঐক্য তৈরি করে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ মালয়েশিয়ান হাইকমিশনার উল্লেখ করে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ২০২৩ সালের এই ইভেন্ট দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক ও ভাষার আদান-প্রদানে ভূমিকা রাখবে।

মালদ্বীপ মালয়েশিয়ান হাইকমিশনার আলি হুসাইন দিদি, ইউনেস্কো ডিরেক্টর শিগারু অয়াগি, স্কুল অফ আর্টস অ্যান্ড সাইন্স, টেইলর ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়াকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) এর পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের পরিচালনায় ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের প্রচারে ভাষার ভূমিকা’ বিষয়ক একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার প্যানেলিস্টরা ছিলেন বাংলাদেশের গবেষণা উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, মালয়েশিয়ার টেলরস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আনাস জুবেদী এবং থাইল্যান্ডের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুরিচাই উন গাও।

প্যানেল আলোচনার পরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ অংশগ্রহণ করে যা নাটক, বাদ্যযন্ত্র এবং নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে নিজ নিজ ঐতিহ্যের চিত্রায়নের মাধ্যমে বহুসংস্কৃতি এবং বহুভাষিকতার সৌন্দর্য তুলে ধরে। ইভেন্টটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রকৃত সারমর্মকে প্রতিফলিত করে বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং ভাষাকে একত্রিত করেছে।

বিজ্ঞাপন

এমআরএম/এএসএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com