কোরআনে বর্ণিত ‘জ্বলন্ত গাছ’

মিশরের পবিত্র ভূমি সিনাই উপদ্বীপের সেন্ট ক্যাথেরিন শহরে অবস্থিত তুর পাহাড়। ওই এলাকার বেদুইনদের কাছে এটি জাবালে মুসা (মুসার পর্বত) নামে পরিচিত। সেই তুর পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে গোলাকার আকৃতির একটি গাছ। যার নাম (বার্নিং বুশ) অর্থাৎ জ্বলন্ত গাছ। গাছটির কথা উল্লেখ রয়েছে পবিত্র কোরআন শরিফে এবং এই গাছের কাছেই আল্লাহ তাওয়ালার সঙ্গে হজরত মুসা (আঃ) কথা বলেছিলেন।
হজরত মুসা (আঃ) যেখানে কুঞ্জবনের মধ্যে আগুন লেগেছে বলে দেখেছিলেন সে স্থানটি তূর পাহাড়ের পাদদেশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ফুট ওপরে অবস্থিত। রোমান সাম্রাজ্যের প্রথম খ্রিস্টান বাদশাহ কনস্টানটাইন ৩৬৫ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে গাছটির পাশেই একটি গির্জা নির্মাণ করেন, কনস্টান্টাইনের নির্মিত গির্জাটি বর্তমানে গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের অধীনে রয়েছে।
হাজার বছরের পুরনো ঐতিহাসিক গাছটি এখনো বেঁচে আছে। কথিত আছে, এটাই সে গাছ যেই গাছ থেকেই আলো বিচ্ছুরিত হতে দেখেছিলেন হজরত মুসা (আঃ)। সারা বিশ্বের মুসলিম, খৃষ্টান ও ইহুদী ধর্মের লাখো মানুষ এ-গাছ দেখতে এখানে আসেন।
এ ঘটনা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের বেশ কয়েকটি সূরায় বিস্তারিত আলোচনা এসেছে। হজরত মুসা (আঃ) নিজের স্ত্রী ও সন্তান এবং সাথিদের পথিমধ্যে রেখে, সম্মুখে আলো দেখে আগুনের সন্ধানে চললেন। বেশ কিছু দূর যাওয়ার পরে তিনি যখন সেই বিচ্ছুরিত আলোকচ্ছটার মুখোমুখি হলেন, তখন সেই আলো থেকেই যেন আওয়াজ এলো- ‘হে মূসা! আমিই আল্লাহ- তোমার রব। তুমি এখন পবিত্র উপত্যকায় রয়েছো, সুতরাং জুতা খুলে এখানে এসো।’
উপত্যকায় ডান কিনারায় পবিত্র ভূখণ্ডে একটি বৃক্ষ থেকে আহ্বান এলো, ‘হে মূসা! আমিই আল্লাহ সমগ্র বিশ্বের অধিপতি।’ (সূরা আল কাসাস-৩০)। সেখানে পৌঁছানোর পর আওয়াজ এলো, ‘ধন্য সে সত্তা যে এ আগুনের মধ্যে এবং এর চারপাশে রয়েছে, পাক পবিত্র আল্লাহ সকল বিশ্ববাসীর প্রতিপালক। হে মুসা! আমিই আল্লাহ্ মহাপরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নাম্ল ৭-৮)।
আল্লাহ তাওয়ালা পবিত্র কোরআনে বিষয়টি এভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘সেখানে পৌঁছালে তাকে ডেকে বলা হলো, ‘হে মূসা! আমিই তোমার রব, জুতো খুলে ফেলো, তুমি পবিত্র তুওয়া উপত্যকায় আছো। আমিই আল্লাহ, তোমাকে বাছাই করে নিয়েছি, শোনো যা কিছু ওহি করা হয়। আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই, সুতরাং তুমি আমারই দাসত্ব করো এবং আমাকে স্মরণ করার জন্য নামাজ কায়েম করো।’ (সূরা ত্ব-হা ১১-১৪)।
এমআরএম/এমএস