বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে ২৮ দিন এবং কিছু কথা

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক মালয়েশিয়া
প্রকাশিত: ০৩:০৯ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

পাভেল সারওয়ার

গত নভেম্বরে আমার বাবা-মার চিকিৎসার জন্য দেশে গিয়েছিলাম। এই সফরের দুটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল: এক, বাবা-মায়ের চিকিৎসা করানো; আর দুই, শ্বশুরের দখল হয়ে যাওয়া বাড়ি পুনরুদ্ধার করা। পাশাপাশি কিছু স্বাভাবিক কাজও ছিল। প্রায় ২৮ দিন দেশে থাকার পরেও অনেকের সঙ্গে দেখা করতে না পারার জন্য সবার কাছে শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

এবার মূল আলোচনায় আসি, বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশ আমার কেমন লাগলো। যেহেতু ধর্ম এবং রাজনীতির প্রতি বরাবরই আমার গভীর আগ্রহ, তাই এই সফরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার এবং কিছু প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। এই অভিজ্ঞতায় যেমন হতাশা রয়েছে, তেমনি আশার আলোও দেখেছি।

দুঃখজনকভাবে, একটি বিশেষ শ্রেণি ক্ষমতায় আসার আগেই ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কারণ কিছু দল এবং ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বিপ্লব-পরবর্তী বেশ কিছুদিন সামাজিকমাধ্যমে দেশ পুনর্গঠনের নানান পরিকল্পনা দেখা গেলেও বাস্তবে তার কার্যকর পদক্ষেপ তেমন চোখে পড়েনি। শুরুতে ২-৩ জন বিশেষজ্ঞকে দেশের কাজে নিয়ে আসা হলেও এখন সবাই ব্যস্ত নিজেদের লোকজন সেটআপে।

বিএনপি প্রকাশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছে। বিশেষ করে ট্রেড বডি, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধান ইত্যাদি। কিছু ক্ষেত্রে দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানের ভূমিকা আমাকে আশাবাদী করলেও তাদের ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা কিছুটা হতাশ করেছে। জামায়াত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি ও প্রক্টর নিয়োগে এগিয়ে থাকলেও অন্যান্য সেক্টরে অনেকটাই পিছিয়ে।

সেদিক থেকে শিবির নানান গঠনমূলক উদ্যোগ এবং তরুণদের আকৃষ্ট করার মতো বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে চেষ্টা করছে। এবি পার্টি তাদের সামর্থ্যের পরিপ্রেক্ষিতে আইন অঙ্গনে ভালো অবস্থান গড়ে তুলেছে। গণঅধিকার পরিষদও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের লোক বসানোর চেষ্টা করেছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের নাম ভাঙিয়ে কিছু অছাত্র বিভিন্ন সেটেলমেন্টে জড়িয়ে যাচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আর পড়ুন:

রাষ্ট্র পরিচালনায় শুধু শ’খানেক গুরুত্বপূর্ণ পদের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু প্রশাসনের নিচের স্তরগুলোতে এখনো আগের লোকজন রয়ে গেছে। তারা বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের জন্য সক্রিয়। বিশেষ করে মাঠ প্রশাসন এবং পররাষ্ট্র খাতে এই সমস্যাটি আরও প্রকট।

বিএনপি-জামায়াত-ছাত্র জনতা দীর্ঘ ১৫ বছর রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকায় তাদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি স্পষ্ট। তারা সরকারি কাজের ইকোসিস্টেম সম্পর্কে বেশ অনভিজ্ঞ। তাদেরই একটি গ্রুপ অভিজ্ঞদের অভিজ্ঞতা গ্রহণে রাজি নয়, যা তাদের অতিরিক্ত ইগো সমস্যার প্রতিফলন। এ কারণে তারা সরকারি কাজে স্বৈরাচারী সরকারের সমর্থকদের ওপর নির্ভর করছে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়। ফলে স্বৈরাচারের পুনর্বাসন বেশি হচ্ছে, যা বিপ্লবের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বিজ্ঞাপন

দেশে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়েছে মিস লিডিং তথ্য বা গুজব। স্বৈরাচারের সমর্থকদের মোকাবিলায় রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও এই মিস ইনফরমেশন ছড়ানোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। যে কোনো মূল্যে এটাকে বন্ধ করতে হবে।

ছাত্র আন্দোলনে সবাই দেশের ভেতরে থাকা মানুষের অবদানকে স্মরণ করলেও ধীরে ধীরে প্রবাসীদের অবদান ভুলে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রদর্শনীতে প্রবাসীদের অবদান তেমনভাবে প্রদর্শিত হতে দেখা যায়নি।

দেশ গঠনে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। বর্তমান সরকারের অধিকাংশ ব্যক্তি নিঃসন্দেহে সৎ এবং ভালো মানুষ। তবে রাজনীতির জটিলতা মোকাবিলায় তাদের আরও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

এই সংকটময় সময়ে আমাদের সবার উচিত তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা, যেন তারা দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

এবার বাংলাদেশ হেরে গেলে হেরে যাবো আমরা সবাই। তাই যেকোনো মূল্যে দেশ এবং দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নাগরিক সংস্কার নিশ্চিত করাও জরুরি।

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com