কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুহার শূন্যে নামাতে কাজ করছে মালয়েশিয়া

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, আঘাত এবং প্রাণহানি শূন্যে নামানোর লক্ষ্যে ‘জিরো ভিশন’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় (কেসুমা)। শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির মানব সম্পদমন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কিয়ং।
মন্ত্রী জানান, গত এক দশকে (২০১৪-২০২৪) বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে কর্মক্ষেত্রে আঘাতের হার ১৭ শতাংশ এবং মৃত্যুহার প্রায় ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রের দুর্ঘটনা শুধু আর্থিক ক্ষতিই আনে না, এতে প্রাণহানিও ঘটে, যা সবচেয়ে বেদনাদায়ক। আমি নিহত শ্রমিকদের পরিবারের খোঁজ নিয়েছি। এই মর্মান্তিক ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
বিশ্ব নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য দিবস ২০২৫ উপলক্ষে মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটিতে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত অধিদপ্তর (ডিওএসএইচ) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে প্রতি ১,০০০ কর্মীর মধ্যে ৩.১০ জন আহত হতেন এবং প্রতি ১ হাজার কর্মীর মধ্যে ৪.২১ জনের মৃত্যু ঘটত। ২০২৪ সালে এই হার যথাক্রমে ২.৫৮ এবং ২.৫৮-এ নেমে এসেছে।
মন্ত্রী আরও জানান, ডিওএসএইচ-এর মাধ্যমে ১৯৯৪ সালের শ্রম নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য আইনে শতাধিক সংশোধন আনা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ১০টি নির্দিষ্ট খাতের পরিবর্তে সব খাতে আইনটি প্রয়োগ, পাঁচ বা ততোধিক কর্মীর প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা এবং দুর্ঘটনার জন্য সর্বোচ্চ জরিমানা ৫০ হাজার রিংগিত থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ রিংগিত নির্ধারণ।
তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন সি১৫৫ অনুসমর্থনের মাধ্যমে শ্রমিকদের বিপজ্জনক কর্মপরিবেশ ত্যাগের অধিকারও নিশ্চিত করা হয়েছে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ডিওএসএইচ-এর মাধ্যমে নির্মাণস্থলে নজরদারি ও আইন প্রয়োগে এআইযুক্ত ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। ড্রোনগুলো উচ্চতায় কাজ করা কর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারে ত্রুটি শনাক্ত করে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে তথ্য পাঠাতে পারে।
২০২৪ সালে ৮০০টির বেশি ড্রোন ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে এবং ড্রোনের তথ্যের ভিত্তিতে ১১৯টি নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ডিওএসএইচের উদ্যোগে গত অক্টোবর থেকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) ও অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) প্রযুক্তি সুবিধাসম্পন্ন গবেষণাগারও চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে দুর্ঘটনার ফরেনসিক তদন্ত, প্রশিক্ষণ ও আইন প্রয়োগের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাস্তবধর্মী সিমুলেশন এবং কম খরচে নিরাপদ প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।
এমআরএম/জিকেএস