রিবকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জো ফস্টারের অনুপ্রেরণার গল্প

এস ইসলাম
এস ইসলাম এস ইসলাম , লন্ডন থেকে
প্রকাশিত: ১০:৫৩ এএম, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

মাত্র ১৭ বছর বয়সে পরিবারের জুতার কারখানায় সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন জো ফস্টার। সেই ছোট্ট পদক্ষেপই পরে তাকে পৌঁছে দেয় বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ স্পোর্টস ব্র্যান্ড রিবকের সহ-প্রতিষ্ঠাতার আসনে।

১৯৫২ সালে ইংল্যান্ডের গ্রেটার ম্যানচেস্টারের বল্টন শহরে জন্ম নেওয়া জো ফস্টার তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে যোগ দেন পরিবারের ব্যবসা জে.ডব্লিউ. ফস্টার অ্যান্ড সন্সে। এখানেই শুরু হয় তার অ্যাথলেটিকস ও রানিং জুতার প্রতি ভালোবাসা।

তার দাদা, জোসেফ উইলিয়াম ফস্টার, ১৮৯৫ সালে এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। দাদারই উদ্ভাবন ছিল জুতায় স্পাইক লাগানো— যা অ্যাথলেটদের দৌড়ে সহায়তা করত। এই উদ্ভাবন ব্যবহার করেই ১৯২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে অংশ নেন ব্রিটিশ তারকা এরিক লিডেল ও হ্যারল্ড এব্রাহামস। পরে তাদের সাফল্যের গল্প নিয়ে নির্মিত হয় বিখ্যাত চলচ্চিত্র চ্যারিয়ট অব ফায়ার।

তবে পরিবারের পুরোনো প্রতিষ্ঠান একটা সময় থমকে যায়। তখন জো ও তার ভাই জেফ ফস্টার নতুনভাবে শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৫৮ সালে তারা Mercury নামে নতুন জুতা ব্র্যান্ড চালু করেন, কিন্তু নামটি আগে থেকেই ট্রেডমার্ক হওয়ায় দ্রুত নতুন নামের প্রয়োজন হয়।

জো স্মরণ করেন, ‌‘আমার কাছে এক পুরোনো অভিধান ছিল— ছোটোবেলায় দৌড়ে জিতে পেয়েছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ল ‘Rhebok’ শব্দটা, মানে দক্ষিণ আফ্রিকার এক প্রজাতির হরিণ। ভাবলাম, দৌড়ের জুতার জন্য নামটা একদম মানানসই।’

এভাবেই জন্ম নেয় Reebok নামটি। তাদের জন্য টার্নিং পয়েন্ট আসে যুক্তরাষ্ট্রে, যখন Runner’s World ম্যাগাজিনে রিবকের তিনটি জুতা পায় সর্বোচ্চ পাঁচ-তারকা রেটিং।

জো বলেন, ‘দশ বছর ধরে আমরা চেষ্টা করছিলাম, একাদশ বছরে অবশেষে আমেরিকা আমাদের চিনল।’
রিবকের উত্থান আরও জোরদার হয়, যখন ১৯৮০-এর দশকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী জেন ফন্ডা তার ফিটনেস ভিডিওতে রিবকের জুতা ব্যবহার করতে শুরু করেন।

‘তিনি নিজে কিনেছিলেন জুতাগুলো। সেখান থেকেই রিবক দ্রুতই হয়ে ওঠে নারীদের অ্যারোবিক্স ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড,’ বলেন জো ফস্টার।

চার বছরের মধ্যে ৯ মিলিয়ন ডলারের ছোট ব্যবসা পরিণত হয় ৯০০ মিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক ব্র্যান্ডে।
‘মেয়েরা অফিসেও রিবক পরে যেত, হিল ব্যাগে রেখে। তখন রিবক কেবল স্পোর্টস নয়, জীবনযাপনের অংশে পরিণত হয়,’ যোগ করেন তিনি।

বর্তমানে রিবক মার্কিন প্রতিষ্ঠান Authentic Brands Group-এর মালিকানায়। তবুও জো ফস্টারের আশা— একদিন ব্র্যান্ডটি ফিরে আসবে বল্টনের মাটিতে।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, রিবক আবার বল্টনে ফিরবে। সবাই বলছে, কেন ফিরিয়ে আনছ না? আমরা বার্তা পাঠিয়েছি— দেখা যাক, কোথায় পৌঁছায়।

বল্টন লাইব্রেরিতে এখন চলছে রিবকের ইতিহাস নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী, যা চলবে আগামী ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। এতে স্থান পেয়েছে আরেক বল্টনীয় জুতা নির্মাতা নরম্যান ওয়ালশ-এর গল্পও— যিনি ১৯৪৮ সালের লন্ডন অলিম্পিকে ব্রিটিশ দলের জন্য জুতা ডিজাইন করেছিলেন।

এমআরএম/জিকেএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]