সাইপ্রাসে ভালো নেই বাংলাদেশিরা
মাহাফুজুল হক চৌধুরী, সাইপ্রাস থেকে
করোনাভাইরাসের প্রভাবে ভেঙে পড়েছে বিশ্বের অর্থনীতি। ইউরোপের দেশ সাইপ্রাসেও একই অবস্থা। হঠাৎ করে অজানা এক ভাইরাস পুরো দেশটির চেহারা বদলে দিয়েছে। সাইপ্রাসে প্রায় ৬-৭ হাজারের মতো বাংলাদেশি রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় হাজারখানেক শিক্ষার্থী হবে। বাকিরা অনেকেই স্টুডেন্ট ভিসায় আসলেও এখন আর শিক্ষার্থী হিসেবে নেই।
জান গেছে, গত ৩-৪ বছর ধরে যারা এসেছে বা আসছে অধিকাংশই নর্থ সাইপ্রাস দিয়ে। দেশটিতে তারা শরণার্থী হিসেবে রয়েছে। যারা আগে স্টুডেন্ট ভিসায় এসেছে তারা প্রত্যেকেই ভালো অবস্থানে রয়েছে। অধিকাংশই এক থেকে দুই হাজার ইউরো মাসে আয় করে। আবার অনেকেই আছে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তবে সাইপ্রাসে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সংখ্যা হাতেগোনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী বলেন, এ ছাড়া যারা শরণার্থী হিসেবে আছে পুরাতন তারাও বেশ ভালো আছে। কিন্তু যারা বিগত দু’একবছর আগে দেশটিতে এসেছে তারা মোটেও ভালো নেই। স্টুডেন্ট, শরণার্থী, সবারই একই অবস্থা। কেউ কেউ পার্মানেন্ট চাকরি পেলেও অনেকের ভাগ্যে জোটেনি চাকরি নামক সোনার হরিণ।
অনেকে মাসে কখনও ৫ দিন, কখন বা ১০ দিন কাজ করে কোনোরকম চলতে পারে। আবার কখনো পুরো মাস মিলে একদিনও কাজ মেলে না৷ সামনে হয়তো সুদিন আসবে সে আশায় দিন কাটে তাদের। সাইপ্রাসে কাজ পেতে সময় লাগলেও যখনই কাজ পেয়ে যায় তখন আর পিছু ফিরে তাকাতে হয় না। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশটিতে খরচের তুলনায় আয় অনেক বেশি। কিন্তু হঠাৎ করে করোনাভাইরাস এসে সবকিছু বদলে দিয়েছে।
এমনটা কেউ ধারণাও করেনি। সাইপ্রাসে কষ্টের সময়গুলি কাটিয়ে ভাগ্য বদলাতে সুদিনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে এখন উল্টোপথে হেঁটেছে।
প্রবাসীরা বলছেন, এখানে যারা আগে ভালো অবস্থানে ছিল তাদেরই কাজ নেই। বিশেষ করে সাইপ্রাসে বেশিরভাগই রেস্টুরেন্টের কাজ করে। বিগত আড়াইমাস ধরে রেস্টুরেন্টগুলি সব বন্ধ থাকায় সবাই বেকার হয়ে গেছে।
আগামী মাসে রেস্টুরেন্টগুলি খোলার কথা থাকলেও আগের মতো আর ব্যবসা হবে না। ফলে রেস্টুরেন্টগুলি খুললেও যারা চাকরি হারিয়েছে তারা আর সহজে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যারা ডেলিভারি কাজ করত তাদের অবস্থাও ভালো না। অসংখ্য বাংলাদেশি কাজ হারিয়েছে। আর যারা বিভিন্ন গার্ডেন, এগ্রিকালচার এবং অন্যান্য পেশায় জড়িত তারাও বেকার হয়ে গেছে।
বিশেষ করে সাইপ্রাসে স্টুডেন্টরা সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে। আর কয়দিন পর নতুন করে ভিসা লাগাতে হবে। তারা এখনো আগের বকেয়া টিউশন ফি পরিশোধ করতে পারেনি, সেখানে নতুন করে টিউশন ফি দিয়ে আবার ভিসা লাগাবে এটা ভাবাও যায় না। কলেজগুলি থেকেও কোনো প্রকারের সাহায্যর হাত বাড়ায়নি। ফলে অনেকেই আর নতুন করে ভিসা লাগাতে পারবে না।
শিক্ষার্থীর সামনে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটিতে পড়বে তা হলো করোনাভাইরাসের কারণে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতে আইন-কানুন শিথিল করলেও তার উল্টো পথে হেঁটেছে সাইপ্রাস। সাইপ্রাসে কোনো সুযোগ-সুবিধা তো দেয়নি বরং ধরে ধরে মামলা দিয়েছে। কাজে গেলে ইমিগ্রেশন থেকে চেক চালাচ্ছে। সাইপ্রাসে আগে কখনো কর্মস্থলে গিয়ে এইভাবে চেক করেনি।
সম্প্রতি দেশটিতে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ফলে কাজ থাকলেও অনেকেই পুলিশের ভয়ে মালিক কাজ থেকে বিদায় করে দিয়েছে। তারা আদৌ আর কাজ পাবে কিনা অনিশ্চয়তায় রয়েছে। সাইপ্রাসের করোনাভাইরাস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও দেশের অর্থনীতিতে যে ধস নেমেছে তা আর সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবে না।
এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হবে। থেমে গেছে আয়ের সকল উৎস, আগের মতো আর সাইপ্রাস থেকে রেমিট্যান্স যাবে না বাংলাদেশে। আগামী দু’এক বছরের ভেতর যারা সাইপ্রাস আসবে তাদেরকেও পড়তে হবে এ সমস্যায়। বর্তমান এ পরিস্থিতিতে সাইপ্রাস আসাটা কোনোভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
এমআরএম/এমকেএইচ