অন্যকে হেদায়েতের দায়িত্ব না নিয়ে নিজে হেদায়েত হন

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহিদ মিনার গড়ে উঠেছে এবং সেখানে ফুলের মালা দিয়ে, কোরআন থেকে তেলাওয়াত করে দেশের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদেরকে স্মরণ করি। এটা যে শুধু বাংলাদেশে করা হয় তা নয়, বিশ্বের সর্বত্রই এমনটি হয়ে থাকে।
তাছাড়া প্রতিটি স্বাধীন দেশে রয়েছে জাতীয় সংগীত। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, ন্যাচার, কালচার ইত্যাদির ওপর বিচার বিশ্লেষণ করেই জাতীয় সংগীত নির্ধারণ করা হয়। পাকিস্তান আমলে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের জাতীয় সংগীত ছিল।
পাকিস্তান জিন্দাবাদ...
পূর্ব বাংলার শ্যামলীমায়
পঞ্চনদীর তীরে অরুণিমায়
ধূসর সিন্ধু মরু সাহারায়
ঝান্ডা জাগে যে আজাদ...
খাইবার দ্বারে দ্বারে পতাকাবাহী
মেঘনার কূলে যত বীর সিপাহী
প্রাচ্য প্রতীচ্যের মিলন গাহি
ঝান্ডা জাগে যে আজাদ...
পাকিস্তান জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ।
এটি ছিল বিকল্প জাতীয় সংগীত যা ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের অস্তিত্ব থাকাকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গাওয়া হত। গানটি বাংলা ভাষায় লিখিত হয় গোলাম মোস্তফা কর্তৃক ১৯৫৬ সালে। পাকিস্তান নামক একটি কবিতা থেকে এটি গৃহীত হয়েছিল। গানটির সুর করেন নাজির আহমেদ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যাহত পূর্বে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ গঠিত হয় স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ। পরে ৩ মার্চ তারিখে ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভা শেষে ঘোষিত স্বাধীনতার ইশতেহারে- ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গীত হয়।
আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে—
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥’
সন্দেহাতীতভাবেই বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশ্য ছিল দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়ন ঘটানো। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু একটা সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন, যে সোনার বাংলার উপমা তিনি পেয়েছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে। ভালোবেসে বঙ্গবন্ধু সেই সোনার বাংলার স্বপ্নকে তার দেশের জাতীয় সংগীত নির্বাচন করেছিলেন।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে এই গান প্রথম জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়। বঙ্গমাতা সম্পর্কে এই গাঁথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক ১৯০৫ সালে রচিত। বাউল গায়ক গগন হরকরার গান ‘আমি কোথায় পাব তারে’ থেকে এই গানের সুর ও সংগীত উদ্ভূত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা সম্পূর্ণ আমার সোনার বাংলা গানটির প্রথম দশ লাইন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃত। ইদানীং ফেসবুকের মাধ্যমে দেখছি মাদরাসা শিক্ষা প্রশিক্ষণে সমস্ত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী মিলিত হয়ে রবীন্দ্রনাথের সুরকে নকল করে মুসলমানের জাতীয় সংগীত চর্চা চলছে!
ইসলাম ধর্মের কোনো কিতাবে কে লিখেছে এটা? এবং এরা কোন দেশের মুসলমান? কোথায় পৌঁছে গেছে এরা! এখনই লাগাম টেনে না ধরলে দেশটা বর্বর যুগে ঠেলে নিয়ে যাবে এরা। হিন্দি সিনেমার গানের সুরে এরা ইসলামী গজল গায়। এখন আবার জাতীয় সংগীতের চর্চা চলছে:-
‘দয়ার আল্লাহ
আমি তোমায় ভালোবাসি
চিরদিন তোমার দয়ায়
তোমার মায়ায়
অধম আমি বেঁচে আছি...।’
দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব প্রশাসনের, সঙ্গে আমাদের সবার। মাতৃভূমিকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করা এবং সরকার যদি সেটা জেনে না জানার ভান করে তবে নতুন করে দুর্গ গড়তে হবে। পাকিস্তানের সময় যে গানটি জাতীয় সংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে সেই গান আর রবীন্দ্রনাথের গানে শুধু পার্থক্য এটাই, রবীন্দ্রনাথ অমুসলিম।
এটাই যদি সমস্যা হয় তবে প্রযুক্তির সমস্ত ডিভাইস (টেলিফোন, টেলিভিশন, ক্যামেরা, কম্পিউটার ইত্যাদি) থেকে শুরু করে সমস্ত পণ্যদ্রব্য, ওষুধ তৈরিতে যেখানে মুসলমানদের কোনো সক্রিয় অংশগ্রহণ নেই সেগুলোও বয়কট করতে হবে। শুধু সুবিধাবাদি মুসলিম হলে চলবে না।
ভাস্কর্য এবং মূর্তি দুটো ভিন্ন জিনিসকে মিশ্রিত করে সমাজকে দূষিত করা হচ্ছে। পবিত্র কোরআনে শত শতবার বলা হয়েছে নামাজ কায়েম কর, হজ কর, জাকাত দাও, মিথ্যা কথা বলো না, দুর্নীতি করো না, ধর্ষণ করো না। এগুলোর উপর সঠিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না, অথচ ভাস্কর্যের ওপর এত গুরুত্ব কেন? গুরুত্ব যদি দিতেই হয় তবে কোরআন বা হাদিস কর্তৃক সঠিক তথ্য জানতে হবে।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমি সেই ধর্মে বিশ্বাসী। আমার বাপ-দাদাসহ তাদের চৌদ্দপুরুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। সেই ধর্মকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমারও রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনো রকম ভুলভ্রান্তিকে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হয়ে মেনে নেয়া অন্যায়।
সবাইকে অনুরোধ করবো দয়া করে ক্ষান্ত হন। নিজ নিজ চরকায় তেল দিন, পরের পিছে না লেগে। আমরা সবাই এখন সব ধর্ম সম্পর্কে কম বেশি সচেতন। আমাদের ভালো-মন্দের দায়ভার আমাদের নিজেদের। যে কারণে আল্লাহপাক কোরআনে জানিয়েছেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)- এর পরে আর কোনো নবী বা রাসুলের আগমন হবে না। কারণ তিনি শেষ নবী এবং রাসুল এবং আমরা আমাদের ভালো-মন্দের জন্য দায়ী।
দয়া করে অন্যকে হেদায়েতের দায়িত্ব না নিয়ে নিজে হেদায়েত হন এবং অন্যকে নষ্ট এবং ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকুন। আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন পরম করুণাময় এবং অত্যন্ত দয়ালু, তিনি আমাদের হেফাজত করবেন। কারণ তিনি রহমানের রাহিম।
এমআরএম/এমকেএইচ