মালয়েশিয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায়

আহমাদুল কবির
আহমাদুল কবির আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ এএম, ১৩ মে ২০২১
মালয়েশিয়ার জাতীয় মসজিদের (মসজিদ নেগারা) বাইরে নামাজে অংশগ্রহণের দৃশ্য

করোনায় লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণ করে ঈদের নামাজের অনুমতি দিয়েছে মালয়েশিয়ার সরকার। মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও নিরাপদ থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন দেশটির ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

এছাড়া সরকারের জারি করা বিধিনিষেধে বিদেশিদের মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় বাইরে নামাজ আদায় করেছেন প্রবাসীরা। অনেকেই ঘরে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। আবার কেউ কেউ সূরাও গুলিতে নামাজ আদায় করেছেন।

সূরাও বায়তুল মোকাররমের খতিব হাফেজ মাও. মো. ইকরামুল হক জানিয়েছেন, সরকারের বিধিনিষেধ মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরপর দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৫০ জনের অধিক অংশগ্রহণ করতে পারেননি।

jagonews24

এদিকে দেশটিতে প্রায় আট লাখের বেশি বাংলাদেশি মহামারির বিপর্যয়ের মাঝে নিষ্প্রাণ ঈদ পালন করছেন। বিশেষ কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই সাদামাটা ঈদ পালন করছেন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা।

করোনা মহামারির সংকট ও পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই অর্থনৈতিক দুর্দশার শিকার হয়েছেন। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

প্রবাসী বাংলাদেশিরা চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। চাকরি হারিয়েছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি। অনিশ্চিত সময়ে বছর ঘুরে আসা চিরচেনা ঈদের আবহে তারা ছন্দ মেলাতে পারছেন না।

অন্যান্য বছর মালয়েশিয়ায় ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হতো বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে। কিন্তু করোনার কারণে সরকারি নিষেধাজ্ঞায় গত বছরের মতো এবারও তা সম্ভব হয়নি। কয়েক হাজার বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত উঠেছে। করোনার ধাক্কায় ছন্দ মেলাতে না পেরে তারা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন।

এবারও করোনার কারণে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে মালয়েশিয়া থেকে গত বছর ছুটিতে দেশে যাওয়া প্রবাসীদের। তারা নিজ কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন কি না তাও অনিশ্চিত। অনেকে প্রবাসে কর্মহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন আর দিন অপেক্ষা করছেন সুদিনের প্রত্যাশায়।

jagonews24

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তানশ্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন বলেছেন, বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১২ মে থেকে আগামী মাসের ৭ জুন পর্যন্ত চলবে এমসিও। লকডাউনের মধ্যে অর্থনীতি সচল রাখতে অর্থনৈতিক ও উৎপাদন খাতগুলো যথারীতি খোলা থাকছে। আন্তঃজেলায় যাতায়াত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট ও সভা সমাবেশ বন্ধ থাকবে। শর্তসাপেক্ষে বিয়ের অনুষ্ঠান, ঈদের নামাজ, মসজিদ ও উপাসনালয়গুলো বেঁধে দেয়া সীমিত সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে পরিচালিত হতে পারে। অফিস ও প্রাইভেট সেক্টরে ৩০ শতাংশ স্টাফ কাজ করতে পারবে, বাকিরা বাসায় থেকে অফিসের কাজ করবে।

এদিকে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ও মালয়েশিয়ান নাগরিকসহ সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি দেশে অবস্থিত প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদেরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

হাইকমিশনার মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, এই মহা দুর্যোগের সময়ে যে কঠোর জীবনযাপন পদ্ধতি চলছে, এর মধ্যেও ধর্মপ্রাণ প্রবাসী ভাই ও বোনেরা এক মাস রমজানের রোজা রেখেছেন এবং এক মাস সিয়াম সাধনার পরে এসেছে ঈদুল ফিতর। এই ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে মালয়েশিয়া সরকার যে নিয়মকানুন দিয়েছে। প্রবাসী ভাইয়েরা সেই নিয়মকানুন পালন করে ঈদ উদযাপন করবেন। তিনি সকলের এবং প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের মঙ্গল কামনা করেছেন।

হাইকমিশনার বলেন, এখন এক কঠোর ও অস্বাভাবিক সময় অতিক্রম করছে গোটা বিশ্ব, এ খারাপ সময় থাকবে না, আমাদের সুদিন আসবেই।

এমএইচআর/এমকেএইচ

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]