প্রাচীন নাট্য ঐতিহ্য সমৃদ্ধ দেশ সার্বিয়া

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৩২ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

সার্বিয়া একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র যা মধ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের মধ্যে অবস্থিত। এটি প্যাননোনীয় সমভূমির দক্ষিণ প্রান্ত এবং কেন্দ্রীয় বলকান অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত। এটি কসোভোর বিতর্কিত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, হাঙ্গেরি, উত্তর ম্যাসেডোনিয়া, মন্টিনিগ্রো, রোমানিয়া এবং আলবেনিয়ার সাথে সীমানা ভাগ করে।

সার্বিয়ার আয়তন ৮৮ হাজার ৩৬১ বর্গকিলোমিটার। দেশটির জনসংখ্যা ৮৭ লাখ ৬২ হাজারের বেশি। সার্বিয়ার অফিসিয়াল ভাষা সার্বিয়ান। দেশটির ৮০ শতাংশের অধিক মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। এছাড়া সার্বিয়ার প্রায় ১৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হাঙ্গারিয়ান, বসনিয়ান, ক্রোয়েশিয়ান, আলবেনিয়ান, রোমানিয়ান, বুলজেরিয়ান এবং রাশিয়ান ভাষায় কথা বলে।

নবম শতকে ভাস্তিমিরভিচ রাজবংশ সার্বিয়ার প্রথম রাজ্য ‘রাস্কা‘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপরে এটি নিমানজিচ রাজবংশের অধীনে সার্বীয় রাজতন্ত্র ও সাম্রাজ্যে প্রসারিত হয়। আধুনিক যুগে বিভিন্ন সময়ে সার্বিয়া বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল।
jagonews24
ইউরোপের সার্বিয়ার পরিচিতি এক খলনায়ক হিসেবে। পার ক্যাপিটা হিসাবে সার্বিয়ার জিডিপির পরিমাণ ৫ হাজার ৯০০ ইউএস ডলার, যা গোটা ইউরোপের মধ্যে সপ্তম সর্বনিম্ন। অথচ যুগোস্লাভিয়া যুগে সার্বিয়া ছিল ইউরোপের সবচেয়ে প্রগতিশীল অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একটি। দেশটির রাজধানী বেলগ্রেডকে একসময় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বর্তমান প্রশাসনিক রাজধানী ব্রাসেলসের সঙ্গে তুলনা করা হতো।

সে সময় বেলগ্রেডকে ইউরোপের সেরা শহরগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সার্বিয়াতে দুর্নীতি ও অপরাধপ্রবণতার মাত্রা অনেক বেশি। এছাড়া ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি দেশটির অর্থনীতিতে ঋণাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। এক জরিপ অনুযায়ী দেশটির শতকরা ২০ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন।

সংবিধান অনুযায়ী সার্বিয়া একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, যেখানে বসবাসকারীরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ধর্ম পালন করতে পারে। তবে দেশটির ৮৪ শতাংশ মানুষ ‍খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী। এছাড়া রোমান ক্যাথলিকদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৬ শতাংশ এবং মুসলিম ৩ শতাংশ। অন্যান্য ধর্মালম্বী রয়েছে আরও ৭ শতাংশ।

বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য সার্বিয়ার ভূমি খুবই সমৃদ্ধ। দেশটির প্রায় ৫০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর আবাদ ভূমি রয়েছে। বিশ্ব বাজারে হিমায়িত ফল রপ্তানির জন্য সার্বিয়া বিখ্যাত। এই দেশটি থেকেই বিশ্ব বাজারের এক-পঞ্চমাংশ ফল রপ্তানি করা হয়। সার্বিয়ার জিডিপির একটি বড় অংশ কৃষিজাত পণ্য থেকে আসে।

অর্থনৈতিকভাবে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ সার্বিয়া। সার্বিয়াতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ যথা কয়লা, গ্যাস ও তেল মজুদ রয়েছে। কয়লা মজুদের দিক থেকে সার্বিয়া বিশ্বের পঞ্চম স্থানে রয়েছে। দেশটির মজুদ কয়লার পরিমাণ ৫.৫ বিলিয়ন। তবে এক দশক আগে বৈশ্বিক অর্থনীতি সংকটের কারণে দেশটির জিডিপি হার কমে যায়।

দেশটি অবস্থিত পাহাড়, নদী এবং বিখ্যাত মিউজিক ফ্যাস্টিবলের জন্যেও পর্যটকরা এখানে ঘুরতে আসেন। সার্বিয়ার শিক্ষার হার ৯৮ শতাংশ। এর মধ্যে উচ্চ শিক্ষার হার ১৬.২ শতাংশ। সার্বিয়ানরা সামাজিক জীবনে খাদ্যকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন ফেস্টিবলে তারা খাদ্যকে গুরুত্ব দেয়। তবে তাদের সাধারণ খাদ্যভ্যাসের তালিকায় রয়েছে রুটি, মাংস, ফল, সবজি এবং বিভিন্ন দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য।

সার্বিয়ায় প্রাচীন নাট্য ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একটি দেশ। এখানে ৩৮টি থিয়েটার রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় নাট্যশালা বেলগ্রেডে অবস্থিত। তাছাড়া সার্বিয়ান সিনেমা সবচেয়ে ছোট ইউরোপীয় চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। যদিও দেশটির সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি চলে সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে, তবে এর দর্শক সংখ্যা একদম কম নয়।

সার্বিয়ার সব থেকে জনপ্রিয় খেলা হল ফুটবল। দেশটির ১ লাখ ৪৬ হাজারের অধিক মানুষ সার্বিয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে রেজিস্ট্রার ফুটবল প্লেয়ার। এছাড়াও জনপ্রিয় খেলার মধ্যে রয়েছে বাস্কেটবল, টেনিস, ভলিবল, ওয়াটার পোলো এবং হ্যান্ডবল। তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া

এমআরএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]