বিশ্বের বন্ধুদের ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত ব্রাসেলস

ফারুক আহাম্মেদ মোল্লা
ফারুক আহাম্মেদ মোল্লা ফারুক আহাম্মেদ মোল্লা বেলজিয়াম
প্রকাশিত: ১০:৫৬ এএম, ০৬ মে ২০২৩

বেলজিয়ামে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। শুক্রবার রাজধানী ব্রাসেলসে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহ।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি কানিজ ফাতেমা। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, এমপি, বেলজিয়ামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দ্বিপাক্ষিক বিষয়াবলী) রাষ্ট্রদূত জেরোএন কুরম্যান, ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিকে মোরা ও নাহিম রাজ্জাক এমপি।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, তার বক্তব্যে সবাইকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, গত বছর বাংলাদেশ ও বেলজিয়াম এবং চলতি বছর বাংলাদেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি আজকের অনুষ্ঠানকে ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ৫ দশকের সম্পর্কের অগ্রযাত্রায় অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বর্তমানে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ-নির্ভর সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ স্কিম বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে উল্লেখ করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে ধন্যবাদ জানান।

Belgiam2

বেলজিয়াম ও বাংলাদেশের অগ্রসরমান সম্পর্ক ‘দ্বিপাক্ষিক কন্সালটেশনস’-এর মাধ্যমে আরো সংহত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিকে মোরা বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি অর্জনের মাধ্যমে বর্তমানে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ ও আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ অত্যন্ত উদারতার সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় ধন্যবাদ জানিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রদূত জেরোএন কুরম্যান মুক্তিযুদ্ধের অব্যাবহৃত পরেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতির বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, বেলজিয়াম ও বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের প্রেক্ষিতে ০৪ মে প্রথমবারের মতো দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ‘দ্বিপাক্ষিক কন্সালটেশনস’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে বাংলাদেশ ও বেলজিয়াম ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি রাষ্ট্র, সরকার ও বন্ধুদের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, বাংলাদেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যকার পরিণত ও ক্রমবর্ধামন অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছে সেই ঐতিহাসিক সময়ে রাষ্ট্রদূত এবং মিশন প্রধান হিসেবে বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করা তার জন্য বিরল সম্মান ও গৌরবের বলে তিনি উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহ মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীরতম শ্রদ্ধা নিবেদন করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’ উচ্চারণের অনুরোধ জানান।

Belgiam2

এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দুই শতাধিক অতিথিসহ উপস্থিত তিন শতাধিক অতিথিদের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণে তিনবার ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয় ব্রাসেলসের ঐতিহ্যবাহী সের্কেল রয়্যাল গেলুয়া সেন্টারটি।

এরপর মো. শাহরিয়ার আলম, জেরোএন কুরম্যান, এনরিকে মোরা, নাহিম রাজ্জাক এবং মাহবুব হাসান সালেহ কেক কেটে অতিথিদের সঙ্গে বাংলাদেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেন।

এছাড়া, ৩৭ বছর যাবত বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত বেলজিয়ামের নাগরিক ও দূতাবাসের প্রবীণতম সদস্য মিজ সুজান পটিয়েখের হাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি বিশেষ সম্মাননা তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে বেলজিয়াম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা, কূটনীতিক, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য, বেলজিয়ামের রাজনীতিক, গণমাধ্যম, থিংক ট্যাঙ্কস, একাডেমিয়া, ব্রাসেলসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউটির ব্যক্তিরা অতিথি হিসেবে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কাচ্চি বিরিয়ানীসহ দেশীয় খাবার ও মিষ্টি পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]