যে কারাগারে বন্দি ছিলেন ইউসুফ নবী

সাঈয়েদীনা মূসা, ইসা, সোয়াইব ও ইউসুফ (আঃ) সহ অসংখ্য নবী রাসূলের স্মৃতি বিজড়িত পূণ্যভূমি মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে ৩০ কিঃ মিঃ দক্ষিণে বদরসিন এলাকায় ফারাও রাজা আখনাতুনের রাজ প্রাসাদ, কা’সর আজিজ মা’সর নামের এই প্রাসাদেই বড় হয়েছিলেন ইবনে কারিম, ইবনে করিম সাঈয়েদীনা ইউসুফ (আঃ) ও সাইদা জুলেখা এবং এখানেই ওহি নাজিল হয়েছিল হজরত ইউসুফ (আঃ) এর ওপর। সেই সময় একমাত্র মুসলিম ফেরাউন চতুর্থ আমিন খুতেন তথা আখনাতুনের প্রাসাদ ছিল এটি।
আল কুরআনে বর্ণিত মোটা তাজা গরু ও শুকনা গমের ঐতিহাসিক স্বপ্নও তিনি দেখেছিলেন এই রাজ প্রাসাদে। হজরত ইউসুফ (আঃ) তৎকালীন মিশরে দুর্ভিক্ষ চলাকালে তৈরি করেছিলেন খাদ্য গুদাম। যেগুলো খাজিনা-ই- ইউসুফ নামে পরিচিত। সেই খাদ্য গুদামগুলোও এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখানে।
আজ আপনাদের দেখাবো সেই বদরসেন কারাগার বা সিজিনে ইউসুফে, যে কারাগারের প্রকোষ্ঠে হজরত ইউসুফ (আঃ) বন্দি ছিলেন ৭ বছরেরও বেশি সময়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৫ মিটার গভীরে অবস্থিত সিজিনে ইউসুফ এ হজরত জিবরাঈল (আঃ) ওহি নিয়ে এসেছিলেন সাঈয়েদীনা ইউসুফ (আঃ) এর কাছে। এই কারাগারটিকেই বলা হয় মুসতাজাবুল দাওয়া বা দোয়া কবুলের স্থান।
হযরত ইউসুফ (আঃ) যেমন ছিলেন মহান নবীদের সন্তান, তেমনি ছিলেন উন্নত চরিত্র, সুদর্শন ও পবিত্র জীবনের অধিকারী এক মহান নবী। বৈমাত্রেয় ভাইদের চক্রান্তে মিশরের সিতাদেল (বর্তমান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী দুর্গ) এর একটি কূপে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর একদল ব্যবসায়ী কাফেলার মাধ্যমে কূপ থেকে উদ্ধার পান ও তার ভাইয়েরা কাফেলার কাছে গোলাম হিসেবে ১৮ দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন।
কাফেলা ইউসুফ (আঃ) কে মিশরের উজিরের নিকট বিক্রয় করে দেয় এবং সেই উজিরের কাছেই তিনি লালিত পালিত হন।
যখন ইউসুফ (আঃ) যৌবনে পদার্পণ করেন, উজিরের স্ত্রী জুলেখা একদিন তার ঘরের সাতটি দরজা বন্ধ করে কূপ্রস্তাব দেন। হজরত ইউসুফ (আঃ) জুলেখার কূপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দৌড় দিলে এক এক করে সাতটি বন্ধ দরজা খুলে যায়। সর্বশেষ দরজা খোলার পূর্বে জুলেখা ইউসুফ (আঃ)-এর পেছন থেকে তার জামা টেনে ধরলে সেই জামা ছিঁড়ে যায়। দরজা খুলেই জুলেখার স্বামীকে দণ্ডায়মান দেখতে পায়। তখন জুলেখা হজরত ইউসুফ (আঃ) সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দেয়। পরবর্তীতে উজির ইউসুফ (আঃ) কে জেলে দেন।
ইউসুফ (আঃ) কে যে জেলখানায় রাখা হয়েছিল, তার নাম ‘সিজনুল বদরসেন’। ফেরাউনের এই জেলখানা ভূমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল। বিচারের পূর্বে আসামিদের বা সামান্য অপরাধীদের এখানে এনে রাখা হতো। এই জেলখানা পৃথিবীর সুন্দরতম মানুষের সুন্দর ঘটনার সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে মিশরে বদরসেন এলাকায়।
এমআরএম/জিকেএস