অমুসলিমদের গুণের প্রশংসা করা যাবে কি?

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫৪ এএম, ০২ জানুয়ারি ২০২১

মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক ও সতর্ককারী কিতাব হিসেবে কুরআনুল কারিম নাজিল করা হয়েছে। এ কুরআনে অমুসলিমদের গুণের কথা যেমন এসেছে তেমনি তাদের মারাত্মক মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো- তবে কি অমুসলিমদের গুণের প্রশংসা করা যাবে?

ইসলাম ও মুসলমানদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ ও সঠিক পথের বিরোধিতা করা এবং কুরআনের নসিহতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করাই হলো ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের মিশন। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে আয়াত নাজিল করে মুমিন-মুসলমানকে ইয়াহুদি-খ্রিস্টানদের প্রাতরণার বিষয়টি যেমন তুলে ধরেছেন আবার তাদের কিছু লোকের কিছু ভালো গুণের কথাও তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَمِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ مَنْ إِن تَأْمَنْهُ بِقِنطَارٍ يُؤَدِّهِ إِلَيْكَ وَمِنْهُم مَّنْ إِن تَأْمَنْهُ بِدِينَارٍ لاَّ يُؤَدِّهِ إِلَيْكَ إِلاَّ مَا دُمْتَ عَلَيْهِ قَآئِمًا ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُواْ لَيْسَ عَلَيْنَا فِي الأُمِّيِّينَ سَبِيلٌ وَيَقُولُونَ عَلَى اللّهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
‘কোনো কোনো আহলে কিতাব এমনও রয়েছে, তোমরা যদি তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদ আমানত রাখ, তাহলেও (চাওয়া মাত্র) তারা তোমাদের যথারীতি তা ফিরিয়ে দেবে। পক্ষান্তরে তাদের মধ্যে এমনও অনেকে রয়েছে যারা একটি দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) গচ্ছিত রাখলেও তা ফেরত দেবে না; যে পর্যন্ত না তুমি (তা আদায়ে) তার পেছনে লেগে না থাক। এটা এজন্য যে, তারা বলে- উম্মীদের (এ অশিক্ষিত অইয়াহুদিদের) অধিকার বিনষ্ট (হরণ) করাতে আমাদের কোনো পাপ নেই। মূলতঃ তারা জেনে শুনেই আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে বেড়ায়।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ৭৫)

আয়াতের ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ
কিতাবিদের মাঝে এমন লোক রয়েছে যে, (কিনতার) বিপুল পরিমাণ সম্পদ আমানত রাখলেও আমানতদারীর দরুন তা তোমাকে ফেরত দেবে। যেমন- আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের কাছে এক ব্যক্তি ১২০০ উকিয়া স্বর্ণ আমানত রেখেছিল। তিনি সম্পূর্ণ স্বর্ণ তাকে ফেরত দিয়েছিলেন।
আবার এমন লোকও আছে যার কাছে একটি স্বর্ণমুদ্রা রাখলে খেয়ানতের কারণে তার পেছনে না লেগে থাকলে সে তা তোমাদের ফেরত দেবে না। বিচ্ছিন্ন না হয়ে লেগে না থাকা পর্যন্ত সে কিছুই দেবে না। বিচ্ছিন্ন হলেই সে অস্বীকার করে বসে। যেমন- ইয়াহুদি কাব ইবনে আশরাফের কাছে এক কুরাইশ ব্যক্তি একটি স্বর্ণমুদ্রা আমানত রেখেছিল। কিন্তু পরে সে তা অস্বীকার করে।
আমানত আদায় না করার করণ হিসেবে তারা উল্লেখ করে যে, নিরক্ষরদের অর্থাৎ সাধারণ আরবদের প্রতি আমাদের (ইয়াহুদিদের) কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এদের কিছু আত্মসাৎ করলে আমাদের কোনো পাপ নেই। কারণ তাদের ধর্মের বিরুদ্ধবাদীদের (ধন-সম্পদ নিজেদের জন্য) এরা বৈধ মনে করে। আর এ বিষয়টি তারা আল্লাহর প্রতি আরোপ করে থাকে।
আল্লাহ তাআলা আয়াতের শেষাংসে উল্লেখ করেন, ‘এ ধরনের বিষয় আল্লাহর প্রতি আরোপ করে তারা আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে অথচ তারা জানে যে, তারা মিথ্যাবাদী। (তাফসিরে জালালাইন)

অমুসলিমের প্রশংসা
অমুসলিম, ইয়াহুদি কিংবা খ্রিস্টান যে কোনো ধর্মের লোক যদি ভালো কোনো কাজ বা গুণের অধিকারী হয় তবে, তার গুণের প্রশংসা করা যাবে। প্রশংসা করার মানে এই নয় যে, তাদের কর্মকাণ্ড মহান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে যাবে।

অমুসলিমদের প্রশংসার উল্লেখের উদ্দেশ্য যে, ভালো কাজ অবিশ্বাসীদের হলেও তা এক পর্যায়ে ভালোই। সে এর উপকার ও সুখ্যাতি দুনিয়াতে পাবে। পরকালে কম শাস্তি ভোগ করবে।

কুরআনুল কারিমের বর্ণনায় এ বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে গেল যে, ইসলামে হিংসা-বিদ্বেষ ও সংকীর্ণতার স্থান নেই। বরং ইসলাম উদার ও সত্যকে তুলে ধরে। ইসলামের বিরুদ্ধবাদীদের ভালো গুণ থাকলে তাও প্রকাশ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না।’ (তাফসিরে মারেফুল কুরআন)

আমানতের ব্যাপারে ইয়াহুদিদের ভ্রান্ত ধারণা
উল্লেখিত আয়াতে ইয়াহুদিদের এক ভ্রান্ত ধারণার সুস্পষ্ট জবাব দেয়া হয়েছে। বিশ্বাসঘাতক ইয়াহিুদিরা মহান আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে বলতো-
‘এরা (আরবের নিরক্ষর-অশিক্ষিত লোক) যেহেতু মুশরিক। তাই এদের সম্পদ আত্মসাৎ করা বৈধ। এতে কোনো গোনাহ নেই।’

মহান আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে বলেন, ‘এরা আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলছে। অপরের সম্পদ আত্মসাৎ করার অনুমতি আল্লাহ কিভাবে দিতে পারেন?

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা শুনে বললেন-
‘আল্লাহর শত্রুরা মিথ্যা বলেছে। কেবল আমানত ছাড়া জাহেলি যুগের সব জিনিস আমার পায়ের নিচে। আমানত সর্বাবস্থায় আদায় করতে হবে। তাতে তা কোনো সৎ লোক হোক আর অসৎ লোক হোক।’ (ইবনে কাসির, ফাতহুল কাদির)

মুসলিমদের জন্য সতর্কতা
আফসোসের বিষয়, ইয়াহুদিদের মতো কিছু নামধারী মুসলিম গোষ্ঠী বা দল রয়েছে, যারা মুশরিক-অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের ধন-সম্পদ বা মালামাল আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে খোঁড়া যক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করে। তারা বলে যে- ইসলামের শত্রু, কাফের দেশ-এ সুদ হালাল। আর শত্রুর (ইসলামের বাইরের লোকদের) সম্পদের কোনো হেফাজত নেই।’ (নাউজুবিল্লাহ) না ইসলাম এ ধারণা ও যুক্তিকে সমর্থন করে না। বরং ইসলাম একমাত্র জীবন ব্যবস্থা যেখানে আমানাতের মাল যারই হোক তাকে তার অধিকার যথাযথ বুঝিয়ে দিতে হবে। যথাযথ ব্যক্তিকে তার অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার মধ্যে ইসলামের সৌন্দর্য প্রকাশ পায়।

মুসলিম উম্মাহর উচিত, ইসলামের সুন্দর ও সৌন্দর্যগুলো সবার সামনে সুন্দর করে তুলে ধরা। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে এগিয়ে আসা। অন্যদের খারাপ গুণ দেখে তা চর্চা না করে বরং অন্যদের খারাপ গুণগুলোকে ইসলামের আলোকে ভালোয় পরিণত করার চেষ্টা করা।

আল্লাহ তাআলা সবাইকে কুরআন-সুন্নাহর জীবনাদর্শ গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।