শবে বরাতের রোজা ভেঙে ফেললে কি কাজা করতে হবে?

রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। যদি কেউ বিনা কারণে রমজানের ফরজ রোজা ভেঙে ফেলে, তাহলে তার জন্য সেই রোজার কাজা ও কাফফারা আদায় করা ফরজ। কোনো গ্রহণযোগ্য কারণে রমজানের রোজা না রাখতে পারলে পরে তা কাজা করা ফরজ। রোজা রাখার মানত করলে তা পালন করা ওয়াজিব। নফলের কাজাও ওয়াজিব। এ ছাড়া বাকি সব রোজা অর্থাৎ ফরজ বা ওয়াজিব নয় এ রকম সব রোজাকে নফল রোজা বলা হয়। শাওয়ালের রোজা, আশুরার রোজা, আরাফার দিনের রোজা, শবে বরাতের রোজা ইত্যাদি সব সুন্নত বা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ রোজাও নফল রোজা গণ্য হয়।
কেউ যদি নফল রোজা শুরু করে, তাহলে তার জন্য তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। তাই ওই রোজা ভেঙে ফেললে পরবর্তীতে ওই রোজার কাজা আদায় করা অর্থাৎ ওই দিনের রোজার পরিবর্তে আরেকদিন রোজ রাখা ওয়াজিব, রোজা ভেঙে ফেলার গ্রহণযোগ্য কারণ থাকুক বা না থাকুক। তবে কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ যেমন সফর, অসুস্থতা ইত্যাদি থাকলে রোজা ভেঙে ফেলার কারণে কোনো গুনাহ হবে না। আর কোনো ওজর না থাকলে অনেকের মতে নফল রোজা ভেঙে ফেলা মাকরুহ। তবে অনেকে বলেছেন, যদি কাজা করার নিয়ত থাকে, তবে ওজর ছাড়াও নফল রোজা ভেঙে ফেলা যায়, তা মাকরুহ নয়।
আল্লামা ইবনে মওদুদ মওসিলি হানাফি তার ‘আল ইখতিয়ার’ গ্রন্থে বলেছেন, নফল ইবাদত শুরু করলে তা পূর্ণ করা এবং ভঙ্গ করলে কাজা করা আবশ্যক। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমরা তোমাদের আমলগুলো বাতিল করো না। (সুরা মুহাম্মদ: ৩৩) বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) এক সাহাবিকে বলেছিলেন, (নফল রোজা ভেঙে) আপনার ভাইয়ের দাওয়াতে সাড়া দিন এবং তার পরিবর্তে আরেক দিন রোজা রাখুন। আরও বর্ণিত রয়েছে আয়েশা ও হাফসা (রা.) নফল রোজা রেখে ভেঙে ফেললে নবিজি (সা.) তাদের বলেছিলেন, তোমরা এই রোজার পরিবর্তে আরেক দিন রোজা রাখো এবং পুনরায় এমন করো না। (আল ইখতিয়ার লিতা’লীলিল মুখতার: ১/৬৬)
নফল রোজার নিয়ত
ফরজ-ওয়াজিব রোজার জন্য যেমন নিয়ত করতে হয়, নফল রোজার জন্যও নিয়ত করতে হয়। রমজানের ফরজ রোজা ও নফল রোজার নিয়ত রাতে করা উত্তম। যদি কেউ রাতে নিয়ত না করে তাহলে দিনের বেলা মধ্য আকাশ থেকে সূর্য পশ্চিমে ঢলার দেড় ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত নিয়ত করা যাবে। শর্ত হলো, সুবহে সাদিকের পর থেকে নিয়তের পূর্ব পর্যন্ত রোজার পরিপন্থী কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সুবহে সাদিকের পর রোজার পরিপন্থী কোনো কাজ করলে অর্থাৎ কিছু খেলে, পান করলে বা রোজা ভেঙে যায় এমন কিছু করলে আর রোজার নিয়ত করার সুযোগ থাকবে না।
নিয়ত বলা হয় মূলত অন্তরের ইচ্ছাকে। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। অন্তরে কেউ যদি ইচ্ছা করে যে ‘আগামীকাল আমি রোজা রাখবো’ এটাই নিয়ত গণ্য হবে। তবে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। যারা আরবি জানে না তারা বাংলায়ই মুখে উচ্চারণ করে রোজার নিয়ত করতে পারেন। অন্তরে রোজার ইচ্ছার সাথে সাথে মুখে এভাবে বলবেন, ‘আমি আগামীকাল রোজা রাখার নিয়ত করলাম’।
রোজা রাখার জন্য সাহরি খাওয়া জরুরি নয়। কেউ যদি রাতে রোজা রাখার নিয়ত করে ঘুমায়, সকালে সুবহে সাদিকের পর ঘুম থেকে জাগে, তাহলে তার ওই রোজা শুদ্ধ হবে। রমজানের রোজা ও নফল রোজার ক্ষেত্রে রাতে নিয়ত করে না ঘুমালেও সুবহে সাদিকের পর ঘুম থেকে উঠে নিয়ত করলে রোজা শুদ্ধ হবে।
ওএফএফ/এমএস