রেগে গেলেও সংযত থাকা মুমিনের বৈশিষ্ট্য

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:২৭ এএম, ২৮ জুলাই ২০২৫
রাগ নিয়ন্ত্রণ ও মানুষকে ক্ষমা করা মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য। ছবি: সংগৃহীত

রাগ মানুষের একটি খারাপ প্রবৃত্তি। রাগের সময় মানুষ এমন অনেক অন্যায় কাজ করে বসে যা সে অন্য সময় করতে পারতো না। পরে আফসোস করা ছাড়া কিছু করার থাকে না। আল্লাহর কোরআনে মুত্তাকিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ক্রোধ সংবরণ করা, মানুষকে ক্ষমা করা। আল্লাহ বলেন, তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি হচ্ছে আসমানসমূহ ও জমিনের সমান, যা তৈরি করা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য; যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় আল্লাহর পথে ব্যয় করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন। (সুরা আলে ইমরান: ১৩৩, ১৩৪)

কোরআনের আরেকটি আয়াতে মুমিনদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর যারা গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বেঁচে থাকে এবং যখন রাগান্বিত হয় তখন ক্ষমা করে দেয়। (সুরা শুরা: ৩৭)

হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি রাগের সময় ক্ষমতা থাকার পরও নিজেকে সংযত করে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকে সবার সামনে ডেকে বিশেষভাবে সম্মানিত করবেন। (সুনানে আবু দাউদ) আরেকটি হাদিসে নবিজি (সা.) বলেছেন, কুস্তি লড়ে অন্যকে ধরাশায়ী করার চেয়ে বেশি শক্তি ও বীরত্বের কাজ রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করা। (সহিহ বুখারি)

কোরআন, কুরআন, হাদিস, উপদেশ, আমল, ফজিলত, ইসলাম
ছবি: কোরআনে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বলা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

কোরআনে ও হাদিসে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার বা রাগের সময় সংযত থাকার কিছু পদ্ধতিও শেখানো হয়েছে। আমরা এখানে তিনটি পদ্ধতি উল্লেখ করলাম:

১. আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া

শয়তানের প্ররোচনায় রাগ উঠে গেলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন,

خُذِ الۡعَفۡوَ وَاۡمُرۡ بِالۡعُرۡفِ وَاَعۡرِضۡ عَنِ الۡجٰهِلِیۡنَ وَاِمَّا یَنۡزَغَنَّکَ مِنَ الشَّیۡطٰنِ نَزۡغٌ فَاسۡتَعِذۡ بِاللّٰهِ اِنَّهٗ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ

ক্ষমাশীলতা অবলম্বন কর, সত্য-সঠিক কাজের আদেশ দাও আর মূর্খদের এড়িয়ে চল। আর যদি শয়তানের পক্ষ হতে কোন প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত কর, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সুরা আরাফ, ১৯৯, ২০০)

কোরআনের ব্যাখ্যাকাররা বলেছেন, আয়াতে শয়তানের প্ররোচনা অর্থ রাগ বা ক্রোধ যা শয়তানের পক্ষ থেকে উস্কে দেওয়া হয়।

হাদিসেও এসেছে, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাগের সময় ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ-শাইতানির-রাজিম’ পড়ে বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করার পরামর্শ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

২. অজু করা

আরকটি হাদিসে রাসুল (সা.) রাগের সময় অজু করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, রাগ আসে শয়তান থেকে, আর শয়তানকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন থেকে। আগুন পানি দিয়ে নেভাতে হয়, তাই রেগে গেলে তোমরা অজু করো। (সুনানে আবু দাউদ)

অজু করাও রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণের একটি পদ্ধতি।

৩. নিস্ক্রিয় ও চুপ হয়ে যাওয়া

রাগ নিয়ন্ত্রণের আরেকটি পদ্ধতি হলো, নিস্ক্রিয় ও চুপ হয়ে যাওয়া। রাগের মাথায় কোনো কথা বলা বা কাজ করা থেকে বিরত থাকা। দাঁড়িয়ে থাকলে বসে পড়া, বসে থাকলে শুয়ে পড়া। আবু জর গিফারি (রা.) বলেন, নবিজি (সা.) আমাদের বলতেন, তোমরা দাঁড়ানো অবস্থায় রেগে গেলে বসে পড়ো। এরপরও রাগ না কমলে শুয়ে পড়ো। (সুনানে আবু দাউদ)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো। কঠিন কোরো না। যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো।’ (মুসনাদে আহমদ)

ওএফএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।