হাদিসের আলোকে বন্ধুত্বের ৪ মূলনীতি

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:০৪ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
হাদিসের আলোকে বন্ধুত্বের ৪ মূলনীতি ছবি: আনপ্ল্যাশ

মুফতি মোহাম্মদ আদনান

১. আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব করুন

আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব করা, ভালোবাসা ইসলামে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সাত ব্যক্তিকে কেয়ামতের ভয়াবহ ছায়াহীন দিনেও আল্লাহ তায়ালা তার শীতল ছায়া দেবেন। তাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি অন্যতম যারা বন্ধুত্ব করেছিল শুধু আল্লাহর জন্য। আল্লাহর জন্য যারা কোথাও একত্র হয় আবার আল্লাহর জন্য পৃথক হয়। (সহিহ বুখারি: ৬৬০, সহিহ মুসলিম: ১০৩১)

এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব হাশরের মাঠেও কাজে আসবে। কেয়ামতের ভয়াবহ দিনে আত্নীয়-স্বজন সবাই পরস্পরের কাছ থেকে পালাতে থাকলেও আল্লাহ তায়ালা তার জন্য বন্ধুত্ব করা দুই বন্ধুকে তার ছায়ায় আশ্রয় দেবেন।

কোরআনও একই কথা বলেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, হাশরের ময়দানে বন্ধুরা পরস্পরের শত্রু হবে, শুধু মুত্তাকি বন্ধুরা ছাড়া। (সুরা জুখরুফ: ৬৭)

২. নেক ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন, বদ ব্যক্তিদের সঙ্গ এড়িয়ে চলুন

ভালো বন্ধুর উপকারিতা ও মন্দ বন্ধুর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ভালো সঙ্গী ও মন্দ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হলো আতর বিক্রেতা ও কামারের মতো। আতর বিক্রেতা থেকে আপনি হয়তো আতর কিনবেন অথবা গায়ে সামান্য মাখবেন, কিছু না হোক অন্তত আতরের সুঘ্রাণ আপনি পাবেনই। আর কামারের কাছে বসলে আপনার কাপড় পুড়বে, গরম লাগবে, অন্তত লোহার দূর্গন্ধ থেকে আপনি কিছুতেই বাঁচতে পারবেন না। (সহিহ মুসলিম: ২৬২৮)

সুতরাং বন্ধুত্ব করতে হবে নেক ব্যক্তিদের সঙ্গে, বদ ব্যক্তিদের সঙ্গ এড়িয়ে চলতে হবে।

৩. বন্ধুত্বের ভালোবাসা প্রকাশ করুন

হাদিসে কাউকে বন্ধু হিসেবে পছন্দ করলে জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে। তাই কাউকে পছন্দ করলে তাকে জানিয়ে দেওয়া সুন্নত।

বর্ণিত হয়েছে, একদিন আল্লাহর রাসুলের মজলিসের পাশ দিয়ে এক ব্যক্তি যাচ্ছিলেন। মজলিসে বসে থাকা এক সাহাবি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তাকে পছন্দ করি। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আপনি কি তাকে জানিয়েছেন? তিনি উত্তর দিলেন, না। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকে জানিয়ে দিন যে আপনি আল্লাহর জন্য তাকে ভালোবাসেন। ওই সাহাবি তার কাছে গেলেন এবং বললেন, আমি আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। সেও উত্তরে বলল, আল্লাহ তায়ালাও আপনাকে ভালোবাসুন যার জন্য আপনি আমাকে ভালোবাসেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৫১২৫)

৪. বন্ধুদের কল্যাণকামী হোন, বিপদে পাশে দাঁড়ান

বন্ধুরদের কল্যাণকামী হওয়া সুন্নত। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন মুয়াজকে (রা.) বললেন, হে মুয়াজ! আল্লাহর জন্য আমি আপনাকে ভালোবাসি। তিনিও বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমিও আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, তাহলে আমি আপনাকে একটি বাক্য শিখিয়ে দিচ্ছি যা প্রতি নামাজের পর পড়বেন। বাক্যটি হলো,

اللَّهمَّ أعنِّي على ذِكْرِكَ، وشُكْرِكَ، وحُسنِ عبادتِكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ইবাদতে আমাকে সাহায্য করুন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৫২২)

অর্থাৎ নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বন্ধুর কল্যাণকামী হিসেবে তাকে একটি আমল শিখিয়ে দিয়েছিলেন যা দুনিয়া ও আখেরাতে তার উপকারে আসবে। আমাদেরও উচিত বন্ধুদের কল্যাণ কামনা করা, তাদের ভালো চাওয়া। যথাসাধ্য উপকার করার চেষ্টা করা। প্রয়োজনের সময়, বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়ানো।

আরেকটি হাদিসে নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, একজন মুমিন অপর মুমিনের জন্য মজবুত প্রাচীরের মতো। একেটি ইট আরেকটি ইটকে মজবুত করে ধরে রাখে। (সহিহ বুখারি: ৪৮১)

এ হাদিসটি বন্ধু-বান্ধবসহ যে কোনো ‍মুমিন ভাইয়ের ব্যাপারে প্রযোজ্য।

নবীজির (সা.) সঙ্গে সাহাবিদের বন্ধুত্ব

নবীদের পরে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় তারা ছিলেন নবীজির (সা.) সঙ্গী বা বন্ধু। তারা নিজেদের পরিচয় দেওয়ার সময় গর্বের সঙ্গে বলতেন, আমি আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) সঙ্গী বা বন্ধু ছিলাম।

প্রত্যেক সাহাবিই অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন। কেউ নিয়মিত হজ করেছেন, কেউ জিহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, কেউ নিজের সব সম্পদ দান করে দিয়েছেন, কেউ দিনে রোজা রাখতেন আর সারা রাত নামাজ আদায় করতেন। এতো এতো আমলের পরও কোনো একজন সাহাবি নিজেকে হাজি, মুজাহিদ, মুসল্লি কিংবা দানবীর ইত্যাদি পরিচয়ে পরিচিত করেননি। বরং সবাই সব ক্ষেত্রে ‘সাহাবি’ পরিচয়ে সম্মান ও গর্ববোধ করতেন।

লেখক: খতিব, মকিম বাজার জামে মসজিদ, বংশাল, ঢাকা

ওএফএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।