অন্তর পরিশুদ্ধ করার ৪ উপায়
নোমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, শরীরের মধ্যে একটি মাংসের টুকরো আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই খারাপ হয়ে যায়। সে মাংসের টুকরোটি হলো অন্তর। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে রজব (রহ.) বলেন, মানুষের অন্তর যখন ঠিক হয়ে যায়, তখন তার কাজও ঠিক হয়ে যায়। তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তখন শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই নড়াচড়া করে। অন্তর পরিশুদ্ধ হলে কাজকর্ম পরিশুদ্ধ হয়ে যাওয়া অপরিহার্য। অল্প জ্ঞানের কিছু মানুষ ধারণা করে এ হাদিসে অন্তরের পরিশুদ্ধি ও কাজের পরিশুদ্ধির মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে। এটা অজ্ঞতাপ্রসূত বা কুপ্রবৃত্তির অনুগামী ভুল ধারণা। ইমান অন্তরের বিশ্বাস, মুখের স্বীকারোক্তি ও আমলের সমষ্টি। অন্তরের পরিশুদ্ধির প্রভাব মানুষের বাহ্যিক আচরণ ও কাজের ওপর পড়ে। কারো ভেতর যতো বেশি পরিশুদ্ধ হয়, তার কাজ ততো বেশি উত্তম ও উন্নত হতে থাকে।
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তোমাদের রূপ বা সম্পদ দেখেন না, তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমল। (সহিহ মুসলিম)
এ হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, মুসলমানদের কর্তব্য অন্তরের পরিশুদ্ধি, সুস্থতা ও পবিত্রতাকে গুরুত্ব দেওয়া। যেসব কাজ অন্তরের পবিত্রতা নষ্ট করে তা থেকে দূরে থাকা। অন্তর শুদ্ধ হয়ে গেলে শরীরের সব অঙ্গ তার অনুসরণ করে। শিক্ষক ও দাঈদের উচিত মানুষের অন্তর পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করা। অন্তর শুদ্ধ হলে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই আল্লাহর শরিয়তের আহ্বানে সাড়া দেয় এবং আখেরাতের জীবনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়।
এখানে আমরা অন্তর পরিশুদ্ধ করার ৪টি উপায় তুলে ধরেছি:
১. আল্লাহর কাছে দোয়া ও কান্নাকাটি
অন্তরের পরিশুদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করুন, কান্নাকাটি করুন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা আমাদের দোয়া করতে শিখিয়েছেন,
رَبَّنَا لَا تُزِغۡ قُلُوۡبَنَا بَعۡدَ اِذۡ هَدَیۡتَنَا وَ هَبۡ لَنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ رَحۡمَۃً اِنَّکَ اَنۡتَ الۡوَهَّابُ
উচ্চারণ: রাব্বানা লা তুযিগ কুলুবানা বা’দা ইয হাদাইতানা ওয়া হাব লানা মিন লাদুনকা রাহমাতান ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহাব।
অর্থ: হে আমাদের রব, আপনি হিদায়াত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সুরা আলে ইমরান: ৮)
রাসুল (সা.) দোয়া করতেন,
اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوبِ صَرِّفْ قُلُوبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা মুসাররিফাল কুলুবি সাররিফ কুলুবানা আলা তাআতিকা।
অর্থ: অন্তরসমূহের পরিচালক হে আল্লাহ! আপনি আমাদের অন্তরসমূহ আপনার আনুগত্যের ওপর অটল রাখুন। (সহিহ মুসলিম)
২. কোরআন তিলাওয়াত
অন্তর পরিশুদ্ধ করতে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করুন। কোরআনে অন্তরের ব্যাধিসমূহের শিফা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তরসমূহে যা থাকে তার শিফা, আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত। (সুরা ইউনুস: ৫৭)
৩. আল্লাহর স্মরণ ও জিকির
অন্তর পরিশুদ্ধ করতে আল্লাহর স্মরণ অন্তরে জাগরুক রাখুন, বেশি বেশি জিকির করুন। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা ইমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়। (সুরা রা’দ: ২৮)
আল্লাহর জিকির বা স্মরণ শুধু মুখে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করার নাম নয়, আল্লাহর যে কোনো ধরনের আনুগত্য ও ইবাদতও জিকির। দোয়া, ইস্তেগফার, তিলাওয়াত ও দ্বীনি আলোচনাও আল্লাহর জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। একইসাথে আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করা বা আল্লাহর প্রশংসা, পবিত্রতা বর্ণনা, মহত্ত্ব ও বড়ত্বের ঘোষণা মুখে উচ্চারণ করাও আল্লাহর জিকির।
৪. বুজুর্গদের সহচর্য
অন্তর পরিশুদ্ধ করতে আল্লাহর প্রিয় বুজুর্গ বান্দাদের কাছে যান, তাদের সামনে বসুন, তাদের কথা শুনুন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন। বুজুর্গ আলেমদের লেখা বইপত্র পড়ুন। বুজুর্গদের সহচর্যে অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। অন্তরে নেক আমল করার আগ্রহ ও গুনাহের প্রতি ঘৃণা তৈরি হয়।
ওএফএফ