ইবনে ওমরের (রা.) স্বপ্ন ও নবীজির (সা.) পরামর্শ

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ০৫:২০ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
ইবনে ওমরের (রা.) স্বপ্ন ও নবীজির (সা.) পরামর্শ ছবি: ক্যানভা

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবিতাবস্থায় কেউ কোনো স্বপ্ন দেখলে তা রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে বর্ণনা করতেন। নবীজি (সা.) তাদের স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতেন বা কোনো পরামর্শ দিতেন। আমার মনে মনে আকাঙ্ক্ষা ছিল, আমি যদি কোনো স্বপ্নে দেখতাম, তাহলে তা নবীজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে পারতাম!

এক রাতে আমি বিস্মকয়কর স্বপ্ন দেখলাম। আমি সে সময় অবিবাহিত যুবক ছিলাম, রাতে মসজিদে ঘুমাতাম। আমি স্বপ্নে দেখলাম, যেন দুজন ফেরেশতা আমাকে ধরে জাহান্নামের কাছে নিয়ে গেলেন। আমি তাকিয়ে দেখলাম, কূপের মত একটি গভীর গর্ত। কূপের মত ওপরে দুটি কাঠের টুকরাও দেখলাম। সেখানে কয়েকজন ব্যক্তি ছিল যাদের আমি চিনলাম। আমি তখন বলতে শুরু করলাম, জাহান্নাম থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই, জাহান্নাম থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই, জাহান্নাম থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই। এই সময় আরেকজন ফেরেশতা এলেন। তিনি আমাকে বললেন, তোমার কোন ভয় নেই।

আমি এই স্বপ্নের কথা হাফসাহর (রা.) (ইবনে ওমরের (সা.) বোন ও নবীজির (সা.) স্ত্রী) কাছে বললাম। হাফসা (রা.) তা রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে বললেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আবদুল্লাহ কত উত্তম মানুষ, যদি সে যদি রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করত!

সালেম (রা.) বলেন, এরপর আবদুল্লাহ (রা.) রাতে খুব অল্প সময়ই ঘুমাতেন, বেশিরভাগ সময় নামাজ পড়তেন। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) নবীজির বিখ্যাত সাহাবি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনে খাত্তাবের (রা.) সন্তান, মক্কায় নবীজির (সা.) নবুওয়াত লাভের তৃতীয় বছরে হিজরতের প্রায় ১০ বছর আগে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার উপনাম আবু আব্দুর রহমান। তার মায়ের নাম যাইনাব বিনতে মাজউন। তিনি ছোটবেলায় ইসলাম গ্রহণ করেন। মাত্র এগোরো বছর বয়সে তিনি তার বাবার সঙ্গে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন।

বদর ও উহুদের যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বয়স অল্প হওয়ায় আল্লাহর রাসুল (সা.) তাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের উপযুক্ত মনে করেননি। খন্দকের যুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহণ করেছিলেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র পনেরো বছর। খন্দকের পরে আল্লাহর রাসুলের (সা.) নেতৃত্বে সংঘটিত সবগুলো যুদ্ধেই তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। নবীজির (সা.) ওফাতের পর তিনি ইয়ামামার যুদ্ধ ও ইয়ারমুকের যুদ্ধে অংশ নেন। মিসর ও উত্তর আফ্রিকা বিজয়েও তিনি অংশ নেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) জীবনের প্রতিটি কাজে, প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুলকে (সা.) অনুসরণ করতে অত্যন্ত উদগ্রীব ছিলেন। আমল ও ইবাদতের ক্ষেত্রে তো বটেই, বৈষয়িক কাজকর্মেও তিনি নবীজিকে (সা.) অনুসরণের চেষ্টা করতেন। বুঝতে শেখার পর নবীজির (সা.) প্রায় সব মজলিসে উপস্থিত থাকতেন। যদি কোনো কারণে কোনো মজলিসে উপস্থিত থাকতে ব্যর্থ হতেন, তাহলে উপস্থিত সাহাবিদের থেকে জিজ্ঞাসা করে জানতেন ওই মজলিসে নবীজি (সা.) কী বলেছেন।

আল্লাহর রাসুলের হাদিস, তার জীবনযাপন, বাণী চর্চা ও বর্ণনায় আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) থেকে সরাসরি বহু হাদিস বর্ণনা করেছেন তিনি। এ ছাড়া আবু বকর (রা.), ওমর (রা.), ওসমান (রা.), আবু যর (রা.), মুয়ায (রা.), আয়েশা (রা.) প্রমুখ সাহাবি থেকেও হাদিস বর্ণনা করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরের (রা.) হাদিসের মজলিসে বসে, তার কাছ থেকে হাদিস শুনে বর্ণনা করেছেন বহু মানুষ। তাদের মধ্যে অনেক প্রখ্যাত সাহাবি ও তাবেঈও রয়েছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রহ.), আলকামা ইবনে ওয়াক্কাস (রহ.), আবু আব্দুর রহমান নাহদি (রহ.), মাসরুক (রহ.), জুবাইর ইবনে নুফাইর (রহ.), আব্দুর রহমান ইবনে আবি লায়লা (রহ.), আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার (রহ.), উরওয়া ইবনে যুবাইর (রহ.), বিশর ইবনে সাঈদ (রহ.), আতা (রহ.), মুজাহিদ (রহ.), মুহাম্মদ ইবনে সিরিন (রহ.) প্রমুখ।

তার থেকে বর্ণিত অসংখ্য হাদিস আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে তার থেকে বর্ণিত ২৮০টি হাদিস রয়েছে। এ ছাড়া ছয়টি প্রধান হাদিস গ্রন্থ, মুসনাদ ও অন্যান্য সুনান গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে তার থেকে বর্ণিত প্রায় ২৬৩০টি হাদিস।

ওএফএফ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।