হজরত ঈসার (আ.) মুজিজা

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ১২:৪৮ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
হজরত ঈসার (আ.) মুজিজা ছবি: পিক্সেলস

আল্লাহর নবী ঈসার (আ.) জন্ম হয়েছিল অলৌকিকভাবে। মায়ের গর্ভে তিনি এসেছিলেন বাবা ছাড়াই। আল্লাহ একটি নির্দেশের মাধ্যমে কুমারী মারিয়ামের (আ.) গর্ভে তাকে সৃষ্টি করেন। আল্লাহ তাকে নবী বানিয়েছিলেন এবং অনেক মুজিজা বা অলৌকিক ক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্যও দান করেছিলেন। এখানে আমরা কোরআনে বর্ণিত তার কিছু মুজিজার কথা উল্লেখ করছি।

জন্মের পরপর কথা বলা

তার একটি মুজিজা বা অলৌকিক বৈশিষ্ট্য হলো তিনি কথা বলার বয়স হওয়ার আগেই মানুষের সাথে কথা বলেছিলেন। কোরআনে হযরত ঈসার (সা.) এ অলৌকিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে আল্লাহ বলেছেন, স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বলল, হে মারিয়াম, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে তাঁর পক্ষ থেকে একটি কালেমার সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম মসিহ ঈসা ইবনে মারিয়াম, যে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত এবং নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। সে মানুষের সাথে কথা বলবে দোলনায় ও পরিণত বয়সে এবং সে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা আলে ইমরান: ৪৫, ৪৬)

তার মা মারিয়াম (আ.) যখন তাকে নিয়ে তার আত্মীয় স্বজনের কাছে আসেন, তারা শিশু ঈসার পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করতে থাকে, মারিয়ামকে (আ.) দোষারোপ করতে থাকে। মারিয়াম (আ.) তখন নিজে চুপ থেকে কোলের শিশুকে ইশারায় দেখিয়ে দেন যে আপনারা তাকেই তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন। তারা বলে, আমরা এতটুকু একটা বাচ্চার সাথে কীভাবে কথা বলবো!

ঈসা (আ.) তখন বলে ওঠেন, আমি আল্লাহর বান্দা; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আমাকে নবী বানিয়েছেন, যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন এবং যতদিন আমি জীবিত থাকি তিনি আমাকে সালাত ও যাকাত আদায় করতে আদেশ করেছেন। আর আমাকে মায়ের প্রতি সদাচারী করেছেন, উদ্ধত ও অহংকারী করেননি। আর আমার ওপর শান্তি যেদিন আমি জন্মেছি, যেদিন আমি মারা যাব এবং যেদিন পুনরায় জীবিত করে আমাকে ওঠানো হবে। (সুরা মারিয়াম: ৩০-৩৩)

মাটির পাখিতে প্রাণ সঞ্চার

নবী ঈসা (আ.) আল্লাহর প্রদত্ত ক্ষমতায় মাটির পাখিতে প্রাণ সঞ্চার করতে পারতেন। মাটির পাখি বানিয়ে ফুঁ দিলে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে তা জীবন্ত পাখি হয়ে যেত।

পবিত্র কোরআনে সুরা মায়েদায় আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে মারিয়ামের পুত্র ঈসা, তোমার ওপর ও তোমার মায়ের ওপর আমার নেয়ামত স্মরণ কর, যখন আমি তোমাকে শক্তিশালী করেছিলাম পবিত্র আত্মা দিয়ে, তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে দোলনায় ও পরিণত বয়সে। আর যখন আমি তোমাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম কিতাব, হিকমত, তাওরাত ও ইনজীল; আর যখন আমার আদেশে কাদামাটি থেকে পাখির আকৃতির মত গঠন করতে এবং তাতে ফুঁক দিতে, ফলে আমার আদেশে তা পাখি হয়ে যেত। (সুরা মায়েদা: ১১০)

সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ তাআলা বলেন, (আল্লাহ তাআলা ঈসাকে) বনি ইসরাইলদের রাসুল বানাবেন, (সে বলবে) নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিদর্শন নিয়ে এসেছি; আমি তোমাদের জন্য কাদামাটি দিয়ে পাখির আকৃতি বানাব, তারপর আমি তাতে ফুঁ দেব ফলে আল্লাহর হুকুমে সেটি পাখি হয়ে যাবে। (সুরা আলে ইমরান: ৪৯)

মৃতকে জীবিত করা, জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করা

নবী ঈসার (আ.) আরও তিনটি মুজিজা ছিল তিনি মৃতকে জীবিত করতে পারতেন, জন্মান্ধকে দৃষ্টিশক্তি দান করতে পারতেন, কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করতে পারেতেন যা ওই সময় প্রচলিত চিকিৎসার মাধ্যমে সম্ভব ছিল না।

পবিত্র কোরআনে সুরা মায়েদায় আল্লাহ তাআলা আরও বলেন বলেন, আর তুমি আমার আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করতে এবং যখন আমার আদেশে তুমি মৃতকে জীবিত বের করতে। (সুরা মায়েদা: ১১০)

সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ তাআলা বলেন, (ঈসা (আ.) বলেন,) আর আমি আল্লাহর হুকুমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করব এবং মৃতকে জীবিত করব। (সুরা আলে ইমরান: ৪৯)

গোপন বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকা

নবী ঈসার (আ.) আরেকটি মুজিজা ছিল তিনি আল্লাহ তাআলার প্রদত্ত ক্ষমতায় যে কোনো ব্যক্তিকে বলে দিতে পরতেন সে তার ঘরে কী খেয়েছে বা কী জমা করে রেখেছে।

পবিত্র কোরআনে সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ তাআলা বলেন, (ঈসা আ. বলেন,) তোমরা যা আহার কর এবং তোমাদের ঘরে যা জমা করে রাখ তা আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব। নিশ্চয় এতে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা মুমিন হও। সুরা আলে ইমরান: ৪৯)

আকাশ থেকে দস্তরখান অবতীর্ণ হওয়া

নবী ঈসার (আ.) সঙ্গীরা আবেদন জানিয়েছিলেন, আল্লাহ তাআলা যেন নিদর্শন হিসেবে আকাশ থেকে খাবারে পূর্ণ দস্তরখান নাজিল করেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নবী ঈসা (আ.) দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করে আকাশ থেকে দস্তরখান নাজিল করেছিলেন।

পবিত্র কোরআনে সুরা মায়েদায় আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন হাওয়ারীগণ (নবী ঈসার সঙ্গী) বলেছিল, হে মারিয়ামের পুত্র ঈসা, তোমার রব কি পারেন আমাদের ওপর আসমান থেকে খাবারপূর্ণ দস্তরখান নাজিল করতে? সে বলেছিল, আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যদি তোমরা মুমিন হও। তারা বলল, আমরা তা থেকে খেতে চাই আর আমাদের হৃদয় প্রশান্ত হবে এবং আমরা জানব যে, তুমি আমাদেরকে সত্যই বলেছ, আর আমরা এ ব্যাপারে সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত হব। মারিয়ামের পুত্র ঈসা বলল, হে আল্লাহ, হে আমাদের রব, আসমান থেকে আমাদের প্রতি খাবারপূর্ণ দস্তরখান নাজিল করুন; এটা আমাদের জন্য ঈদ হবে আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্য, আপনার পক্ষ থেকে এক নিদর্শন হবে আর আমাদেরকে রিজিক দান করুন, আপনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা। আল্লাহ বললেন, নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি তা নাজিল করব; কিন্তু এরপর তোমাদের মধ্যে যে কুফরি করবে তাকে নিশ্চয় আমি এমন আজাব দেব যে আজাব সৃষ্টিকুলের কাউকে দেব না। (সুরা মায়েদা: ১২-১৫)

ওএফএফ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।