উত্তম ব্যবহারকে যার সঙ্গে তুলনা করেছেন বিশ্বনবি

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ০২:৩৪ পিএম, ০৪ নভেম্বর ২০২১

সমাজে প্রতিনিয়ত ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। আর এসবের মূল কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যায়- অতি তুচ্ছ একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে এসবের সূচনা। এসব তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক সময় বড় ধরনের ঝগড়া বিবাদ এমনকি মারামারি ও হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ ঘটে থাকে। তাই ঝগড়া বিবাদ থেকে রক্ষা পেতে উত্তম ব্যবহারের বিকল্প নেই। উত্তম আচরণ মানুষকে ঝগড়া বিবাদ থেকে শুধু রক্ষাই করে না বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটিকে উত্তম ইবাদতের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কী সেই ফজিলতপূর্ণ ইবাদত?

হ্যাঁ, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তম ব্যবহারকে সাদকার সঙ্গে তুলনা করেছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘উত্তম কথা বা ভালো কথাও একটি সাদকা।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ইসলাম এমন এক শান্তির ধর্ম; যেখানে আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত-অপরিচিত, প্রতিবেশি, মুসলিম-অমুসলিম সবার সঙ্গেই উত্তম ব্যবহার আর শান্তির শিক্ষা দেয়। একজন মানুষ; সে যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন, তার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহারের শিক্ষার বিষয়টি আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জীবনাদর্শ থেকে পেয়ে থাকি।

আমরা যেন সবার সঙ্গে কোমল ব্যবহার করি এ শিক্ষাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দিয়েছেন। সুতরাং আমরা যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ লাভ করতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে সবার সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে। যেমনটি হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-

১. ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, সে আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং কেয়ামতের দিন সে আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে।’ (সুনানে তিরমিজি)

২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘সুন্দর আচরণই নেক আমল।’ (মুসলিম)

৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ কোমল ব্যবহার করেন, তাই সব ব্যাপারে তিনি কোমল আচরণ পছন্দ করেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

৪. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্টভাবে বলেছেন ‘যে ব্যক্তি সুন্দর আচরণ থেকে বঞ্চিত; সে কল্যাণ থেকেও সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত।’ (মুসলিম)

মনে রাখতে হবে

উত্তম আচরণের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন হয় এবং পরকালের জান্নাত সুনিশ্চিত হয়। এ সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা দিয়েছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিকের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-

১. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটু কথা বলে বা অশোভন আচরণ করে, তাকে মহান আল্লাহ তাআলা ঘৃণা করবে। আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তার ব্যবহারের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সাওয়াব লাভ করবেস।’ (তিরমিজি)

২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘যে কাজ মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করাবে, তা হলো মহান আল্লাহ তাআলার ভয় ও সুন্দর আচরণ। আর সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে, তা হলো (মানুষের) মুখ ও লজ্জাস্থান।’ (তিরমিজি, মুসতাদরাকে হাকেম)

সুতরাং যদি পুনরায় ইসলামের হারানো সুন্দর ব্যবহারের গৌরব ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে আমাদের উচিত হবে ধনী-গরিব, জাতি, ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ ও উত্তম ব্যবহার করা। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শ অনুসরণ করে জীবন পরিচালনা করা।

তাই আসুন, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার ওপর নিজে চলি এবং পরিবারকে চলতে নসিহত করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পথে জীবন গড়ি। পরকালে মুক্তির পাশাপাশি জান্নাত সুনিশ্চিত করি। আল্লাহ তাআলা কবুল করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।