যৌনাঙ্গ ছাড়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যভিচার

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৩৭ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২২

চোখের জিনা হচ্ছে -অশ্লীল কিছু দেখা, কানের জিনা হচ্ছে- অশ্লীল কিছু শোনা, জিহ্বার জিনা হচ্ছে- অশ্লীল ভাষা বলা, হাতের জিনা হচ্ছে- অবৈধ স্পর্শ, পায়ের জিনা হচ্ছে- অশ্লীলতার দিকে পা বাড়ানো। এসবই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যভিচার। এ সম্পর্কে ইসলামের দিক নির্দেশনা কী?
আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে জিনা-ব্যভিচার সম্পর্কে মানুষকে একাধিক আয়াতে এভাবে সতর্ক করেছেন-
وَ لَا تَقۡرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّهٗ کَانَ فَاحِشَۃً ؕ وَ سَآءَ سَبِیۡلًا
‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেও না, নিশ্চয়ই তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৩২)

اِنَّ الَّذِیۡنَ یُحِبُّوۡنَ اَنۡ تَشِیۡعَ الۡفَاحِشَۃُ فِی الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ۙ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ
নিশ্চয়ই যারা এটা পছন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।’ (সুরা নুর : আয়াত ১৯)

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, ‘মানুষের চোখের দৃষ্টি যৌন লালসা উদ্বোধক, পয়গাম বাহক। কাজেই এ দৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ মূলত যৌন অঙ্গেরই সংরক্ষণ। যে ব্যক্তি দৃষ্টিকে অবাধ, উন্মুক্ত ও সর্বগামী করে; সে নিজেকে নৈতিক পতন ও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। মানুষ নৈতিকতার ক্ষেত্রে যত বিপদ ও পদস্খলনেই নিপতিত হয়, দৃষ্টিই হচ্ছে তার সব কিছুর মুল কারণ। কেননা দৃষ্টি প্রথমত আকর্ষণ জাগায়, আকর্ষণ মানুষকে চিন্তা-বিভ্রমে নিমজ্জিত করে, আর এ চিন্তাই মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে লালসার উত্তেজনা। এ যৌন উত্তেজনা ইচ্ছা শক্তিকে উদ্বুদ্ধ করে, আর ইচ্ছা ও প্রবৃত্তি শক্তিশালী হয়ে দৃঢ় সংকল্পে পরিণত হয়। এ দৃঢ় সংকল্প অধিকতর শক্তি অর্জন করে বাস্তবে ঘটনা সংঘটিত করে। বাস্তবে যখন কোন বাধাই থাকে না, তখন এ বাস্তব অবস্থার সম্মুখীন না হয়ে কারো কোন উপায় থাকে না।‘ বিষয়টি হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এভোবে এসেছে-

১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বনি আদমের জন্য জিনার একটা অংশ নির্ধারিত রেখেছেন। সে তাতে অবশ্যই জড়িত হবে। চোখের জিনা হলো- দেখা, জিহবার জিনা হলো- কথা বলা, কুপ্রবৃত্তি কামনা ও খাহেশ সৃষ্টি করা এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে।’ (বুখারি ৬২৪৩)

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু যা বলেছেন ’লামাম (আকর্ষণীয় বড় গুনাহ) বিষয়ে তার চেয়ে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ কোনো বিষয় আমি দেখিনি। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের যে ভাগ লিখেছেন, নিঃসন্দেহে তা সে পাবে। দুচোখের ব্যভিচার হলো- দেখা, জবানের ব্যভিচার হলো- পরস্পর কথোপকথনের ব্যভিচার, মনের ব্যভিচার কামনা-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে অথবা মিথ্যা সাব্যস্ত করে।’ (মুসলিম ২৬৫৭)

হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা খাত্তাবি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, ‘দেখা ও কথা বলাকে জিনা বলার কারণ এই যে, দুটোই হচ্ছে প্রকৃত জিনার ভূমিকা। জিনার মূল কাজের আগের স্তর। কেননা দৃষ্টি হচ্ছে মনের গোপন জগতের উদ্বোধক আর জিহবা হচ্ছে বাণী বাহক, যৌনাঙ্গ হচ্ছে বাস্তবায়নের হাতিয়ার- সত্য প্রমাণকারী।’ (মাআলিমুস সুনান ৩য় খন্ড ২২৩ পৃষ্ঠা)

অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি চালনার কুফল সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি ইবলিসের বিষাক্ত বাণ বিশেষ।’ (মুসনাদ আশ-শিহাব ১মখন্ড ১৯৫-১৯৬ পৃষ্ঠা)

দৃষ্টি পরিচালনা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়ে বলেছেন-
غًضُّوا أَبْصَارَكُمْ وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ
‘তোমাদের দৃষ্টিকে নীচু কর, নিয়ন্ত্রিত কর এবং তোমাদের লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ করো।’
এখানে যদিও দুটি নির্দেশ আলাদা আলাদা দেওয়া হয়েছে। তথাপিও প্রথমটির অনিবার্য পরিণতিই হচ্ছে শেষটি। অর্থাৎ দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত হলেই লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ সম্ভব। অন্যথায় তাকে চরম নৈতিক অধঃপতনে নিমজ্জিত হতে হবে নিঃসন্দেহে।

একবার নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জামাতা হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেছিলন-
‘হে আলি! কোনো পরস্ত্রীর প্রতি একবার দৃষ্টি পড়লে পুনরায় তার প্রতি চোখ তুলে তাকাবে না। কেননা তোমার জন্যে প্রথম দৃষ্টিই ক্ষমার যোগ্য, দ্বিতীয়বার দেখা নয়।’ (আবু দাউদ ২১৪৯)
এর কারণ সুস্পষ্ট। আকস্মিকভাবে কারো প্রতি চোখ পড়ে যাওয়া আর ইচ্ছা করে কারো প্রতি তাকানো সমান কথা নয়। প্রথমবার যে চোখ কারো উপর পড়ে গেছে, তার মূলে ব্যক্তির ইচ্ছার বিশেষ কোন যোগ থাকে না; কিন্তু পুনরায় তাকে দেখা ইচ্ছাক্রমেই হয়। এ জন্যই প্রথমবারের দেখায় কোনো দোষ হবে না; কিন্তু দ্বিতীয়বার তার দিকে চোখ তুলে তাকানো ক্ষমার অযোগ্য।
একবার নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- ‘পরস্ত্রীর প্রতি আকস্মিক দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে আপনার হুকুম কী? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- اصرف بصرك
‘তোমার চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নাও।’ (আবু দাউদ ২১৪৮)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, চোখ, কান, মুখ, হাত ও পায়ের জিনা থেকে হেফাজত থাকা। অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে মুক্ত থাকা। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করে জিনা/ব্যভিচারমুক্ত জীবন গড়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব ধরনের জিনা/ব্যভিচার থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।