রমজানের তোপধ্বনি এখন আর শোনা যায় না সিরিয়ায়

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৪০ এএম, ১৯ এপ্রিল ২০২৩

মহিমান্বিত মাস রমজান। এ মাসকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী রয়েছে নানা অনুষ্ঠান আর রীতি-রেওয়াজ। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় বাহারি ইফতার, ইফতারের পর তারাবিহের নামাজ পড়া ইত্যাদি ছাড়াও আনন্দ-উৎসব করার মাধ্যমেও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় রমজানের খুশির আমেজ। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চেয়েও এসব রীতি সাংস্কৃতিক উদযাপন হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। যুদ্ধকবলিত ও নানা কারণে সংকটাচ্ছন্ন বহু দেশ বা অঞ্চলের মানুষ এখনও অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন। কারণ, তারা জীবনটা বাঁচানোর জন্য সংগ্রাম করছেন প্রতিনিয়ত। তেমনি একটি দেশ সিরিয়া। যুদ্ধবিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটির রমজান কীভাবে কাটছে?

সিরিয়ার রমজান
শান্তিপূর্ণ সিরিয়া একসময় রমজান সিরিয়ান মুসলিমদের জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে আসত। তারা পরস্পরকে অভিনন্দন জানাত। রমজানের আগেই প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনে রাখত। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দমুখর রমজান উদযাপন করত। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি চিত্র সিরিয়ার রমজান-সংস্কৃতি বদলে দিয়েছে। রমজান এখন তাদের অতীতের স্মৃতি ও ভবিষ্যৎ দুশ্চিন্তা থেকে পৃথক কিছু নয়।
সিরিয়ার বেশির ভাগ নাগরিকই বিপর্যয় ও ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছে। যুদ্ধ তাদের পরিবার ও ঘর-বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তাদের জীবন ও জীবিকা ধ্বংসের মুখে ফেলে দিয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দামেস্কের বহু দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। বহু ব্যবসায়ী জর্দান ও লেবাননের মতো জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি
যুদ্ধের কারণে সিরিয়ায় অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফল ও সবজির জন্য অতিপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনাও বহু পরিবারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে গেছে। ফলে পরিবার প্রধানরা রমজানের আগমনে আনন্দের পরিবর্তে উদ্বেগ অনুভব করেন।

রমজান ঐতিহ্য
একসময় সিরিয়ায় রমজান উদযাপনে ধর্মীয় উদারতা ছিল গৌরবময় ঐতিহ্য। বহু অমুসলিম রমজানের ইফতার-সেহরির আয়োজনে যুক্ত হতো। কিন্তু এখন যুদ্ধের কারণে রমজানের ইফতারে মানুষ সমবেত হতে ভয় পায়।

ইফতারে তোপধ্বনি
সিরিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্য রমজান ও ঈদের তোপধ্বনি এখন আর শোনা যায় না। বিগত পাঁচ বছর তোপধ্বনির পরিবর্তে সিরিয়ানরা ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দ শুনে থাকে। পরিবারের সবাই মিলে ইফতার করা বা ইফতার শেষে মসজিদে তারাবি নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করতেও ভয় পায় তারা।

সম্প্রীতির বার্তা বিনিময়
বিস্ফোরণের ভয়ের সাধারণ এই চিত্রের বিপরীতে ভিন্ন কিছু চিত্রও দেখা যায় সিরিয়ায়। রমজানে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিমরা সমবেত হয়ে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করে। তারা পরস্পরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। ধ্বংসস্তূপের ভেতর বসবাস করেও তারা সম্প্রীতি ও সহযোগিতার বার্তা পৌঁছে দিতে ভোলে না।

এ ছাড়া রমজানে প্রতিবেশী আরব ও অনারব দেশগুলো সীমান্তবর্তী অঞ্চলে তাদের ত্রাণ-তৎপরতা বৃদ্ধি করে। এতে সীমান্তবর্তী মুসলিমরা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পায়।

উল্লেখ্য জাতিসংঘের এক জরিপ বলছে, সিরিয়ার ৮০ শতাংশ জনগণ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। এ থেকেও স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, দেশটির বাকি জনগণের দিন কাটছে কতটা অসহায়ত্বের সঙ্গে!

তবু সিরিয়ার অবরুদ্ধ শহর দৌমার বাসিন্দারা রমজানে তাদের ইফতার আয়োজন কোনোমতে করছেন। রাজধানী দামেস্কের কাছেই অবস্থিত দৌমা এলাকা। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এই এলাকার বেশির ভাগই এখন ধ্বংসস্তুপে নিমজ্জিত। কিন্তু এরই মধ্যে সেখানকার বাসিন্দারা একসঙ্গে ইফতারের ব্যবস্থা করেছেন।

আদালেহ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা
সিরিয়ান আদালেহ ফাউন্ডেশন দেশটির বাসিন্দাদের জন্য ইফতারের আয়োজন করছেন । এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালে তার কার্যক্রম শুরু করে। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রতি পূর্বাঞ্চলীয় ঘৌটা এলাকায় সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানটির কাজ শুরু হয়। রমজানের শেষ দশ দিন প্রতিষ্ঠানটি দৌমার বাসিন্দাদের খাবার সরবরাহ করে।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।