ইতালিতে রেস্তোঁরায় ইফতার-সেহরি করে মুসলিমরা

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৩৫ এএম, ১৪ এপ্রিল ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

মহিমান্বিত মাস রমজান। এ মাসকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী রয়েছে নানা অনুষ্ঠান আর রীতি-রেওয়াজ। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় বাহারি ইফতার, ইফতারের পর তারাবিহের নামাজ পড়া ইত্যাদি ছাড়াও আনন্দ-উৎসব করার মাধ্যমেও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় রমজানের খুশির আমেজ। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চেয়েও এসব রীতি সাংস্কৃতিক উদযাপন হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। দক্ষিণ ইউরোপে অবস্থিত ভূমধ্য সাগরীয় দেশ ইতালি। সেখানকার মুসলিমরা কীভাবে রমজান পালন করেন?

ইতালির অধিকাংশ অধিবাসী ক্যাথলিক খ্রিস্টান। মোট জনসংখ্যার ৪ ভাগ মুসলিম। তাছাড়া বৌদ্ধ-ইহুদিও আছে দেশটিতে। এই অল্পসংখ্যক মুসলমানও রমজানকে ঘটা করে স্বাগত জানায়।

সভ্যতা সংস্কৃতি

ইতালিতে ইসলাম নবাগত কোনো ধর্ম নয়। বরং ইতালির ভাগ্যোন্নায়নের অনেক কিছু হয়েছে মুসলিমদের নেতৃত্বে। ইসলামের সোনালি যুগে ইতালির ‘সিসিলি’ দ্বীপপুঞ্জ মুসলিম শাসনাধীন ছিল। এখানেই জন্মগ্রহণ করেন বিখ্যাত মুসলিম কবি ও দার্শনিক ইবনে হামাদিস সিসিলি। ইতালির সমাজ আরব সভ্যতা ও সংস্কৃতি দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত। বিশেষত পশ্চিম ইতালির যেসব দ্বীপ আরব রাষ্ট্রগুলোর নিকটবর্তী, সেখানে আরব রীতিনীতি ও জীবনাচরণের ছাপ পাওয়া যায়। বর্তমানে স্থানীয় ও অভিবাসী মিলে ইতালিতে প্রায় ১৫ লাখ মুসলিম বসবাস করে। ইতালিতে ছোট-বড় ৪৫০টি মসজিদ রয়েছে।

মুসলিম রেস্তোঁরায় ইফতার-সেহরি

রমজান মাসকে ইতালির মুসলিমরা ধর্মচর্চা ও ইবাদতের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। এ সময় তারা মুসলিম দেশে তৈরি পণ্য ও খাবার গ্রহণ করে। শহরের মুসলিম হোটেল ও রেস্তোঁরায় ইফতার ও সেহরি করে। ইফতারিতে তারা বার্গার জাতীয় খাদ্য, নানাবিধ ফল (যেমন মাল্টা, আপেল, আঙ্গুর, বিভিন্ন ফলের রস) খায়। সেহরিতে বার্গার ও বার্গার জাতীয় খাদ্য বেশি পছন্দ করে থাকে। রমজান মাসে ইতালির মুসলিমরা আরবীয় খাবার সংগ্রহের চেষ্টা করে; যা মুসলমানদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। রমজান মাসে আরব দেশ থেকে আমদানি করা প্রচুর খাবার ইতালিতে পাওয়া যায়। যার উল্লেখযোগ্য অংশ যায় উপহার হিসেবে। ইতালির মুসলিম কমিউনিটিগুলো রমজানে ইসলামি বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করে। সেখানে সাধারণত আরব আলেমদেরকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়।

পরিবার নিয়ে মসজিদে ইফতার

পরিবার নিয়ে মসজিদে ইফতার করে অভিবাসীরা। রমজান মাসে ইতালির মুসলিম অধিবাসী এবং বিভিন্ন দেশের মুসলিম অভিবাসীরা পরস্পরের কাছে আসার সুযোগ লাভ করে। সাধারণত তারা সবাই সপরিবারে মসজিদে ইফতারি করে। ইফতার অনুষ্ঠানে অভিবাসীরা নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করে নিয়ে আসে। মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করে ঘরে ফেরে। রমজান মাসে ইতালীয় মুসলিমরা দু’হাত খুলে দান করেন। তারা অনুন্নত ও দুর্দশাগ্রস্থ মুসলিম অঞ্চলের জন্য দান করতে বেশি পছন্দ করেন। যেমন, ফিলিস্তিন ও আফ্রিকার দরিদ্র্য অঞ্চলের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ দান করেন।

ভেনিসে বাংলাদেশিদের ইফতার বাজার

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ইতালির ভেনিসের কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইফতারি পণ্যের জমজমাট বাজার গড়ে উঠেছে। ইতালির এই বন্দরনগরীতে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। বিশেষ করে, ভেনিসের মেসত্রে ও মারঘেরাতে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশির বসবাস। এখানেই গড়ে উঠেছে বহু বাংলাদেশি মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এর কয়েকটি দোকান ইফতারের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব দোকানে ছোলা বুট, পিয়াজু, বেগুনি, বুন্দিয়া, আলুর ডিমচপ, হালিম, শরবত, লাচ্ছি, জিলাপিসহ নানা রকম খাবার তৈরি হচ্ছে। প্রবাসীরা এসব দোকান থেকে পণ্য কেনার পাশাপাশি পরিবার নিয়েও ইফতার করতে আসেন। মেসত্রের আল মদিনা বাংলা মিষ্টিঘর ও দেশ ফাস্টফুড এবং মারঘেরার বাংলা মিষ্টিঘরসহ বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁয় বসে ইফতার সেরে নেয়।

এমএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।