আরশে আজিম: মহান আল্লাহর অতুলনীয় কুদরত

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:২১ পিএম, ১৯ মে ২০২৩

ফখরুল ইসলাম নোমানী

সমগ্র জাহানের প্রতিপালক ও সংরক্ষক মহান আল্লাহ তাআলা। তিনি সপ্তাকাশের উপর অবস্থিত সুমহান আরশের উপর সমুন্নত। তাঁর ক্ষমতা অসীম ও সর্বব্যাপী। তিনি সব কিছু দেখেন ও শোনেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। তিনি আরশে আজিমে থেকেই সব কিছু সুচারুরূপে পরিচালিত করেন। মহান আল্লাহ আরশে সমাসীন; তবে তাঁর ক্ষমতা সর্বত্র বিদ্যমান।

বিজ্ঞাপন

মহান আল্লাহ আরশের অধিপতি। এই নিখিল জাহান সৃষ্টি করার পর তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেননি বরং গোটা সৃষ্টিজগৎ তিনি নিজেই পরিচালনা করছেন। এই সীমাহীন রাজ্যের তিনি রাজাধিরাজ।

তিনি শুধু স্রষ্টাই নন তিনি শাসকও! যিনি কোরআনুল কারিম নাজিল করেছেন সেই মহান আল্লাহ আরশের ওপর সমুন্নত। কিন্তু তাঁর ধরন সম্পর্কে কোনো মানুষ জানে না বরং আমরা এ বিষয়ে পূর্ববর্তী নেককার মনীষীদের মতো ঈমান আনবো। সে ক্ষেত্রে আমরা কোনো বিকৃতি বা ব্যাখ্যা করব না। কোনো উপমা, উদাহরণ কিংবা আল্লাহর কোনো গুণকে বাতিল করব না, বরং আল্লাহর আরশে সমুন্নত হওয়ার বিষয়টি তাঁর শান, বড়ত্ব ও মহত্ত্ব অনুযায়ী হয়েছে। কোনো স্থান ও অবস্থার সঙ্গে সেটি সীমাবদ্ধ নয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

মহান আল্লাহর আরশে সমাসীন হওয়ার বিষয়ে প্রাচীন মুসলিম মনীষীদের আকিদা ও বিশ্বাস সম্পর্কে ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহির একটি কথা থেকে ধারণা পাওয়া যায়।  তিনি বলেছেন-

‘আল্লাহ তাআলার আরশে সমাসীন হওয়ার বিষয়টি (কোরআন থেকে) জানা যায় ; কিন্তু এর স্বরূপ বা অবস্থা অজানা। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা বিদআত। আর এ বিষয়ে ঈমান রাখা ওয়াজিব।’

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জগৎগুলোর সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা। তিনি তাঁর একান্ত পরিকল্পনা ও অনুগ্রহে জগতের সবকিছুই সৃষ্টি করেন। স্বীয় পরিকল্পনায় সাজিয়েছেন জগতের সবকিছু। তিনি এতই ক্ষমতাবান যে কোনো কিছু সৃষ্টির নিমিত্তে তাঁর ইচ্ছাই যথেষ্ট। যখনই তিনি সৃষ্টি করতে চান তখন শুধু ‘কুন’ বা ‘হও’ নামক শব্দের উচ্চারণ করেন আর তখন তা তৎক্ষণাৎই হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন-

اِنَّمَاۤ اَمۡرُهٗۤ اِذَاۤ اَرَادَ شَیۡئًا اَنۡ یَّقُوۡلَ لَهٗ کُنۡ فَیَکُوۡنُ

‘তাঁর ব্যাপার তো এই যে, তিনি যখন কোনো কিছু করতে ইচ্ছা করেন তখন তিনি কেবল বলেন ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়।’ (সুরা ইয়াসিন: আয়াত ৮২)

বিজ্ঞাপন

কী অসীম ক্ষমতা তাঁর! অতুলনীয় তাঁর বাহাদুরি। কত সুন্দর সৃষ্টির কারিশমা। কী দারুণ সৃষ্টির রূপায়ণ। এসবই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। মহান প্রভুর ক্ষমতার এ মসনদ হলো ‘আরশে আজিম’।

আরশ আরবি শব্দ। যার অর্থ- আল্লাহর সিংহাসন, মান-মর্যাদা, মঞ্চ ইত্যাদি। প্রচলিত ধারণা মতে আরশ বলতে আল্লাহর আসনকে বুঝানো হয়ে থাকে। আরশ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে-

اَلَّذِیۡنَ یَحۡمِلُوۡنَ الۡعَرۡشَ وَ مَنۡ حَوۡلَهٗ یُسَبِّحُوۡنَ بِحَمۡدِ رَبِّهِمۡ وَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِهٖ وَ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ لِلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۚ رَبَّنَا وَسِعۡتَ کُلَّ شَیۡءٍ رَّحۡمَۃً وَّ عِلۡمًا فَاغۡفِرۡ لِلَّذِیۡنَ تَابُوۡا وَ اتَّبَعُوۡا سَبِیۡلَکَ وَ قِهِمۡ عَذَابَ الۡجَحِیۡمِ

বিজ্ঞাপন

‘যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারপাশ ঘিরে আছে তারা তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা প্রশংসার সঙ্গে ঘোষণা করে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং বিশ্বাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী; অতএব যারা তওবা করে ও তোমার পথ অবলম্বন করে, তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা কর।’ (সুরা মুমিন: আয়াত ৭)

আরশে আজিম মহান আল্লাহর অতুলনীয় এক কুদরত। এটি মাখলুকাতের সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুকও বটে। পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে আল্লাহপাক আরশ সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন-

اِنَّ رَبَّکُمُ اللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۟ یُغۡشِی الَّیۡلَ النَّهَارَ یَطۡلُبُهٗ حَثِیۡثًا ۙ وَّ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ وَ النُّجُوۡمَ مُسَخَّرٰتٍۭ بِاَمۡرِهٖ ؕ اَلَا لَهُ الۡخَلۡقُ وَ الۡاَمۡرُ ؕ تَبٰرَکَ اللّٰهُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ

বিজ্ঞাপন

‘এ মর্মে তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি ছয় দিনে সমগ্র আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এরপর ‘আরশে’ সমুন্নত হয়েছেন। দিনকে তিনি রাতের পর্দা দিয়ে ঢেকে দেন তারা একে অন্যকে দ্রূতগতিতে অনুসরণ করে এবং সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি তাঁরই আজ্ঞাবহ। জেনে রেখ, সৃষ্টি তাঁর, হুকুমও (চলবে) তাঁর, বরকতময় আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতিপালক।’ (সুরা আল-আরাফ: আয়াত ৫৪)

তিনি আরও বলেন-

اِنَّ رَبَّکُمُ اللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ یُدَبِّرُ الۡاَمۡرَ ؕ مَا مِنۡ شَفِیۡعٍ اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ اِذۡنِهٖ ؕ ذٰلِکُمُ اللّٰهُ رَبُّکُمۡ فَاعۡبُدُوۡهُ ؕ اَفَلَا تَذَکَّرُوۡنَ

বিজ্ঞাপন

‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হলেন আল্লাহ; যিনি সমগ্র আকাশ আর পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এরপর তিনি আরশে সমুন্নত হয়েছেন। তিনি যাবতীয় বিষয় পরিচালনা করেন। তাঁর অনুমতি প্রাপ্তি ছাড়া সুপারিশ করার কেউ নেই। তিনিই হলেন আল্লাহ; তোমাদের প্রতিপালক। কাজেই তোমরা তাঁরই ইবাদত করো; তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না?’ (সুরা ইউনুস: আয়াত ০৩)

তিনি আরও বলেন-

اَللّٰهُ الَّذِیۡ رَفَعَ السَّمٰوٰتِ بِغَیۡرِ عَمَدٍ تَرَوۡنَهَا ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ وَ سَخَّرَ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ ؕ کُلٌّ یَّجۡرِیۡ لِاَجَلٍ مُّسَمًّی ؕ یُدَبِّرُ الۡاَمۡرَ یُفَصِّلُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّکُمۡ بِلِقَآءِ رَبِّکُمۡ تُوۡقِنُوۡنَ

‘আল্লাহই স্তম্ভ ছাড়া সমগ্র আকাশকে ঊর্ধ্বে তুলে রেখেছেন যা তোমরা দেখছ এরপর তিনি আরশে সমুন্নত হয়েছেন তিনিই সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়মের বন্ধনে বশীভূত রেখেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গতিশীল আছে। যাবতীয় বিষয় তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি নিদর্শনগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী হতে পার।’ (সুরা আর-রাদ: আয়াত ০২)

উল্লেখিত আয়াতগুলো পর্যালোচনা করলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অসীম ক্ষমতা ও ক্ষমতার মসনদ আরশের সুস্পষ্ট বর্ণনা প্রতিভাত হয়।

আরশ মহান আল্লাহর মসনদ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন-

اَلرَّحۡمٰنُ عَلَی الۡعَرۡشِ اسۡتَوٰی

‘দয়াময় আরশে সমাসীন।’ (সুরা ত্বহা: আয়াত ০৫)

সৃষ্টিজগতের সর্বোচ্চ মর্যাদাকর স্থানে তিনি আরশকে স্থাপন করেছেন। আরশের নিচে জান্নাত বিদ্যমান আর তার বরাবর নিচে ফেরেশতাদের ইবাদত তথা তাওয়াফের জন্য নির্মিত ‘বায়তুল মামুর’ নামক স্থান। নিষ্পাপ নিষ্কলুষ ফেরেশতাদের একমাত্র তাওয়াফভূমি বায়তুল মামুরের ঠিক নিচ বরাবর ‘কাবাতুল মুশাররাফা’ অবস্থিত। হাদিসে পাকে আরশের অবস্থান সম্পর্কে সুন্দর ও সুস্পষ্ট বর্ণনা এভাবে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘অবশ্যই জান্নাতে একশটি দরজা (মর্যাদা) রয়েছে; যা আল্লাহ তাঁর পথে জিহাদকারীদের জন্য প্রস্তূত রেখেছেন ; দুটি দরজার মধ্যবর্তী ব্যবধান আসমান ও জমিনের মতো। সুতরাং তোমরা যখন আল্লাহর কাছে জান্নাত চাও তখন জান্নাতুল ফিরদাউস চাইবে। কারণ তা হলো জান্নাতের মধ্যভাগ ও জান্নাতের উপরিভাগ। তার উপরে রয়েছে রহমানের আরশ আর সেখান থেকেই প্রবাহিত হয় জান্নাতের নদীগুলো।’ (বুখারি ২৭৯০)

আরশে আজিম বহন করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন একদল ফেরেশতা নিয়োজিত করে রেখেছেন। তিনি তাদেরকে আরশ বহন করার উপযোগী ধৈর্য, শক্তিসামর্থ্য, যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছেন। তাদের প্রকৃত আকৃতি, প্রকৃতি ও সংখ্যা কত? তা কেবল তিনিই জানেন। আল্লাহপাক এসব ফেরেশতাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তারা তাদের অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে তামিল করে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে কোরআন মাজিদে বর্ণিত হয়েছে-

اَلَّذِیۡنَ یَحۡمِلُوۡنَ الۡعَرۡشَ وَ مَنۡ حَوۡلَهٗ یُسَبِّحُوۡنَ بِحَمۡدِ رَبِّهِمۡ وَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِهٖ وَ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ لِلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۚ رَبَّنَا وَسِعۡتَ کُلَّ شَیۡءٍ رَّحۡمَۃً وَّ عِلۡمًا فَاغۡفِرۡ لِلَّذِیۡنَ تَابُوۡا وَ اتَّبَعُوۡا سَبِیۡلَکَ وَ قِهِمۡ عَذَابَ الۡجَحِیۡمِ

‘যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চার পাশে আছে তারা তাদের পালনকর্তার সূপ্রশংসা পবিত্রতা বর্ণনা করে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে হে আমাদের পালনকর্তা আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব যারা তাওবাহ করে এবং আপনার পথে চলে তাদের ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন।’ (সুরা মুমিন: আয়াত ০৭)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

کُلُّ مَنۡ عَلَیۡهَا فَانٍ  وَّ یَبۡقٰی وَجۡهُ رَبِّکَ ذُو الۡجَلٰلِ وَ الۡاِکۡرَامِ

‘ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল। মহাপ্রলয়ের দিনে পৃথিবীর সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। একমাত্র আপনার মহিমায় ও মহানুভব পালনকর্তার সত্তা ছাড়া।’ (সূরা আর-রহমান: আয়াত ২৬-২৭)

মহাপ্রলয় তথা কেয়ামতের মুহূর্তে আল্লাহর আরশকে এমন আটজন ফেরেশতা বহন করবেন যাদের প্রকৃত আকৃতি, শক্তি সামর্থ্য আল্লাহই জানেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন-

وَّ الۡمَلَکُ عَلٰۤی اَرۡجَآئِهَا ؕ وَ یَحۡمِلُ عَرۡشَ رَبِّکَ فَوۡقَهُمۡ یَوۡمَئِذٍ ثَمٰنِیَۃٌ

‘ফেরেশতারা আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আটজন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের ঊর্ধ্বে বহন করবে।’ (সুরা আল-হাককাহ: আয়াত ১৭)

আরশের মাঝে রয়েছে আল্লাহপাকের মসনদ তথা কুরসি। কুরসি আরশের চেয়ে তুলনামূলক ছোট। এ কুরসিতে আল্লাহপাক উপবিষ্ট হন। তাঁর কুরসির পরিসীমা কোরআন মাজিদে এ মর্মে বর্ণিত রয়েছে-

وَسِعَ کُرۡسِیُّهُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ ۚ وَ لَا یَـُٔوۡدُهٗ حِفۡظُهُمَا ۚ وَ هُوَ الۡعَلِیُّ الۡعَظِیۡمُ

‘... তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।’ (সুরা আল-বাকারাহ: আয়াত ২৫৫)

পৃথিবীতে সূর্য প্রতিনিয়ত উদিত ও অস্তগামী হয়। প্রতিদিনের সূর্যটি আরশে আজিমের নিচে পৌঁছে মহান আল্লাহ পাকের প্রতি সেজদা করে। সূর্যের সেজদার স্থান আরশের নিচে। এ বিষয়ে হাদিসের সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে-

হজরত আবু জার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আবু জার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, তুমি কি জান, সূর্য কোথায় যায় ? আমি বললাম আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন তা যেতে যেতে আরশের নিচে গিয়ে সেজদায় পড়ে যায়। এরপর সে আবার উদিত হওয়ার অনুমতি চায় এবং তাকে অনুমতি দেওয়া হয়। আর শিগগিরই এমন সময় আসবে যে সেজদা করবে কিন্তু তা কবুল করা হবে না এবং সে অনুমতি চাইবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেওয়া হবে না। তাকে বলা হবে যে পথ দিয়ে এলে ওই পথেই ফিরে যাও। তখন সে পশ্চিম দিক থেকে উদিত হয় এটার মর্ম হলো মহান আল্লাহর বাণী- ‘আর সূর্য নিজ গন্তব্যে (অথবা) কক্ষ পথে চলতে থাকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। আরশে আজিম অতি মূল্যবান স্থান। যে স্থান কেবল আল্লাহর জন্যই। মুহাক্কিক ওলামারা বলেন আরশ হলো সৃষ্টিজগতের ছাদস্বরূপ। আরশের নিচেই সবকিছু; কেবল আল্লাহপাকই আরশের উপরে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। মহা ক্ষমতাধর ও প্রতাপশালী আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আরশের ছায়ার নিচে তাঁর কিছু প্রিয় বান্দা কেয়ামতের দিন সাময়িক অবস্থানের সুযোগ পাবে। তারা কারা ? তাদের পরিচয় স্পষ্ট করে দিয়েছে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ নিঃসৃত বাণী-

হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে সে দিন তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন; যে দিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। (তারা হলো)-

১. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা)

২. সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ তাআলার ইবাদতে অতিবাহিত হয়

৩. সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে)

৪. সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে ; যারা এই ভালোবাসার ওপর মিলিত হয় এবং এই ভালোবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়।

৫. সেই ব্যক্তি (যুবক) যাকে কোনো কুলকামিনী সুন্দরী (ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে) আহ্বান করে কিন্তু সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি।

৬. সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপনে ; এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে তা তার বাম হাত পর্যন্তও জানতে পারে না ।

৭. আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।

মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর প্রিয় বান্দাদের মধ্যে শামিল করে কেয়ামতের দিনে তাঁর আরশের সুশীতল ছায়ায় অবস্থান করার সৌভাগ্য পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

লেখক: ইসলামি গবেষক ও চিন্তক।

এমএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।