মৃত্যুর আগে যে ৭ প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি

মৃত্যু আসবেই। এটা এক অবধারিত বিষয়। কেউ তা থেকে পলায়ন করতে পারবে না। এমনকি কার মৃত্যু কখন হবে, কোথায় হবে এ কথাও কেউ জানে না। মৃত্যুর বিষয়টি শুধু আল্লাহই জানেন। তাইতো তিনি বলেন-
وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ ۚ إِنَّ اللَّـهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
'কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।' (সুরা লোকমান: আয়াত ৩৪)
এ কারণেই মুমিন মুসলমানের উচিত, মৃত্যুর আগে ৭টি প্রস্তুতি গ্রহণ করা। যাতে মৃত্যুর সময় কিংবা মৃত্যু পরবর্তী সময়ে কাজে লাগে। সেগুলো হলো-
১. ঈমানকে বিশুদ্ধ করা
مَنۡ عَمِلَ صَالِحًا مِّنۡ ذَکَرٍ اَوۡ اُنۡثٰی وَ هُوَ مُؤۡمِنٌ فَلَنُحۡیِیَنَّهٗ حَیٰوۃً طَیِّبَۃً ۚ وَ لَنَجۡزِیَنَّهُمۡ اَجۡرَهُمۡ بِاَحۡسَنِ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ
‘যদি কোনো পুরুষ বা নারী ভালো কাজ করে এবং সে ঈমানদার হয়, আমি অবশ্যই তাদেরকে (দুনিয়াতে) পবিত্র জীবন দিয়ে জীবিত রাখবো এবং (আখেরাতে) তাদের ভালো কাজের সর্বোত্তম পুরষ্কার দেব।’ (সুরা সুরা নহল: আয়াত ৯৭)
২. নেক আমল দিয়ে জীবনকে সাজানো
মুমিন বান্দা যে কাজে নিজের জীবন অতিবাহিত করবে, সে কাজের ওপরই তার মৃত্যু হবে। যদি কেউ কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন-যাপন করে তবে তার মৃত্যুও কোরআন-সুন্নাহর আলোকে হবে। এ কারণেই দুনিয়ার জীবনে কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী নেক আমলে জীবন সাজানো জরুরি।
৩. তওবা করতে থাকা
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি একই মজলিশে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইসতেগফার একশত বার গণনা করতাম। তিনি বলতেন-
رَبِّ اغْفِرْلِىْ وَتُبْ عَلَىَّ اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُوْرُ
উচ্চারণ: ‘রাব্বিগফিরলি, ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত তাওয়াবুল গাফুর।’
অর্থ: ‘হে পরওয়াদেগার! তুমি আমাকে মাফ কর এবং আমার তাওবা কবুল কর। কেননা তুমি হলে তাওবা কবুলকারী এবং ক্ষমাকারী। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)
৪. বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করা
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবচেয়ে বুদ্ধিমান লোক কে ? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যস্ত থাকে। (ইবনে মাজাহ)
৫. অসিয়ত লিখে রাখা
মৃত্যুর আগে নিজের সম্পদের সুষম বণ্টনের অসিয়ত লিখে রেখে যাওয়া জরুরি। যাতে তার মৃত্যুর পর ওয়ারিশ ও পাড়া-প্রতিবেশিরা তার রেখে যাওয়া সম্পদ তারই লিখে রেখে যাওয়া অসিয়ত অনুযায়ী বণ্টন করতে পারে।
৬. ঈমানের ওপর অটল থাকার দোয়া করা
ঈমানের উপর অটল থাকতে নির্জনে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। যাতে দুনিয়ার জীবনের সার্বিক কল্যাণ ও পরকালের অন্তিম মুহূর্তে ঈমান ও প্রশান্তির মৃত্যু নসিব হয়। তাই চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা। বেশি বেশি এ দোয়াগুলো করা-
> اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
উচ্চারণ: ‘ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম। সিরাতাল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম। গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়া লাদ্দাল্লিন।’
অর্থ: ‘আমাদের সহজ সরল পথের হেদায়েত দিন। যে পথে চলা লোকদের ওপর আপনি নেয়ামত দান করেছেন। অভিশপ্ত ও গোমরাহির পথ থেকে বিরত রাখেন।’
> رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানা আফরিগ আলাইনা সাবরাও ওয়া তাওয়াফ্ফানা মুসলিমিন।’
অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের ধৈর্যদান করুন এবং মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দান করুন।’
> رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা লা তুযেগ কুলুবানা বাদা ইজ হাদাইতানা ওয়া হাবলানা মিল্লাদুনকা রাহমাতান ইন্নাকা আংতাল ওয়াহহাব।’
৭. এই কাজগুলো বেশি করা-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনের মৃত্যুর পরও তার যেসব নেক আমল ও নেক কাজের সওয়াব তার কাছে সবসময় পৌঁছতে থাকবে, তাহলো-
১. ইলম বা জ্ঞান: যা সে শিখেছে এবং প্রচার করেছে;
২. নেক সন্তান: যাকে সে দুনিয়ায় রেখে গেছে;
৩. কোরআন: যা সে উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেছে;
৪. মাসজিদ: যা সে নির্মাণ করে গেছে;
৫. মুসাফিরখানা: যা সে পথিক মুসাফিরদের জন্য নির্মাণ করে গেছে;
৬. কূপ বা ঝর্ণা: যা সে খনন করে গেছে মানুষের পানি ব্যবহার করার জন্য এবং
৭. দান-খয়রাত: যা সুস্থ ও জীবিতাবস্থায় তার ধন- সম্পদ থেকে দান করে গেছে।
মৃত্যুর পরও এসব নেক কাজের সাওয়াব তার কাছে পৌঁছতে থাকবে।’ (ইবনু মাজাহ, ইবনু খুজায়মা, মিশকাত)
এ ছাড়াও জীবিত অবস্থায় মৃতব্যক্তিদের জন্য দান-সাদকা করা, হজ করা, ওমরা করা, রোজা রাখা ও কোরবানি করা আবশ্যক ইবাদত-বন্দেগি। তাই সব সময় মৃত্যুর কথা স্মরণ করা। এমনকি কোনো ব্যক্তি যদি বুঝতে পারে যে, তার মৃত্যু আসন্ন তবে তাদের উচিত আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত করা। পরকালের অন্ততকালের কথা স্মরণ করে নিজেকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করার প্রস্তুতি নেওয়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব মুমিন বান্দাকে মৃত্যুর আগে উল্লেখিত অসিয়তগুলো যথাযথভাবে মেনে চলার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ পাওয়ার তাওফিক দান করুন।
আমিন।
এমএমএস/জেআইএম