যেভাবে নবুয়ত লাভ করেছিলেন নবি মুসা (আ.)

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ০৭:১৮ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

মুসা (আ.) আল্লাহর একজন মর্যাদাবান নবি ও রাসুল। কোরআনে বহু জায়গায় আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা তার এই রাসুলের নাম উল্লেখ করেছেন, তার দীন প্রচার ও সংগ্রামের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি আল্লাহর নবি ইবরাহিম, ইসহাক ও ইয়াকুবের (আ.) বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বংশধারা হলো, মুসা ইবনে ইমরান ইবনে কাহেছ ইবনে আজের ইবনে লাভি ইবনে ইয়াকুব ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহিম। অর্থাৎ মুসা ছিলেন নবি ইবরাহিমের (আ.) ৮ম অধঃস্তন পুরুষ।

মুসা (আ.) মিশরে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের আগে ফেরাউনের কাছে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে, বনি ইসরাইলে জন্মগ্রহণকারী এক ব্যক্তির হাতে তার রাজত্বের অবসান হবে। এ কারণে ফেরাউন বনি ইসরাইলের নবজাতক ছেলে শিশুদের হত্যা করে ফেলতো। কোরআনে ফেরাউনের এই ঘোরতর জুলুমের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, স্মরণ কর, আমি যখন তোমাদের ফেরাউন গোষ্ঠী থেকে মুক্তি দিয়েছিলাম, যারা তোমাদের ছেলে সন্তানদের হত্যা করে আর মেয়েদের জীবিত রেখে তোমাদের মর্মান্তিক যাতনা দিত আর এতে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ছিল মহাপরীক্ষা। (সুরা বাকারা: ৪৯)

নবি মুসার (আ.) জন্মের পর আল্লাহর নির্দেশে তার মা তাকে নদীতে ভাসিয়ে দেন। আল্লাহর ইচ্ছায় লাওয়ারিশ শিশু হিসেবে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ফেরাউনের রাজপ্রাসাদে। সেখানেই তিনি প্রতিপালিত হতে থাকেন।

যৌবনে পদার্পণের পর মিশরের এক ব্যক্তি ভুলক্রমে তার হাতে নিহত হলে তিনি মাদায়েনে চলে যান। প্রায় দশ বছর পর তিনি যখন সস্ত্রীক মাদায়েন থেকে ফিরছিলেন তখন পবিত্র তুয়া উপত্যকায় তার ওপর ওহি নজিল হয়। তাকে নবুয়ত ও মুজিজা দান করা হয় এবং তাকে নির্দেশ দেওয়া হয় আল্লাহর দাওয়াত নিয়ে ফেরাউনের কাছে যেতে।

কোরআনে ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে, আল্লাহ তাআলা বলেন, আপনার কাছে মুসার বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? তিনি যখন আগুন দেখলেন, তখন পরিবারকে বললেন, তোমরা এখানে অবস্থান কর আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবত আমি তা থেকে তোমাদের কাছে কিছু আগুন জ্বালিয়ে আনতে পারব অথবা আগুনের কাছে পৌঁছে পথের সন্ধান পাব। যখন তিনি আগুনের কাছে পৌঁছলেন, তখন আওয়াজ আসল হে মুসা, আমিই তোমার রব, তুমি জুতা খুলে ফেল, তুমি পবিত্র উপত্যকা তুয়ায় রয়েছ। আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, যা প্রত্যাদেশ করা হচ্ছে, তা শুনতে থাক। আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামাজ কায়েম কর। কেয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি তা গোপন রাখতে চাই; যাতে প্রত্যেকেই তার কাজ অনুযায়ী ফল লাভ করে। সুতরাং যে ব্যক্তি কেয়ামতে বিশ্বাস রাখে না এবং নিজ খাহেশের অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে তা থেকে নিবৃত্ত না করে। নিবৃত্ত হলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।

(আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞাসা করলেন) হে মুসা, তোমার ডানহাতে ওটা কি? তিনি বললেন, এটা আমার লাঠি, আমি এর ওপর ভর দেই এবং এর দ্বারা আমার ছাগপালের জন্য বৃক্ষপত্র ঝেড়ে ফেলি এবং এতে আমার অন্যান্য কাজও চলে। আল্লাহ বললেন, হে মুসা, তুমি ওটা নিক্ষেপ কর। অতঃপর তিনি তা নিক্ষেপ করলেন, অমনি তা সাপ হয়ে ছুটাছুটি করতে লাগল। আল্লাহ বললেন, তুমি তাকে ধর এবং ভয় করো না, আমি এখনই একে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেব। তোমার হাত বগলে রাখ, তা বের হয়ে আসবে নির্মল উজ্জ্বল হয়ে অন্য এক নিদর্শন রূপে; কোনো দোষ ছাড়াই। এটা এজন্য যে, আমি আমার বিরাট নিদর্শনাবলির কিছু তোমাকে দেখাই। ফেরাউনের নিকট যাও, সে দারুণ উদ্ধত হয়ে গেছে। (সুরা ত্বহা: ৯-২৪)

ওএফএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।