ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত আরাফাত ময়দান


প্রকাশিত: ১১:১৫ এএম, ২৪ জুলাই ২০১৬

হজ ও ওমরাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব মুসলিম আর কিছুদিনের মধ্যেই পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় যাওয়া শুরু করবে। হজের আনুষ্ঠানিকতা ইতিহাস-ঐতিহ্য সুপ্রাচীন ও এর রয়েছে সুদীর্ঘ পটভূমি। এর প্রতিটি কাজই ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত ও তাৎপর্যপূর্ণ। হজের আনুষ্ঠানিকতা সমূহের মধ্যে আরাফার ময়দানের অবস্থান হচ্ছে হজের মূলকাজ। বিভিন্ন কারণে আরাফাতের ময়দান মুসলিম উম্মাহর কাছে ঐতিহাসিক গুরুত্বের দাবি রাখে।

Arafat-Moidan-Inner

পবিত্র নগরী মক্কা থেকে ১৩-১৪ কিলোমিটার পূর্বে জাবালে রহমতের পাদদেশে অবস্থিত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দান অবস্থিত। এর দৈর্ঘ দুই কিলোমিটার এবং প্রস্থও দুই কিলোমিটার। এময়দানের তিন দিকই পাহাড় বেষ্টিত। এ ময়দানের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে মক্কা হাদাহ তায়েফ রিং রোড। এর সড়কের দক্ষিণ পাশেই আবেদি উপত্যকায় মক্কার ঐতিহাসিক উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাতের ময়দানের সীমানাও প্রায় ১ কিলোমিটার। সেখান থেকে দক্ষিণে গিয়ে মসজিদে নামিরায় আরাফাতের ময়দানের সীমানা শেষ হয়েছে।

Arafat-Moidan-Inner

আরাফাতের ময়দান জুড়ে চোখে পড়ার মতো অনেক নিম গাছ রয়েছে। কথিত আছে যে, এ নিম গাছের চারাগুলো বাংলাদেশ থেকে নিয়ে রোপন করা। যার তত্ত্ববধানে রয়েছে বাংলাদেশী শ্রমিক।

এখানেই বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলন ও ঐক্যের স্মৃতিস্তম্ভ অবস্থিত। যেখানে হাজিগণ সমবেত হয়ে এ স্তম্ভে চুম্বন এবং মোনাজাত করে থাকেন। ইহরামের কাপড়ের শুভ্র বসনে হাজিগণ আল্লাহর দরবারে জীবনের গোনাহ মাফে করে থাকেন আত্মনিবেদন।

Arafat-Moidan-Inner

সহীহ মুসলিম শরীফে হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি৮ ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আরাফাতের দিবসের চেয়ে বেশি আর কোনো দিবসে আল্লাহ মানুষকে আগুন হতে মুক্তি দেন না। এদিন তিনি নিকটবর্তী হন এবং তাঁর ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করতে থাকেন, এই মানুষগুলো কি চায়?’ (মুসলিম)

হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও হজরত হওয়া আলাইহিস সালাম জান্নাত থেকে পৃথিবীতে আসার পর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে তারা একে অপরকে খুঁজতে থাকেন। অবশেষে আল্লাহর রহমতে তাঁরা আরাফাতের ময়দানে পরস্পর মিলিত হন। এবং আল্লাহর কাছে তাদের কৃতকর্মের ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তা আল্লাহর কাছে অত্যধিক পছন্দীয় ছিল বিধায় আল্লাহ তাআলা বিশ্ব মুসলিমের জন্য আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়াকে হজের মূল রুকন হিসেবে কবুল করেন।

Arafat-Moidan-Inner

তারই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ দুনিয়ার সকল আদম সন্তান সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর হজের উদ্দেশে পবিত্র নগরী মক্কায় ছুটে আসেন। বাইতুল্লাহ তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া সাঈ’র পর নির্ধারিত তারিখেই আরাফাতের ময়দানে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সেখানে বিশ্ব মুসলিমের হিদায়াতের মূলমন্ত্র হজের খুতবা পড়া হয়। যে দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বের প্রতিটি অঙ্গনে অঙ্গনে।

Arafat-Moidan-Inner

সমগ্র মুসলিম উম্মাহ তাদের জীবনের সকল পাপমুক্ত হতে এ ঐতিহাসিক সম্মিলন প্রান্তরে কান্নাকাটি করেন। চোখের অশ্রুতে বুক ভাসান হজে আগত সকল হাজিগণ। তাদের হৃদয় ও মন দিয়ে আল্লাহ তাআলাকে উপলব্দি করার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। উদ্দেশ্য একটাই আল্লাহ তাআলা তাদের সবাইকে নিষ্পাপ মা’ছুম হিসেবে কবুল করবেন। কারণ এ স্থানেই ক্ষমা লাভ করেছিলেন আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম।

তাই আল্লাহ তাআলা আমাদের আদি পিতা হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও মা হাওয়া আলাইহিস সালামের স্মৃতি বিজড়িত এ মিলনস্থলে উপস্থিত হওয়াকে হজের মূল রুকনে পরিণত করে দিয়েছেন। যার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণের কারণে।

Arafat-Moidan-Inner

আল্লাহ তাআলা হজ ও ওমরায় যাওয়ার নিয়তকারী সকল মুসলিম উম্মাহকে সুস্থ ও সুন্দরভাবে আরাফাতের ময়দানের আনুষ্ঠানিকতা, ইবাদাত-বন্দেগি যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার জন্য কবুল করুন। আরাফাতের ময়দান হয়ে উঠুক হজ-ওমরা ও জিয়ারতকারী বিশ্ব মুসলিমের জন্য গোনাহ মাফ ও সঠিক পথের দিশা লাভের শেষ ঠিকানা।

এমএমএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।