আল্লাহ তাআলা বান্দাহকে যেভাবে স্মরণ করবেন
কুরআনুল কারিমের সুরা বাকারার ১৫২নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব তোমরা আমাকেই স্মরণ কর; আমিও তোমাদেরকেই স্মরণ করবো এবং তোমরা আমারই নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং অকৃতজ্ঞ হইও না।’
আল্লাহকে স্মরণ করার মানে হলো জিকির আজকার করা, ইবাদত-বন্দেগি করা, তার হুকুম আহকাম বাস্তবে মেনে চলা। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে কুদসিতে বর্ণনা করেছেন যে, ‘কিভাবে আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করতে হবে।
আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় বান্দার অনুগ্রহ লাভের মাধ্যম। বান্দাকে অনুগ্রহ প্রদানে আল্লাহ তাআলা কোন পদ্ধতি অনুসরণ করেন, তাও ওঠে এসেছে এ হাদিসে বর্ণনায়-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচ্য আয়াত সম্পর্কে বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে (আমার) বান্দাগণ! তোমরা আমাকে আমার ইবাদাতের মাধ্যমে স্মরণ কর। অর্থাৎ আমার ইবাদাত করতে থাক; (তাহলে) আমি মাগফেরাত দানের মাধ্যমে তোমাদেরকে স্মরণ করব। অর্থাৎ তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেব।
আরও পড়ুন-
শুকরিয়া আদায়ের সুন্নাত সিজদা
ধৈর্যধারণকারী ও নামাজীদের সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক
যারা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে, ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার করে; আল্লাহ তাআলা তাদের হয়ে যান। হাদিসে কুদসির অন্য বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘বান্দা আমাকে যেমন মনে করে আমি তার জন্য তেমনই হয়ে থাকি। আর ওই বান্দা যখন আমাকে স্মরণ করে; তখন আমি তার হয়ে যাই।’
আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগি করার বা তার হুকুম-আহকাম পালন করার সবচেয়ে বড় উপকার হলো শয়তান মানুষের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। তার থেকে দূরে সরে যায়। হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ শাকিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘প্রত্যেক মানুষের অন্তরে দুটি কক্ষ আছে। একটিতে ফেরেশতা থাকে এবং অপরটিতে শয়তান অবস্থান করে। মানুষ যখন আল্লাহর জিকির-আজকার (ইবাদত-বন্দেগি পালন তথা হুকুম-আহকাম বাস্তবায়নে) মশগুল হয়; তখন শয়তান দূরে সরে যায়।
আর যখন জিকির থেকে গাফেল হয়ে যায়, তখন শয়তান (মানুষের) অন্তরে তার ঠোঁট স্থাপন করে এবং কু-মন্ত্রণা দিতে থাকে।’
তাই কোনো মানুষেরই উচিত নয় যে, আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকারসহ তাঁর যাবতীয় বিধান যথাযথ পালন থেকে বিরত থাকা বা দূরে সরে যাওয়া।
এ কথা সব সময় মনে রাখতে হবে যে, গাফলত বা অজ্ঞতা মানুষের অন্তরকে কঠোর করে দেয়। আর আল্লাহর স্মরণই মানুষের সব গাফলত তথা অজ্ঞতা দূর করে দেয়।
আরও পড়ুন-
আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই পরিপূর্ণ অনুগ্রহ লাভের আহ্বান
কল্যাণের দিকে অগ্রসর হতে আল্লাহর আহ্বান
পরিশেষে…
দুনিয়ার জীবনে মানুষের সব গাফলত তথা অজ্ঞতা থেকে মুক্ত থাকতে আমলি জিন্দেগিতে বিজয়ী হতে প্রিয়নবির ছোট্ট একটি হাদিস তুলে ধরছি, যা হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মোফরাদ’ ব্যক্তিগণ বিজয়ী হয়ে গেছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! মোফরাদ ব্যক্তি কারা? তিনি বললেন, ‘অধিক পরিমাণে জিকিরকারী (আল্লাহর স্মরণকারী) নারী ও পুরুষ।
হাদিসে ঘোষিত ফজিলতগুলো অর্জনে আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর স্মরণ, হুকুম-আহকাম ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তাআলার নির্দেশিত পন্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি, পারিবারিক, সামাজিক ও দায়িত্বশীল জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর