চবি উপ-উপাচার্য

ওইসময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে—এটি অবান্তর

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক চবি
প্রকাশিত: ০৯:৫১ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
চবিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মো. শামীম উদ্দিন খান

যে সময় আমি দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছি, আমি জীবিত থাকবো না মৃত থাকবো সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি, সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে—এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ দেশকে আরেকটা দেশের করদরাজ্যে পরিণত করার জন্য বুদ্ধিজীবীদের ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান।

রোববার (১৪ নভেম্বর) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরে ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অধ্যাপক মো. শামীম উদ্দিন খান এ কথা বলেন।

অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন, “আমরা আজ পর্যন্ত জহির রায়হানকে খুঁজে পাইনি। যদি জহির রায়হানকে খুঁজে পাওয়া যেতো, সত্যিকার ইতিহাস আমরা পেতাম। গতকাল (শনিবার) রাতে টিভি টকশোতে দেখলাম, আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান সাহেব (জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে যোগ দেওয়া সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান) বক্তব্য রাখছেন। তাকে যখন প্রশ্ন করা হলো যে, আপনি তো বলতেন, ১৯৭১ সালে লাখ লাখ লোক শাহাদাতবরণ করেছেন। এখন আপনি এর বিপরীতে রাজনীতিতে যুক্ত হলেন, এটি কেন?’ তিনি বললেন, ‘এগুলো হচ্ছে রেটরিক (আলংকারিক) বক্তব্য। এগুলো তো সত্য নয়’।”

উপ-উপাচার্য বলেন, ‘রেটরিক বক্তব্য আমরা জাতির সামনে শুনতে চাই না। আমরা রিয়েলিটি চাই। আমরা সত্যিকারভাবে বাংলাদেশে কী ঘটেছিল ১৯৭১ সালে, সেই ঘটনায় কারা কারা শহীদ হয়েছেন, সেই তথ্য আমরা জানতে চাই। কারা কারা হত্যা করেছে, সেই তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের জানা হয়নি।’

স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়ে মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কী হয়েছিল, তা জানতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করার অনুরোধ করছি। আজ পর্যন্ত শহীদের তালিকা তৈরি হয়নি। আজ পর্যন্ত রাজাকারের তালিকা তৈরি হয়নি। শুধু আমরা বক্তব্য দিয়ে জাতিকে একের পর এক বিভ্রান্ত করেছি আর জাতিকে বিভক্ত করেছি। অনুরোধ করবো, সবাইকে এই অপপ্রচার থেকে জাতিকে নিষ্কৃতি দেন। জাতিকে একটা সঠিক দিশা দেন। বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত যতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, প্রাথমিকভাবে আমরা সবাই জানি যে কোনো একটা গোষ্ঠীর ওপর দায়ে চাপানো হয়। কোনো ব্যক্তির ওপর দায় চাপানো হয়। পরে ১৫ বছর, ২০ বছর পর দেখি যে আসলে প্রকৃত আসামি আরেকজন। এই বিষয়গুলো কেন হচ্ছে? একের পর এক ন্যারেটিভ (বয়ান) তৈরি করা হচ্ছে। একটা জাতিকে পদাবনত করার জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে।’

এর আগে, সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে কালো ব্যাজ ধারণ ও পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক ব্যক্তিরাসহ বিভিন্ন সংগঠন।

পরে সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদদের স্মরণে একটি শোকর‍্যালি বের হয়। র‍্যালিটি বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ চত্বর থেকে শুরু হয়ে চাকসু ভবন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

বেলা ১১টায় উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান।

আলোচনা সভায় শুরুতে কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠ করা হয়। জুলাই মাসে শহীদ হওয়া শিক্ষার্থীদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন ও দোয়া করা হয়।

অনুষ্ঠানে ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান।

সোহেল রানা/এসআর

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।