করোনায় ঈদ উদযাপনে গ্রামে যাওয়া যাবে কি?

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:১৯ পিএম, ১৬ মে ২০২০

মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় লকডাউন ভেঙে অঞ্চল পরিবর্তন করার ব্যাপারে হাদিসের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশা ও বিধি-নিষেধ রয়েছে। লকডাউন কিংবা মহামারির প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালনে রাজধানী, বিভাগীয় শহর কিংবা জেলা শহর থেকে গ্রামে যাওয়া যাবে কিনা? যদি কেউ ঈদ উদযাপনে শহর বা এক অঞ্চল ছেড়ে অন্য অঞ্চলে যায় তবে সেটি কি হাদিসের লঙ্ঘন হবে?

মহামারিতে লকডাউন সম্পর্কে হাদিসের নির্দেশনা
হজরত ওমর ও হজরত আবু উবায়দাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিস শোনালেন। তাহলো-
‘তোমরা যখন কোনো এলাকায় মহামারি প্লেগের বিস্তারের কথা শোন, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোনো এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে আর তোমরা সেখানে থাক, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়েও যেও না।’ (বুখারি)

আবার মহামারি আক্রান্ত অঞ্চলে প্রবেশ করতে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন এবং নিজ এলাকায় মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে মৃত্যুর ভয়ে এলাকা ছেড়ে পলায়ন করতেও নিষেধ করেছেন। হাদিসে এসেছে-
‘মহামারি হচ্ছে একটি আজাবের নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। সুতরাং তোমরা যদি কোথাও মহামারির সংবাদ শোনো তাহলে কিছুতেই সেখানে যাবে না। আর যদি তোমাদের বসবাসের শহরে মহামারি দেখা দেয় তাহলে সেখান থেকে পলায়ন করবে না।’ (মুসলিম)

এ হাদিসের আলোকেই ‘আউনুল মাবুদ’ গ্রন্থের লেখক বলেন, ‘মহামারি আক্রান্ত অঞ্চলে প্রবেশ এবং তা থেকে পলায়ন উভয়ই শরিয়তে হারাম।’ কারণ হলো-
‘মহামারি আক্রান্ত অঞ্চলে প্রবেশ করার দ্বারা আল্লাহ তাআলার ক্ষমতার সামনে নিজের সাহসিকতা প্রদর্শনী বোঝা যায়। আবার আক্রান্ত এলাকা থেকে পলায়ন করার অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহর হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা, যা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।’

ঈদ উদযাপন হাদিসের লঙ্ঘন নয়
হাদিসের আলোকে বোঝা যায় আর যদি কেউ পালানো, জীবন বাঁচানো কিংবা আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্য ছাড়া শুধু ঈদ উদযাপন উপলক্ষে শহর ছেড়ে গ্রামে বা মহামারি উপদ্রুত এক অঞ্চল ছেড়ে অন্য অঞ্চলে যায় তবে তা সরাসরি হাদিসের লঙ্ঘন হবে না।

কারণ যদি কোনো ব্যক্তি ব্যাপক মহামারি আক্রান্ত অঞ্চল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, গাজীপুর কিংবা অন্য কোনো জেলা শহর থেকে এ উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়িতে যায় যে, সে আক্রান্ত অঞ্চল ছেড়ে গ্রামে গেলে বা মহামারি আক্রান্ত স্থান ত্যাগ করলে মহামারি করোনা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে, তবে ওই ব্যক্তির গ্রামে যাওয়া, সেই অঞ্চল ত্যাগ করা কিংবা যাতায়াত অবশ্যই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষিত হাদিস লঙ্ঘনের শামিল।

একজন মুসলিমের উচিত হলো-
তিনি যে অঞ্চলে অবস্থান করেন, সে অঞ্চলে যদি মহামারি দেখা দেয়, তবে-
- সে স্থানে থেকেই সতর্কতামূলক সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
- আল্লাহ তাআলার ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস রাখা।
- ধৈর্যধারণ করা।
- নিজ নিজ অঞ্চলেই অবস্থান করা।

এমনকি মহামারি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে ওই অঞ্চল ত্যাগ করবেন না বা বের হবেন না। এটা হলো হাদিসের নির্দেশনার মূল কথা।

পক্ষান্তরে...
যদি কেউ কোনো প্রয়োজনে মহামারি আক্রান্ত অঞ্চল থেকে বাহিরের নিরাপদ কোনো স্থানে যান, যদি সেখানে কোনো কাজ থাকে বা কোনো অনুষ্ঠান থাকে। তবে প্রবীণ উলামায়ে কেরাম প্রয়োজনের আলোকে এ প্রেক্ষাপটে বাহিরে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। প্রয়োজনীয় পরিস্থিতির জন্য বাহিরে যাওয়াকে নিষিদ্ধের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করেননি।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে-
হজরত ইবনে হাজার আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফতহুল বারিতে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন-
‘যদি কেউ মহামারি উপদ্রুত এলাকা থেকে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে বাহিরে যায় আর তার মাঝে পালিয়ে যাওয়ার কোনো উদ্দেশ্য না থাকে তবে কিংবা জীবন রক্ষার তাগিদ অনুভব না করে গিয়ে থাকেন। আর তার প্রয়োজনীয়তার কারণে যান তবে তা তার জন্য বৈধ।'

বহু উলামায়ে কেরাম বিশেষ প্রয়োজনের কারণে বাহিরে যাওয়ার বৈধতা দিয়েছেন। সে আলোকে প্রয়োজনে বাহিরে গেলে উল্লেখিত হাদিসের হুকুমের বিপরীত হবে না।

তবে ঈদ উপলক্ষে স্থান ত্যাগ না করাই উত্তম...
কারণ ঈদ উদযাপন এমন কোনো কাজ নয়, যা কোনো মানুষের জরুরি তালিকাভুক্ত কোনো কাজ। যে কারণে শুধু ঈদ উদযাপনের জন্য এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে গেলে যেমন নিজের নিরাপত্তা বিঘ্ন হতে পারে তেমনি অন্যজনের নিরাপত্তাও নষ্ট হতে পারে।

সে কারণে সবার জন্য এ বিষয়টি স্থির হওয়া উচিত যে, সবার জন্য এটি কল্যাণকর যে, ঈদ উদযাপনে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে না যাওয়া। তবে ঈদ উদযাপনের উদ্দেশ্যে এক মহামারি অঞ্চল থেকে কিংবা মহামারি আক্রান্ত অঞ্চলে যাওয়া হাদিসের লঙ্ঘন কিংবা হারাম এমনটি বলা যাবে না।

উল্লেখ্য, মহামারি করোনার কারণে দেশের সরকার বা প্রশাসন যদি জনগণের কল্যাণে বৃহত্তর স্বার্থে কোনো অঞ্চলে যাতায়াত নিষিদ্ধ করে দেয় তবে তা মেনে চলা আবশ্যক।

বিশেষ সতর্কতা
কিন্তু একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে, মহামারি করোনাভাইরাস যেভাবে পৃথিবীজুড়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সে অবস্থায় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বার বার এ মর্মে তাগিদ দিচ্ছেন যে, এ পরিস্থিতিতে যে যেখানে অবস্থান করছেন, সেখানেই অবস্থান করুন। এক অঞ্চল ছেড়ে অন্য অঞ্চলে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে সব অবস্থায় সুস্থ এবং নিরাপদ রাখুন। মহামারি করোনা থেকে হেফাজত রাখুন। মহামারি করোনা মোকাবিলায় জনকল্যাণে রাষ্ট্রীয় ও হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।