যে কারণে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন এসপি বাবুল আক্তার


প্রকাশিত: ০৩:৫৮ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

একের পর এক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, অস্ত্র উদ্ধার ও জঙ্গি আস্তানা উচ্ছেদ করে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছিলেন পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। হয়েছিলেন পুলিশ বিভাগে সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অসহায়-নির্যাতিতদের পরম বন্ধু। অপরাধ দমনে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ বাহিনী থেকে পেয়েছেন একাধিক পুরস্কারও। এছাড়া স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়ার পর সারাদেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন বাবুল আক্তার।
 
পরিচয়
বাবুল আক্তার ১৯৭৫ সালে ঝিনাইদহের শৈলকুপার মদনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবদুল ওয়াদুদ মিয়া ও মা শাহিদা বেগম। ২০০৪ সালে মাহমুদা আক্তারের সঙ্গে সংসারজীবন শুরু করেন তিনি। তাদের সংসারে দুই সন্তান আক্তার মাহমুদ মাহির ও আক্তার তাবাচ্ছুম তানজিলা। মাহির ক্যান্টেনমেন্ট পাবলিক স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

বাবুল আক্তারের সাহসী যত কর্মকাণ্ড
২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফূলী থানার খোয়াজনগর এলাকায় জেএমবির আস্তানার সন্ধান পান বাবুল আক্তার। সেখান থেকে ৮টি হ্যান্ডগ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ জেএমবির সামরিক প্রধান জাবেদসহ পাঁচজনকে আটক করেন তিনি। পরদিন ৬ অক্টোবর ভোরে জাবেদকে নিয়ে পুলিশ আরেকটি অভিযানে গেলে তার সহকর্মীদের ছোড়া গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হয় জাবেদ।

২০১৩ সালে কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় গ্রেফতার করেন বেশ কয়েকেজন দুর্ধর্ষ জলদস্যুকে। এ কারণে এলাকায় জেলেরা সেই সময় মিষ্টি বিতরণও করেছিলেন। র্যা বে থাকাকালীন পুরান ঢাকা থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ হাজার জাল সনদ, সনদ তৈরির কারখানা এবং এ অপকর্মের দুই হোতাকে আটক করেন তিনি।

২০০৭ সালে স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নেন নরসিংদীতে সংঘটিত ছয় খুনের রহস্য উন্মোচনের দায়িত্ব। নরসিংদীর ভেলানগরে ওই বছরের ১৮ মে একই পরিবারের ছয় সদস্যকে খুন করে ঘরের ভেতরেই মরদেহগুলো বস্তাভর্তি করে রাখা হয়েছিল চারদিন। ঘটনা তদন্তের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি চান র্যা ব অফিসার বাবুল। অনুমতি পাওয়ার পর শুরু করেন অভিযান। পরে ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ভৈরব থেকে গ্রেফতার করেন ঘটনার মূল হোতা বীরুকে। তার সূত্র ধরে পুরো হত্যারহস্য উন্মোচন করে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন তিনি। মামলার বিচার শেষে আসামিদের ফাঁসির রায় দেন আদালত।

এছাড়া স্কুলশিক্ষিকা তানিয়া হত্যারহস্য উদ্ঘাটন, ১৪ বছরের কিশোর জাভেদকে অপহরণকারীদের হাত থেকে অক্ষত উদ্ধার ও অপহরণ রহস্য উদ্ঘাটন, গৃহকর্মী রুমাকে হত্যার পর পুড়িয়ে সব আলামত নষ্টের পরও সূত্রহীন সেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করে আসামিদের গ্রেফতার, রাউজানের বেসরকারি ব্যাংকের ভল্ট থেকে সাড়ে ৩৪ লাখ টাকা চুরির হোতা গ্রাজুয়েট চোর চক্রকে গ্রেফতার, চট্টগ্রামের ভয়ংকর ডাকাত সর্দার খলিলকে ৯ সহযোগীসহ গ্রেফতার ও মালামাল উদ্ধার, অজ্ঞান-মলমপার্টি-মোটরসাইকেল চোর চক্র গ্রেফতার, সিএনজি চোর ও গামছা পার্টি আবিষ্কার, ডাকাতির প্রস্তুতির সময় রকেট লাঞ্ছার, ছয় অস্ত্র ও বিপুল গোলাবারুদ উদ্ধার, রাউজানের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বিধান বড়ুয়ার কাছ থেকে জি-থ্রি রাইফেল উদ্ধার, চট্টগ্রামের কাদের ডাকাত ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলার ত্রাস কিলার ওসমানকে গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করেছেন বাবুল আক্তার।

কর্মজীবন
পুলিশের ২৪তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা বাবুল আক্তার ২০০৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে র্যা ব ২-এ কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি জেলা পুলিশের হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার পদেও কর্মরত ছিলেন।

পদোন্নতি পেয়ে বাবুল আক্তার দীর্ঘদিন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর বদলি হয়ে সিএমপিতে যোগ দেন। ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যোগ দিয়ে দক্ষিণ সুদান গিয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই তিনি দেশে ফিরে নিয়ম অনুযায়ী পুলিশ সদর দফতরে যোগদান করেন।

এছাড়া সিএমপির অপরাধ দমনে আলোচিত চৌকস এ পুলিশ কর্মকর্তাকে চাহিদাপত্র দিয়ে সিএমপিতে আনেন পুলিশ কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডল। এরপর ছুটি কাটিয়ে ২৬ আগস্ট সিএমপিতে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হিসেবে যোগদান করেন।

সর্বশেষ গত ৫ এপ্রিল পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে পদোন্নতি হলে সিএমপি থেকে ঢাকা পুলিশ সদর দফতরে যোগদান করতে আসেন। ঘটনা এমন হয়েছিল যে, হাটহাজারী এবং কক্সবাজার থেকে বাবুল আক্তারের বদলি ঠেকাতে রাজপথে নেমে এসেছিল জনতা।

এআর/আরএস/এবিএস

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।