সারাদেশে লাগামহীন কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ৭০ হাজার


প্রকাশিত: ০১:২৭ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

দেশের কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নিলেও কিন্ডারগার্টেন (কেজি) এখনো নীতিমালার আওতায় আনতে পারেনি সরকার। ফলে পাড়া-মহল্লার অলি-গলি, ফ্ল্যাট বাড়ি বা ছাদে ব্যাঙের ছাড়ার মতো গজিয়ে উঠছে এসব কথিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সূত্র মতে, বর্তমানে সারাদেশে এর সংখ্যা৭০ হাজারের বেশি।

জানা গেছে, মাঠ প্রশাসনের অবহেলায় সারাদেশে অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে ৭০ হাজারেরও বেশি কিন্ডারগার্টেন। এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে করণীয় নির্ধারণের জন্য পাঁচ মাস আগে সারাদেশে ৫৫৯টি টাস্কফোর্স গঠন করে মন্ত্রণালয়। তবে তাতে কাজ না হওয়ায় সংখ্যা নিরূপণে এখন তারা দ্বারস্থ হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের।

গত রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়ে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তথ্য দেয়ার নির্দেশনা দিতে অনুরোধ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এভাবেই ছয় বছর ধরে এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঘুরপাক খাচ্ছে মন্ত্রণালয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্সের তথ্য চেয়ে বার বার পত্র দেয়া হলেও তারা মন্ত্রণালয়ে কোনো তথ্য দেননি। তথ্য না পাওয়ায় কিন্ডারগার্টেনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না।

ফলে দ্রুত তথ্য পাঠানোর জন্য মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে নির্দেশ দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশের বেসরকারি প্রাথমিক (বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম) বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন যাচাই-বাছাই ও করণীয় নির্ধারণ করতে গত বছরের ১৬ আগস্ট একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এক মাসের মধ্যে টাস্কফোর্সকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ প্রেরণ করতে বলা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বার বার তাগাদা দেয়া হলেও মন্ত্রণালয়ে কোনো সুপারিশ পাঠানো হয়নি। গত ১ নভেম্বর আবারও বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের তাগিদ দেয়া হয়। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের তথ্য প্রদানের জন্য নির্দেশনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, অধিকাংশ কেজি স্কুল অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। সারাদেশে এসব স্কুলের সংখ্যা কত, স্কুলের পাঠ্যক্রম কি, সরকারি বই পড়ানো হয় কি না, শিক্ষকদের যোগ্যতা, কি প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়, তাদের বেতন-ভাতা কত, কোন কোন খাতে অর্থ আদায় করে, স্কুল প্রতিষ্ঠার অর্থের উৎস কি, আয়ের অর্থ কোথায় ব্যয় হয়, ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিবিধান মানে কি না-এসব প্রশ্নের জবাবসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের পর সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়।

দেশের ৪৮৭টি উপজেলায় একটি, ৬৪ জেলায় একটি এবং ৮ বিভাগে একটি করে মোট ৫৫৯টি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। প্রতিটি টাস্কফোর্সের সদস্য পাঁচজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে টাস্কফোর্স কমিটি উপজেলার কেজি স্কুল নিয়ে কাজ করবে। জেলা প্রশাসক জেলা শহরের ভেতরের বা উপজেলার বাইরে এবং বিভাগীয় কমিশনারদের মহানগর বা মেট্রোপলিটন এলাকার স্কুলের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হয়।

মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্র জানায়, কেজি স্কুলগুলো লাগামহীনভাবে চলছে। কোনো কোনো বেসরকারি প্রকাশকদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে শিশুর ওপরও বইয়ের অত্যাচার চালানো হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষক আছেন, যাদের ন্যূনতম যোগ্যতা নেই। নেই শিক্ষক হওয়ার প্রশিক্ষণ। অনেক স্কুলের মালিক, তার স্ত্রী ও সন্তানরা মিলে স্কুল পরিচালনা করেন। এছাড়া শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, এসব স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টিউশন ফি আদায় করেন। তবে শিক্ষকদের নামমাত্র বেতন-ভাতা দেয়া হয়। এক কথায় রমরমা শিক্ষা বাণিজ্য চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এর মাধ্যমে স্কুলগুলোর তথ্য সংগ্রহ করে আইনের আওতায় নিয়ে কথিত স্কুল বন্ধ করে দেয়া হবে।

অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকারের লক্ষ্য দেশে কোনো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের বাইরে থাকবে না। জাতীয় শিক্ষানীতির নির্দেশনাও তাই। যেহেতু এক দফায় উদ্যোগ নিয়ে সফল হওয়া যায়নি। তাই এবার সরকারের সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে প্রকৃত চিত্র তুলে আনার পাশাপাশি উপজেলা, জেলা ও বিভাগওয়ারি সুপারিশ আনার চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, তাদের সুপারিশ পেলেই নিরূপণ করবো, যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, তার আদৌ প্রয়োজনীয়তা আছে কি না। প্রয়োজন থাকলে তা কার্যকর থাকবে। আর কার্যকর প্রতিষ্ঠানকে মানসম্মত শিক্ষা দিতে হবে। অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

প্রসঙ্গত, সীমাহীন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬২ সালের স্কুল নিবন্ধন আইনের আলোকে ২০১১ সালে একটি বিধিমালা করে সরকার। কেজি স্কুলগুলো ওই বিধিমালার অধীনে নিবন্ধন করবে। কিন্তু মাত্র ৩০২টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করলেও বাকি স্কুলগুলো নিবন্ধন করা থেকে বিরত রয়েছে। অথচ কেজি স্কুলের বিভিন্ন সমিতির তথ্যমতে, সারাদেশে এ ধরনের অন্তত ৭০ হাজার স্কুল রয়েছে।

এমএইচএম/আরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।