খেলাধুলায় নারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে


প্রকাশিত: ০৭:৫৭ পিএম, ০৭ মার্চ ২০১৭

জোবেরা রহমান লিনুকে বলা হয় বাংলাদেশের টেবিল টেনিসের রানী। দুই যুগ নারীদের টেবিল টেনিসে রাজত্ব করেছেন তিনি। ১৬ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে কেবল নিজেকেই অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাননি, বাংলাদেশের নামটাও ছড়িয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। সবচেয়ে বেশি জাতীয় শিরোপা জিতে নিজের নামটি লিখিয়েছেন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। বাংলাদেশে নারীদের খেলাধুলার রোলমডেলও তিনি অনেকের কাছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশে মেয়েদের খেলাধুলার সুযোগ, সম্ভাবনা এবং প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জোবেরা রহমান লিনু সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের বিশেষ সংবাদদাতা রফিকুল ইসলাম

জাগো নিউজ : দীর্ঘদিন খেলেছেন। এখন সংগঠক। দেশে নারীদের খেলাধুলা নিয়ে কিছু বলুন।
জোবেরা রহমান লিনু : প্রথমই বলবো, গত কয়েক বছর ধরে খেলাধুলায় আমাদের মেয়েরাই ভালো করছে ছেলেদেও চেয়ে। তার অর্থ মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছেন খেলাধুলায়।

জাগো নিউজ : আপনি কি মনে করেন, খেলাধুলায় ছেলে-মেয়েরা সমান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে?
জোবেরা রহমান লিনু : না। সেটা পাচ্ছে না। এত বছর পরও ক্রীড়াঙ্গনে নারীরা অবহেলিত, বৈষম্যের শিকার। একটু খেয়াল করলে দেখবেন ছেলেদের খেলায় যে পরিমাণ প্রাইজমানি দেয়া হয়, মেয়েদের খেলায় তার চেয়ে অনেক কম।

জাগো নিউজ : তারপরও তো অনেক মেয়ে খেলাধুলায় আসছে। বৈষম্যের পরও তারা আসছেন কেন?
জোবেরা রহমান লিনু : উত্তরটা সহজ। এখন বেশিরভাগ মেয়েই আসছেন নিন্ম ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। যদি খেলাধুলা করে ৫/৬ হাজার টাকা পায় সেটাই তাদের কাছে অনেক বড়। এ অল্প পরিমাণ টাকা পরিবারকে দিতে পেরেও তারা অনেক খুশি। আবার যারা সংগঠক তারা এ সামান্য টাকা দিয়ে ভাবেন অনেক কিছু দিয়ে ফেলেছি।

জাগো নিউজ : নিন্মবিত্ত পরিবার থেকে এসেও তো অনেকে ভালো করছেন তাই না?
জোবেরা রহমান লিনু : তা করছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এত অল্প সুযোগ-সুবিধা সব মেয়েকে খেলায় টানবে না। যারা একটু সচ্ছ্বল ঘরের মেয়ে তাদের কাছে আবার এই অল্প সুযোগ-সুবিধা কিছুই নয়। তাই এক শ্রেণির নারী খেলাধুলায় ঝুঁকলেও আরেক শ্রেণি নিচ্ছে মুখ ফিরিয়ে। তারা ঘর থেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

জাগো নিউজ : সুযোগ-সুবিধায় যে বৈষম্যের কথা বলছিলেন একটু ব্যাখ্যা করবেন?
জোবেরা রহমান লিনু : এটা ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন নেই। সবাই জানেন, হাতেগোনা কিছু খেলায় মেয়েরা রেজাল্ট করলে সম্মানজনক কিছু পাচ্ছেন। কিছু খেলা আছে আবার অনেক দেয়। এ বৈষম্যটা দূর করতে হবে। ইনডিভিজ্যুয়াল গেম অনেক কঠিন। অন্যসব দেশে একটি স্বর্ণ পেলে তার জন্য কোটি কোটি টাকা পুরস্কার থাকে। আমাদের এখানে বড়জোড় এক লাখ/দেড় লাখ।

জাগো নিউজ : মেয়েদের খেলাধূলায় আর কী সমস্যা দেখছেন?
জোবেরা রহমান লিনু : আগেই বলেছি, বৈষম্য দূর করতে হবে। সব খেলাতেই পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। তাহলে অনেক মেয়েরা আসবেন। আরেকটি বিষয়, মেয়েদের খেলাধুলায় টানতে হলে তাদের একটা চাকরির নিশ্চয়তাও দিতে হবে। খেললে ভালো চাকরি পাওয়া যবে-মেয়েদের মধ্যে যখন এ বিশ্বাস জন্ম নেবে তখন সব শ্রেণি থেকেই খেলাধুলায় আসতে থাকবে।

জাগো নিউজ : আপনি তো অনেক দিন ক্রীড়াঙ্গনে। এখনকার পরিবেশ কতটা মেয়েদের জন্য উপযোগী?
জোবেরা রহমান লিনু : এখন পরিবেশ অনেক ভালো। আমি বলবো বাংলাদেশের খেলাধুলায় নারীরা দারুণ সময় পার করছেন এখন। তবে একটা পরিবর্তন চোখে পড়ছে আমার। আগে মানুষের মধ্যে অনেক সখ্যতা ছিল। এখন কমে গেছে। সেটা থাকলে পরিবেশটা আরও চমৎকার হতো।

জাগো নিউজ : আপনি বলছেন এখন বেশিরভাগ মেয়েই আসছে গ্রাম আর মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। কিন্তু এখনতো এটাও দেখা যায় অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়েরা গাড়িতে করে খেলতে আসে।
জোবেরা রহমান লিনু : তা আসে। তবে সেটা নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্য। তারা কিন্তু খেলায় লেগে থাকে না। অনেকে শখে আসে, আবার চলে যায়। এ ধরনের মেয়েদেরও খেলায় আনতে হবে।

জাগো নিউজ : এখন তো অনেক শিক্ষিত মেয়েরা বিভিন্ন খেলায় আসছে। এটা তো অবশ্যই ভালো দিক।
জোবেরা রহমান লিনু : শিক্ষিত মেয়েরা যতো বেশি খেলাধুলায় আসবে ততোই খেলার উন্নতি ঘটবে। বিদেশে আমাদের মেয়েদের নিয়ে ধারণাও বদলে যাবে।

জাগো নিউজ : নতুন প্রজন্মের নারী খেলোয়াড়দের প্রতি আপনার উপদেশ কী থাকবে?
জোবেরা রহমান লিনু : খুবই সহজেই কেউ যেন নিজেকে বড় তারকা ভাবতে শুরু না করে। তাহলে পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারবে না। অনেকে একটা অর্জনের পর মনে করে বিশাল কিছু করে ফেলেছি। এ মানসিকতা পরিহার করতে হবে। পা সব সময় মাটিতেই রাখতে হবে। সুনাম অর্জন করলে তা আপনা আপনিই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে। নিজের গুণগান নিজের গাইতে হবে না। আমার কথা তারকা হও, তারকা সেজো না।

আরআই/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।