আত্মশুদ্ধির রমজান : কী চান ভোক্তারা


প্রকাশিত: ০৬:৪৩ এএম, ০৪ এপ্রিল ২০১৭

আত্মশুদ্ধির মাস রমজান; মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র মাস। সব পাপ ও অপবিত্রতা থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং নিজের আত্মা ও হৃদয়কে সংযত রাখাই এ মাসের মূল উদ্দেশ্য।

পবিত্র এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাবকে অস্বীকার করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূ্ল্য বাড়িয়ে দেন। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকার আন্তরিক হলে সুদক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অবশ্যই রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

রমজান শুরু হতে এখনও প্রায় আট সপ্তাহ বাকি। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে সার্বিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান চালানো হয়। আত্মশুদ্ধির এ মাস নিয়ে সাধারণ মানুষের ভাবনা এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার কথাও তুলে আনা হয়।

‘আমার মনে হয়, গার্মেন্টস খাতে সবচেয়ে বেশি মানুষ জড়িত। রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পোশাক শ্রমিকরা। যেহেতু এ সময় দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়; তাই তাদের দুর্ভোগের পরিমাণও বেড়ে যায়। এ কারণে আমার অনুরোধ থাকবে, এ মাসে তাদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা। আর তা করা গেলে রাজধানীর অর্ধকোটি মানুষ উপকৃত হবে।’

তানজিমুর রহমান, মানবসম্পদ কর্মকর্তা ডিজাইন ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড (পোশাক তৈরি কারখানা), নারায়াণগঞ্জ।

‘রমজান আসার আগেই চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। চাতাল ব্যবসায়ী হিসেবে অতিরিক্ত দামের কোনো মুনাফা আমরা পাই না। যারা ফড়িয়া-মজুদদার তারাই সব সময় সুবিধা নিয়ে থাকেন। এজন্য উচিত সংশ্লিষ্টদের আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা; যাতে কেউ দাম বাড়াতে না পারে।’

‘এছাড়া ব্যবসায়ীদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। মানসিকতার পরিবর্তন হলে বাজার মনিটরিংয়ের প্রয়োজন পড়বে না। এটা যে পুণ্যের মাস, সবাইকে তা মনে রাখতে হবে।’

মো. আবুশামা, চাতাল ব্যবসায়ী, শেরপুর।

‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বড় কোনো ধর্মীয় অনু্ষ্ঠানে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রতিযোগিতার বাজারে ওই সব দেশের ব্যবসায়ীরা সুযোগসন্ধানী নন। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে সুযোগ পেলে দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে সমস্যায় পড়েন আমাদের মতো সাধারণ ভোক্তারা। তাই সরকারের উচিত চাঁদ দেখার পরে নয়, অনেক আগেই বাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয়া।’

‘এখন থেকেই সরকারের প্রস্তুতি নেয়া উচিত। এখন থেকেই নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা উচিত। পণ্যের চাহিদা অনুযায়ী কী পরিমাণ মজুদ আছে; অসাধু ব্যবসায়ীরা কোনো কারসাজি করছে কিনা- এসব বিষয়ে এখন থেকেই খেয়াল রাখা উচিত।’

ফারুক হোসেন, মার্কেটিং অফিসার (প্রাইভেট কোম্পানি), যাত্রাবাড়ী।

‘রমজান হলো পুণ্যের মাস। ব্যবসায়ীদের উচিত এ মাসে লাভ কম করে ভোক্তাদের সেবা করা। কিন্তু সব সময় দেখি রোজা এলেই দাম বেড়ে যায়। অথচ শুনি যারা এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তারা একাধিকবার হজব্রত হন। যদি রোজার সময় তারা অনৈতিকভাবে মুনাফা করেন, তাহলে তাদের হজ করে কী লাভ? সরকারের উচিত যারা অনৈতিকভাবে পণ্যের দাম বাড়ায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া।’

উম্মে কুলসুম, গৃহিনী, ঢাকা।

‘আমার মনে হয় এখন থেকেই পদক্ষেপ নেয়া উচিত। সরকার পদক্ষেপ নেয় না, তা কিন্তু নয়। তারা ব্যবস্থা নেয় কিন্তু একটু দেরি করে। একটু আরলি (আগেভাগে) পদক্ষেপ নিলে কোনো সমস্যা হয় না।’

‘আমার একটাই দাবি, রমজানে কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাই। এজন্য সরকারসহ অন্য যারা আছেন তাদের এখন থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া উচিত।’

রেজাউন্নাহার , মাস্টার্স (এইচআর), বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

‘আমাদের আয় সীমিত। দিন আনি দিন খাই। রমজান এলেই বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়ে যায়। তখন দেশ থেকে পালাতে ইচ্ছা করে।’

‘আমার দাবি, যারে আমরা ভোট দিয়া সরকার বানাইছি, তারা যেন বিষয়টি খেয়াল রাখে। মোটা চালের কেজি এখন ৪০ টাকা। আগে যেখানে ৫০০ টাকার চাল কিনলে সপ্তাহ পার হতো এখন তা হয় না। কয়েক দিন পর রমজান। তাই ভয়ও বাড়ছে। পণ্যের দাম মনে হয় আরও বাড়বে। সরকারের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন এদিকে খেয়াল রাখে।’

মোহাম্মদ জিয়া, রিকশাচালক, ঢাকা।

এমএ/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।