সামগ্রিক বিচারে কেরানীগঞ্জে ঈদ বাণিজ্য মন্দ না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:১২ এএম, ১২ জুন ২০১৭
ছবি : মাহবুব আলম

ঈদুল ফিতর সামনে রেখে কেনাবেচার ধুম পড়েছে রাজধানী ঢাকার অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে। পাঁচ শতাধিক কারাখানায় প্রায় দুই লাখ শ্রমিকের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে তৈরি হচ্ছে পাঞ্জাবি ও জিন্সপ্যান্টসহ নানা পোশাক।

কেরানীগঞ্জের গুদারাঘাট, শুভাঢ্যা, আগানগর ও জিনজিরা ইউনিয়ন জুড়ে গড়ে ওঠা কারখানার পোশাক যাচ্ছে ঢাকাসহ সারা দেশের অভিজাত মার্কেট, সুপার মার্কেট, শপিংমল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে। কেরানীগঞ্জের মার্কেটগুলোতে প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভিড় করেন সারা দেশের পাইকাররা।

কেরানীগঞ্জে তিনশ’র বেশি মার্কেট আছে। এর বাইরে দুই শতাধিক মার্কেট রয়েছে রেজিস্টার্ডবিহীন। জেলা পরিষদ মার্কেট, বাবুল ঢালি মার্কেট, আলম টাওয়ার মার্কেট, মসজিদ মার্কেট, রশিদ টাওয়ার, আগানগর টাওয়ার হচ্ছে এখানকার উল্লেখযোগ্য মার্কেট।

এখানে আছেন তিন হাজার দোকান ব্যবসায়ী। যারা দোকান মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রণাধীন। এর বাইরে আরও দুই হাজার ব্যবসায়ী আছেন। সর্বমোট এখানে দোকানের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। আর মালিক ও শ্রমিক মিলে দুই লাখ জনবল। এর বাইরে রয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অনুষঙ্গ মানুষ।

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল আজিজ বলেন, বছরের অধিকাংশ সময় কারখানায় কাজ থাকলেও মার্কেটে ব্যস্ততা থাকে না। তবে শীত ও রমজানের ঈদে এখানে কর্মচাঞ্চল্যতা ফেরে। এ সময় কাজের চাপও যেমন বেশি থাকে তেমনি মালিক-শ্রমিকের ঘুম, খাওয়া-দাওয়া কিংবা গোসলেরও ফুরসত মেলে না। মেশিনের শব্দ আর ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখরিত থাকে পুরো কেরানীগঞ্জ।

এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে জাগো নিউজের মুখোমুখি হন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল আজিজ। পাঠকের উদ্দেশ্যে এর চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছন জসীম উদ্দীন ও আদনান রহমান

জাগো নিউজ : কেরানীগঞ্জে বর্তমান ব্যবসা-বাণিজ্য কেমন চলছে?

আব্দুল আজিজ : ব্যবসা মোটামুটি ভালো। আমাদের মূল কেনাবেচা ঈদ ও শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে হয়। তবে গত ৩-৪ বছরের তুলনায় এবার ব্যবসার পরিস্থিতি খারাপ,  উৎপাদনও কম। অর্থনৈতিক কারণে অনেকে কম কেনাকাটা করছেন। শুধু কেরানীগঞ্জ নয়, খোঁজ নিয়ে দেখেছি; অনেক মার্কেটেই বেচাকেনা কম। দেশের সর্বত্রই যেন ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব যাচ্ছে। তবুও সামগ্রিক বিচারে আমাদের এখানকার ব্যবসা মন্দ না।

জাগো নিউজ : এখানে ব্যবসায়ীরা কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন কিনা?

আব্দুল আজিজ : এখানকার মানুশ অনেক শান্তিপ্রিয়। কেরানীগঞ্জে ব্যবসা করতে কারও কোনো সমস্যা হয় না। সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে আছে।

জাগো নিউজ : সম্প্রতি ঢাকার ফুটপাত থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। কেরানীগঞ্জে এর কোনো প্রভাব পড়েছে কিনা?

আব্দুল আজিজ : ঢাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা কেরানীগঞ্জ থেকে কাপড় সংগ্রহ করে বিক্রি করতো। কিন্তু ফুটপাত থেকে তাদের উচ্ছেদ করায় কেরানীগঞ্জের পাইকারদের ওপর কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে। কারণ তারা দিনে দিনে বিক্রি করে ফের কেরানীগঞ্জে এসে কাপড় কিনে নিয়ে যেত।

জাগো নিউজ : অভিযোগ আছে এখানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লোগো নকল করে শার্ট, গেঞ্জি, জিন্স, থ্রি-পিস তৈরি করা হয়। ব্যবসায়িক সংগঠন এ ব্যাপারে অবগত কিনা?

আব্দুল আজিজ : কোনো প্রতিষ্ঠান বা মালিকের বিরুদ্ধে ব্র্যান্ড নকল করার অভিযোগ এখনও পাইনি। আমরা জেনুইন ব্যবসা করি। এখানকার পোশাক সারা দেশের ৮০ ভাগ মানুষের চাহিদা মেটায়। অনেক ব্যবসায়ী ভারত থেকে জামার স্যাম্পল এনে এখানে তৈরি করেন, যেগুলোর মান খুবই ভালো। বিশেষ করে আমাদের এখানকার জিন্সপ্যান্ট সারা দেশে বিখ্যাত। আমাদের অনেক ব্যবসায়ী ভারত ও চায়না থেকে পণ্য আমদানি করে সরাসরি বিক্রি করেন।

জাগো নিউজ : এখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অবস্থা কেমন?

আব্দুল আজিজ : বিগত বছরগুলোর তুলনায় এখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে বিদেশ ফেরত অনেক শ্রমিক জমানো টাকা দিয়ে কেরানীগঞ্জের মার্কেটে দোকান নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করছেন। অবস্থা ভালো বলেই দিন দিন তাদের সংখ্যা বাড়ছে। 

জাগো নিউজ : প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে আপনাদের মূল্যায়ন জানতে চাচ্ছি?

আব্দুল আজিজ : নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা  ভ্যাট সরকারের প্রাপ্য। তবে এটা সামগ্রিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। আমরা কর দিতে প্রস্তুত। সরকার তা দিয়ে দেশের উন্নয়নের কাজে ব্যয় করবে। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে আমাদের একটাই চাওয়া, ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো যেন কম সুদ আদায় করে।

জাগো নিউজ : আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যবসাবান্ধব কিনা? চাঁদাবাজি বা অন্য কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রয়েছে কিনা?

আব্দুল আজিজ : সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশসহ জেলা পুলিশের সহযোগিতা এখানে রয়েছে। এখানে চাঁদাবাজি কিংবা ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা নেই বললেই চলে।

জাগো নিউজ : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আব্দুল আজিজ : আমাদের পক্ষ থেকে জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।

জেইউ/এআর/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।