আগ্রাবাদ কর্ণফুলী শিশুপার্ক এখন ডেটিং স্পট


প্রকাশিত: ০৭:৩০ এএম, ২১ এপ্রিল ২০১৬

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ কর্ণফুলী শিশুপার্ক এখন প্রেমিক-প্রেমিকাদের ডেটিং স্পটে পরিণত হয়েছে। তাদের উৎপাতে এই পার্কে ঠাঁই পাচ্ছে না শিশুরা। তাই এই পার্কের ভেতরে প্রবেশ করলে শিশুদের দেখা যায় না। বরং জোড়ায় জোড়ায় কপোত কপোতিদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যায়।

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা অযত্ন আর অবহেলায় নগরীর আগ্রাবাদস্থ কর্ণফুলী শিশুপার্কের এখন বেহাল দশা। রং উঠে বিবর্ণ হয়ে গেছে মূল ফটকসহ বেশিরভাগ রাইডের। দীর্ঘদিন ধরে অচল পড়ে আছে বেশ কয়েকটি রাইড।

দর্শনার্থী কমে যাওয়ায় এ পার্কটি এখন প্রেমকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কের বিভিন্ন কোণে এমনকি শিশুদের রাইডের মধ্যেই জুটিরা অন্তরঙ্গ সময় কাটায়। এতে বিব্রত হন সাধারণ দর্শনার্থীরা। এছাড়া পার্কের ভেতরের খাবারের দোকানগুলোর বিরুদ্ধে আছে বেশি দাম নেয়ার অভিযোগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কের মূল ফটকটি দীর্ঘদিন রং না করায় কালচে হয়ে গেছে। মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই বাম পাশে লেক ভিউ রেস্টুরেন্ট। যে লেকের ওপর রেস্টুরেন্টটি অবস্থিত, সে লেকটির পানি দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করার ফলে নোংরা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

লেকের মধ্যে স্থাপন করা পাথরের সাদা পদ্মফুল ও ব্যাঙগুলো ধূলা-বালিতে কালো হয়ে আছে। লেকের একপাশে দু’টি নষ্ট বোট ফেলে রাখা হয়েছে। বেশিরভাগ রাইডই পরিচর্যার অভাবে বিবর্ণ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ‘ওয়েল জার’ রাইডটি শুরু থেকেই বিকল বলে জানিয়েছেন পার্কের কর্মকর্তারা। রাইডটি এখন কপোত-কপোতিদের অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর স্থানে পরিণত হয়েছে।  

সরেজমিন পরিদর্শনকালে চার জুটিকে এ রাইডে অন্তরঙ্গ সময় কাটাতে দেখা গেছে। একই অবস্থা পাশের শাপলা ফুলের রাইডটিরও। এ রাইডটিতেও জুটিরা বসে খোশগল্পে মেতে আছে।

প্রায় সবগুলো রাইডের ভেতরেই একাধিক জুটিকে অন্তরঙ্গ সময় কাটাতে দেখা গেছে। রেসিং কার রাইডটির স্থানে কোনো কার দেখা যায়নি। থ্রিডি সিনেমা ও পার্কের পানির ফোয়ারাটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল পড়ে আছে।

ফোয়ারার নিচে ময়লা-আবর্জনায় সয়লাব। দেখে মনে হয়, দীর্ঘদিন পরিষ্কার করা হয়নি। নামে শিশুপার্ক হলেও এখানকার  কিডস জোনটি তালা মেরে রাখা হয়েছে। অনেক শিশু এ জোনে প্রবেশের বায়না ধরলেও তালা থাকায় মা-বাবা তাদের সন্তানদের আবদার রাখতে পারেন না।

বাচ্চাকে নিয়ে পার্কে আসা পাঠানটুলির গৃহিণী ইয়াসমিন আক্তার বলেন, বাচ্চাকে কোন রাইডে চড়াবো, সব রাইডেতো বড়রা বসে আছে। দেখেতো মনে হচ্ছে এটা বড়দের পার্ক। যেদিকে দেখি শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা।

কিডস জোনের ভেতর জিরাফ, হাতি দেখে বাচ্চা আবদার করছে এখানে ঢুকবে। কিন্তু এখানেও তালা দেয়া। আর পুরো পার্কের যে অবস্থা, এক কথায় জঘন্য। ভালোমতো পরিষ্কারও করা হয় না, ধোয়া-মোছাতো দূরের কথা। শিশু পার্কে যদি বড়রাই এসে বসে থাকে, তাহলে শিশুরা কোথায় যাবে? এসব ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া দরকার বলে মনে করেন আরেক গৃহিণী সুলতানা পারভিন।

Agrabad-park

পার্কের পাশের বিশাল মাঠটি অঘোষিতভাবে জুটিদের অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর স্থানে পরিণত হয়েছে। অন্তত ১০ জুটিকে এ মাঠের বিভিন্ন গাছের কোণে বসে আলাপরত দেখা যায়। অথচ মাঠের মধ্যেই দুজন আনসার সদস্য ছিল। তারা সেদিকে নজর না দিয়ে নিজেরা এক কোণে বসে গল্প করছিল।

আশপাশের দোকানিরা জানায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অবস্থা আরো খারাপ থাকে। তখন আশপাশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পার্কে এসে সময় কাটায়। আনসার সদস্যরা কিছু বলে না। তারা শুধু ঘোরাঘুরি করে। এছাড়া মাঠটির একপাশে পার্ক কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড লাগিয়েছে ‘ময়লা আবর্জনা ফেলা নিষেধ’। বাস্তবতা হচ্ছে সাইনবোর্ডের পাশেই ময়লা-আবর্জনার স্তুপ।

এদিকে, পার্কের ভেতরের খাবারের দোকানগুলো বাইরের চেয়ে বেশি দাম নেয় দর্শনার্থীদের কাছ থেকে। বাইরে যে চিপস ১৫ টাকায় পাওয়া যায়, এখানে তা বিক্রি হয় ২০ টাকায়। এক কাপ আইসক্রিম বাইরে বিক্রি হয় ১৫ টাকায়, কিন্তু এখানে কিনতে হয় ২০ টাকায়।

এভাবে প্রায় প্রত্যেকটি খাবারের দামই মূল দামের চেয়ে ৫-১০ টাকা করে বেশি নেয়া হয়। দর্শনার্থী আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। তাই বিভিন্ন রাইডের অপারেটরদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।

এসব ব্যাপারে কর্ণফুলী শিশু পার্কের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চলমান বিভিন্ন মেলার ও বর্ষবরণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে পার্কে দর্শনার্থী আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। তবে পার্কে শুধু জুটিরাই অন্তরঙ্গ সময় কাটায়, একথা ঠিক নয়। কোনো জুটি বেশি অন্তরঙ্গ হলে আনসার সদস্যরা তাদের সাবধান করে দেয়। এজন্য ১৫ জন আনসার নিয়োগ করা হয়েছে। আর ‘ওয়েল জার’ রাইডটি শুরু থেকেই বিকল ছিল। এটি চালুই করা যায়নি।

জীবন মুছা/একে/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।