যে জায়গায় আবাহনীর সাথে পেরে উঠলো না মোহামেডান!

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৭:৫১ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

মোহামেডানের চার-চারজন ব্যাটার চল্লিশের ঘরে পা রেখছেন। দু’জন (মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর আরিফুল) ফিফটি করেছেন। রনি তালুকদার ও ফরহাদ হোসেন যথাক্রমে ৪৫ ও ৪২ রানে আউট হয়েছেন।

সেখানে আবাহনীরও শুরুটা ভাল হয়নি। ৭৭ রানে ৩ টপ অর্ডার কমল (১), পারভেজ ইমন (২৮) আর জিসান আলম (৫৫) আউট হয়েছেন। মেহরুবও (১০) রান পাননি।

কিন্তু ২৪১ রান তাড়া করতে তারপরও আবাহনীকে সে অর্থে কষ্ট করতে হয়নি। কারণ দুই পরিণত ও প্রতিষ্ঠিত পারফরমার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (৬১ বলে ৭২*) এবং মোহাম্মদ মিঠুন (৭৮ বলে ৬৫) পঞ্চম উইকেটে ১৩৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে মোহামেডানের শিরোপা স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছেন। খালি চোখে এটাই ম্যাচের সংক্ষিপ্ততম ব্যবচ্ছেদ।

কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। আসল সত্য হলো, অদূরদর্শী দল গঠনই ডুবিয়েছে মোহামেডানকে। অনেক টাকা খরচ করে তামিম, মুশফিক, রিয়াদ, তাসকিন, মিরাজ এবং তাইজুলের মত নামিদামি একঝাঁক পারফরমারকে দলে টানলেও মোহামেডান ম্যানেজমেন্টের মাথাতেই ছিল না, একটা সময় গিয়ে এই তারকাদেরকে দলে পাবে না তারা।

মোহামেডান চিন্তাই করেনি যে, ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে সুপার লিগের আগে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ সফরে আসবে এবং আমাদের অন্তত ৪ থেকে ৫ জন ক্রিকেটার তখন জাতীয় দলে চলে যাবে! সুতরাং, তাদের ব্যাকআপ পারফরমার রাখতে হবে। টেস্ট দলের পারফরমারা চলে গেলে যাতে তাদের বিকল্প মোটামুটিমানের রিপ্লেসমেন্ট থাকে, সে চিন্তায় ৩ থেকে জনা চারেক মেধাবি তরুণকে দলে রাখা যেত।

যেমনটা রেখেছে আবাহনী। আকাশী-হলুদ শিবিরেরও তিনজন (নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক ও নাহিদ রানা) জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্ট দল আর পিএসএল খেলতে চলে গেছেন; কিন্তু তাদের বিকল্প হিসেবে আবাহনীতে আগে থেকেই ছিলেন মাহফুজ রাব্বি, মেহরব হোসেন, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, রিপন মন্ডলরা।

আগেই জানা, যারা টেস্ট দলে ডাক পাবেন না। যখন টেস্ট সিরিজ চলবে, তখন তাদের সার্ভিস মিলবে; কিন্তু মোহামেডান সেভাবে কোন ক্রিকেটারই বিকল্প রাখেনি। পেসার ইমনকে রেখেছে। তিনিও শ্রীলঙ্কা গেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলতে।

এছাড়া অধিনায়ক তামিম হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মাঠে বাইরে বিশ্রামে। গোড়ালির ইনজুরির চিকিৎসা করাতে তাসকিন গেছেন লন্ডন। আর তাওহিদ হৃদয়ও সাসপেন্ড। এই তিনজনের কোন বিকল্প ছিল না দলে।

সব মিলিয়ে মোহামেডান শিবিরে ছিল কোয়ালিটিফুল বিকল্প পারফরমারের অভাব। মূলতঃ প্রথম একাদশের সাতজন ক্রিকেটারের নানা কারণে ছিটকে পড়ার কোনই বিকল্প ছিল না সাদা-কালোদের সামনে।

Abahoni

তাই বাধ্য হয়ে মোস্তাফিজ, তৌফিক তুষার, ফরহাদ হোসেন আর নাবিল সামাদকে সুপার লিগ খেলানো হয়েছে। যারা খেলে ১১ জনের কোটা পূর্ণ করেছেন ঠিক; কিন্তু কাজের কাজ করতে পারেননি। সেটাই কাল হলো মোহামেডানের। অনেক টাকা খরচ করে একঝাঁক নামিদামি তারকা দলে ভেড়ানোই হলো সার। কিন্তু জায়গামত তাদের পাওয়াও গেল না।

যাবে না যে, তাও আগে থেকে জানা। এমন নয় জাতীয় দলের সিডিউল হুট করে হয়েছে। জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ সফর আর যুব দলের শ্রীলঙ্কা সফরের সূচিও আগে থেকে নির্ধারিত। এসব জেনেশুনেও মোহামেডানের কর্তারা তেমন মানের বিকল্প দলে রাখেননি।

আবাহনী তা আগেভাগে বুঝতে পেরে গত বছর ও তার আগেরবার জাতীয় যুব দলে খেলা অন্তত ৫-৬ জন তরুণকে দলে ভিড়িয়ে শেষ হাসি হাসলো । আর মোহামেডান বুদ্ধি খাটিয়ে তা করতে না পারার চরম খেসারত দিল।

এতকাল বলা হতো আবাহনী হলো কমিটির (বিসিবির শীর্ষ কর্তা নাজমুল হাসান পাপন, ইসমাইল হায়দার মল্লিকসহ আরও একঝাঁক বোর্ড পরিচালক ছিলেন আবাহনীর) দল। আম্পায়ার ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আবাহনী।

এবার কি বলবেন? এবারতো আওয়ামী লিগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আবাহনী ভাঙ্গা হাট। ক্ষমতার পালাবদলের পর শৌর্য-বীর্য, দাপট কিছুই নেই। দল বদলেও চরম ক্ষতিগ্রস্ত আকাশী-হলুদ শিবির। নাইম শেখ, লিটন দাস, বিজয়, আফিফ হোসেন ধ্রুব, জাকের আলী অনিক আর তানজিম সাকিবের মত নামী পারফরমাররা বেরিয়ে গেছেন অন্য দলে।

তারপরও আবাহনী দল গড়ায় দক্ষতার ছাপ রেখেছে। বেশ কয়েক বছর জাতীয় দলের নির্বাচক থাকা হান্নান সরকারের হাতে কোচিংয়ের দায়িত্ব দিয়ে বেশ কিছু মেধাবী তরুণকে দলে টানতেও পেরেছে আবাহনী।

সেই সাংগঠনিক দক্ষতা আর দুরদর্শিতার ফসল এবারের শিরোপা। অতিবড় আবাহনী বিরোধী আর কট্টর সমালোচকও বলতে পারবেন না, এবার কোথাও থেকে কোন ফেবার পেয়েছে আবাহনী। বরং ক্ষমতার খুব কাছে থাকা মোহামেডান কর্তারা সে সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে না পারয় পুরোপুরি ব্যর্থ।

দল সাজানো, যথাযথ বিকল্প পারফরমার দলে টানার কাজটিও যথাযথভাবে করতে পারেননি মোহামেডান কর্মকর্তারা। তাই মোহামেডান এবারো ব্যর্থ। আর আবাহনী আবারো চ্যাম্পিয়ন।

এআরবি/আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।