হাথুরুকে নিয়ে বেশি মাথা ঘামিয়েছি আমরা : ইমরান

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১১:৩৪ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

টাইগারদের ব্যর্থ মিশনের পোস্টমর্টেম করতে গিয়ে বাংলাদেশ দলের সাবেক এবং ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শেখ জামালের কোচ সারোয়ার ইমরান বলেন, ‘আমি আশা করছিলাম তিন জাতি ওয়ানডে টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হবে। প্রথম দুই ম্যাচ দেখে সে ধারণা আর জোরালো হলো। কিন্তু শ্রীলঙ্কার সাথে ফিরতি ম্যাচেই আসলে ছন্দপতন। তারপরও মনে হচ্ছিল ফাইনালে জিতে যাবে। কিন্তু ফাইনাল দেখার পরই মনে হলো টিমের অবস্থা ভালো না।’

টেস্টের পারফরমেন্স ও ফল নিয়ে তেমন মন্তব্য না করলেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিজ দলের চেহারা দেখে খুবই হতাশ ইমরান। তাই তো কণ্ঠে হতাশার সংলাপ, ‘টি টোয়েন্টির বাংলাদেশকে দেখে মনে হয়েছে ছন্নছাড়া।’

কী কারণে এই ছন্নছাড়া অবস্থা হলো? নিজের ব্যাখ্যায় সারোয়ার ইমরান যা বলেছেন, তার সারমর্ম হলো, দল নিয়ে একটু বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে। হাই পারফরমেন্স ইউনিট বা এ দল থেকে ক্রিকেটার না নিয়ে একদম অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটার দিয়ে খেলানো হয়েছে। যার কোনো প্রয়োজন ছিল না। একদমই কোয়ালিটি ক্রিকেটার বা বিকল্প না থাকলে তবু একটা কথা ছিল; কিন্তু সে রকম অবস্থা তো হয়নি। যারা বিগত দিনে খেলেছে, তাদের দিয়েই দল সাজানো যেত।’

সারোয়ার ইমরানের মতে, সবদলেই কিছু নিউক্লিয়াস থাকে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগেই দেখলাম বাংলাদেশ দলের সিংহভাগ নিউক্লিয়াস নেই। তার আগেই টিম ভাঙা শুরু হয়েছে। সাধারণত একটা দলে আট-নয়জন নিউক্লিয়াস থাকে এবং তারা প্রায় নিয়মিতই দলে থাকে। বাকি দুই বা তিনটি পরিবর্তন ঘটে প্রতিপক্ষর শক্তি-সামর্থ্য, তাদের লাইনআপ বা উইকেট ও আবহাওয়ার কারণে। আমরা জানি বাংলাদেশ দলেও ছয় থেকে সাতজন অমন ক্রিকেটার আছে। তারা খেলবেই। মাঝখানে বিশ্বকাপের সময় ও পরে আমরা দেখেছি অন্তত নয়জন প্লেয়ার কনফার্ম থাকতো। তারাই খেলতো। বাকি দুজন উইকেট আর প্রতিপক্ষ লাইনআপ দেখে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এবার বাস্তবে দেখলাম চার পরিবর্তন। যুব দল থেকে ক্রিকেটার নেয়া হলো না, কী কারণে বোধোগম্য হয়নি আমার।’

দল নির্বাচন প্রক্রিয়ার সমালোচনার পাশাপাশি সারোয়ার ইমরান তীর ছুড়ে দেন সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ইস্যুর দিকে। তার অনুভব, হাথুরুকে নিয়ে বেশি মাথা ঘামানোই হয়েছে কাল। এ সম্পর্কে সারোয়ার ইমরান বলেন, হাথুরু সাড়ে তিন বছরের কিছু বেশি সময় বাংলাদেশ দলে কোচ ছিলেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই দলের অনেক ফাঁক-ফোকর, গোমর- তার জানা। তার টেকনিক্যাল ও টেকটিক্যাল গুণও অবশ্যই আছে। তিনি তার নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। সেটাই স্বাভাবিক; কিন্তু আমার মনে হয়- আমরা হাথুরুকে নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করেছি। আমাদের ভাবনা ও কথা-বার্তার প্রায় পুরোটাই জুড়েই ছিলেন হাথুরু।’

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা হাথুরুকে অনেক বড় করে দেখেছি। গুরুত্বও দিয়ে ফেলেছি খুব। একজনকে যদি এত বড় করে দেখানো হয়, প্লেয়ার, কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে পুরো জাতি যদি হাথুরু হাথুরু করতে থাকে, তাহলে তার একটা নেতিবাচক প্রভাব তো পড়বেই।’

এ কারণেই সারোয়ার ইমারানের মত, হাথুরুকে নিয়ে বেশি চিন্তা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি তাই মনে করি। আমরা হাথুরুকে নিয়ে অনেক বেশি ভেবেছি। চিন্তা করেছি। কথাও বলেছি। কাউকে কাউকে বলতে শুনেছি, হাথুরুতো আর খেলবে না, মাঠে পারফরম করবে ক্রিকেটাররা- ওসব কথা শুনেই মনে হচ্ছিল আসলে আমরা হাথুরুকে নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা-ভাবনা করছি।’

তবে হাথুরুও যে একটা ফ্যাক্ট ছিলেন সেটাও জানালেন সারোয়ার ইমরান। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ এটা সত্য কোনো কোচ চলে যাবার পর প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে ওই দেশে আসলে ক্রিকেটারদের ওপর মনস্তাত্বিক চাপ পড়ে। তারা চিন্তায় পড়ে যান, আরে উনিতো আমার সব গোমর জানেন। আমার ভালো-মন্দ, ত্রুটি বিচ্যুতি আর দুর্বলতা সবই তার জানা। এতে করেও একটা নেতিবাচক চিন্তার উন্মেষ ঘটে। হ্যাঁ এটা সত্য হাথুরু সাড়ে তিন বছর আমাদের দলের সাথে ছিল। আমাদের প্লেয়ারদের সব খুটিনাটি বিষয় সে ভাল জানে। টেকনিক্যাল ও টেকটিক্যাল সবই তার নখদর্পনে। কাজেই কারো কারো মানসিক চাপ ছিল। কেউ কেউ হয়ত মনের দিক থেকে সে কারণে খানিক দুর্বলও ছিল।’

এরপর সারোয়ার ইমরানের মন্তব্য, ‘আবার কারো কারো অভিব্যক্তি দেখে মনে হয়েছে, একটা প্রতিশোধ স্পৃহা যেন কাজ করছে ভেতরে। কেউ কেউ রিভেঞ্জ নেবার মানসিকতায় খেলতে নেমেছে। ভাবটা এমন ছিল, যে হাথুরুকে দেখিয়ে দেবে। এর সবগুলো আসলে অতিরিক্ত হয়ে গেছে।’

হাথুরু বাংলাদেশ দল সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন। সেই জানা বিষয়গুলো থেকেই তিনি কৌশল নির্ধারণ করেছেন। আর তাতেই বাংলাদেশ ধরাশায়ী হয়েছে। ইমরান তা মানতে নারাজ। তার কথা, কেউ অতদিন একটি দলের সাথে কাজ করলে সেই দল ও ক্রিকেটারদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানারই কথা; কিন্তু আমরা ভুলে যাচ্ছি আর মাথায় আনছি না, সে বিষয়গুলো জানা থাকাই শেষ কথা নয়। আসল হলো তার প্রয়োগ ঘটানো। জানা আর প্রয়োগে অনেক তফাৎ। অল্প কদিনের অনুশীলনে বাংলাদেশের সব দুর্বলতা জেনে ক্রিকেটারদের শিখিয়ে দিয়েছেন আর তারা মাঠে চটজলদি তা আত্মস্থ করে বাংলাদেশকে পর্যদুস্ত করেছেন। বিষয়টা এমন নয়। এত জলদি কি আর এসব হয়? আমরাওতো লঙ্কানদের সম্পর্কে অনেক জানি। আজকাল কম্পিউটার অ্যানালিস্ট থাকেন দলের সাথে। তিনিই সব জোগার করে দেন। কাজেই সব দলের ভালো-মন্দ আর দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতার বিষয় জানা যায় অতি সহজেই; কিন্তু তার সফল প্রয়োগ অত সহজ নয়। কাজেই হাথুরুর সব কৌশল মাঠে প্রয়োগ ঘটিয়েই লঙ্কানরা সাফল্য পেয়েছে এমন ভাবার কোনোই কারণ নেই।’

এআরবি/আইএইচএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।