লকডাউনে যেভাবে সময় কাটছে বিশ্বজয়ী যুবাদের
এইতো সেদিন বিশ্বজয় করে এসেছেন। চোখে মুখে নতুন সাফল্যের রেনু। অনেক আশা ছিল এবারের প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে । ভাল খেলবেন। নিজেকে আরও সুন্দর করে মেলে ধরবেন। সবাই দেখবে, জানবে। সামর্থ্যের কথা আরও বেশি চাওর হবে।
কিন্তু হায় ! করোনা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে এক বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেলাতো বহুদুরে, নিজেকে মেলে ধরার কোন অবকাশও নেই। উল্টো করোনা নামক ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজের পরিবার, আত্মীয় পরিজনসহ চারপাশের সবার স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।
করোনায় সবাই যে যার ঘরে আটকা। কবে বের হবেন? বন্ধ প্রিমিয়ার লিগ আবার কবে শুরু হবে? আদৌ হবে কি না? নানা রকম ভাবনাও এসে ভর করেছে।
এরকম এক অনিশ্চয়তার ঘোর অন্ধকার যখন চারদিকে, তখন কি ভাবছেন বিশ্বজয়ী যুব দলের ক্রিকেটাররা? একটা নতুন সম্ভাবনার সূর্য্য উঠেছে সবে তাদের ও দেশের ক্রিকেটের আকাশে। অন্যরকম ইচ্ছে, আকাঙ্খা, প্রত্যাশা ও সংকল্প ছিল; কিন্তু আপাততঃ তার কিছুই করা যাচ্ছে না। এটা কতটা হতাশার? কি করে কাটছে সময়?
সমাজের অন্য আট দশজন মানুষের মত বিশ্বজয়ী ক্রিকেটারদের সবাই নিজের পরিবার, আত্মীয়-স্বজনকে রোনা থেকে মুক্ত রাখার কাজে ব্যস্ত। পাশাপাশি ঘর থেকে বের হতে না পারা এবং সবরকম ক্রিকেটীয় কমর্কান্ডে শরিক হতে না পারার হতাশাও গ্রাস করেছে। অধিনায়ক আকবর আলী, ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন আর বাঁ-হাতি স্পিনার রাকিবুল হাসানের কন্ঠে সেই হতাশা।
তবে তারা কেউই হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। সবাই নিজেকে ফিট রাখার কাজটিও করে যাচ্ছেন। সেটা অবশ্যই নিজের তাগিদে। সঙ্গে ক্রিকেট বোর্ডের নির্দেশিকা ও ট্রেনার রিচার্ড স্টনিয়েরের পরামর্শ মেনে প্রতিদিন রুটিন করে ফিজিক্যাল ট্রেনিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
আজ বৃহস্পতিবার জাগো নিউজের সাথে আলাপে সে সব কথাই জানিয়েছেন যুবাদের বিশ্ববিজয়ী অধিনায়ক আকবর আলী, পারভেজ হোসেন ইমন ও রাকিবুল হাসান।
ইনস্টাগ্রাম লাইভে ফিজিক্যাল ট্রেনিং করছি : আকবর আলী
প্রিমিয়ার লিগ এক রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়ে বন্ধ হয়ে যাবার পরপরই চলে গেছেন রংপুরে নিজ বাসায়। সেখান থেকেই কথা বলেছেন জাগো নিউজের সাথে। বিশ্বজয়ী যুব দলের অনিায়ক আকবর আলী অনেক কথার ভিড়ে একটি ইন্টারেস্টিং তথ্য দিলেন।
তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সবাই চেষ্টা করছেন নিজেকে যতটা সম্ভব ফিট রাখতে। নিয়মিত ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে এবং অন্য ফিজিক্যাল ট্রেনিংও চলছে। তবে পাশাপাশি ট্রেনার রিচার্ড ইনস্টাগ্রাম লাইভে এসে সপ্তাহে ছয় দিন ঘণ্টা খানেকের মত তাদের বিভিন্ন ফিজিক্যাল ট্রেনিং করাচ্ছেন। আকবরের ভাষায়, আমাদের যে ট্রেনার আছেন, রিচার্ড স্টনিয়ের, তিনি সপ্তাহে ৬ দিন ইনস্টাগ্রাম লাইভে এসে আমাদের ট্রেনিং করাচ্ছেন। ভিডিও’তে দেখিয়ে দিচ্ছেন অনেক কিছু। এটা খুব কাজে দিচ্ছে। হেল্পফুল হচ্ছে।’
এর বাইরে আর কি করছেন? অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ, ট্রেনার ফিজিও, কিংবা বোর্ডের পক্ষে থেকে এই সময় কাটানোর কোন রকম নির্দেশিকা আছে? জবাবে আকবর আলী বলেন, ‘আমাদের দলের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। সেখানে সব ধরনের ইনাস্ট্রাকশন চলে আসছে। যেহেতু বাইরে যাওয়ার কোন অপশন নেই, তাই ঘরে বসে ফিজিক্যাল ফিটনেস ধরে রাখার কথা বলা হচ্ছে। ফিজিক্যাল ট্রেনিং করার কথা বলা হয়েছে। কি করতে হবে? তাও বলে দেয়া আছে। আমরা তা ওয়ার্কআউট করছি।’
বাসা তো আর জিমনেসিয়াম নয়, আপনারা কিভাবে ফিটনেস ট্রেনিং করছেন? জানতে চাইলে আকবর বলেন, ‘বাসায় সবাই নিজের জন্য যেটা প্রয়োজন, সে অনুযায়ী সম্ভাব্য বিকল্প তৈরি করে নিয়েছেন। আমাদের রাবার আছে সবারই। এর বাইরে কারো কারো বাসায় ডাম্বেলও নেই। তারা বিকল্প হিসেবে বোতল নিয়ে ডাম্বেলের কাজ সারছেন। এভাবেই অপশন তৈরি করে নিতে হচ্ছে। রিচার্ড স্টনিয়ের লাইভে একদিন বলেছিলেন, সবাই একটি করে ফুটবল নিয়ে ভিডিওতে আসবে। আমাদের সবার তো আর হাতে ফুটবল নেই। এখন কিনতে বাড়ির বাইরে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই কেউ কেউ মিষ্টি কুমড়া বা তরমুজ নিয়ে ট্রেনারের লাইভে এসেছে।’
তবে খাবারের কোনো তালিকা আপাতত করে দেয়া হয়নি। যদিও শরীরের ওজন ঠিক রাখতে বলা হয়েছে। ওজন যেন না বাড়ে সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে।’
বর্তমান সময়টাকে হতাশার দাবি করে আকবর বলেন, ‘সময়টা একটু অন্যরকম কাটছে। পুরোপুরি হতাশার। প্রথমতঃ করোনার কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। বাসায়ই থাকতে হচ্ছে। আর তারচেয়ে বড় কথা, কোন খেলা নেই এবং কবে শুরু হবে, তা নিয়েও রাজ্যের অনিশ্চয়তা। কবে আবার খেলতে পারবো? কবে আবার মাঠে ফিরতে পারবো? কোন গ্যারানিট নেই । ভাবলেই খারাপ লাগে।’
স্কিল ট্রেনিংটা মিস করছেন রাকিবুল
যুব দলের বাঁ-হাতি স্পিনার রাকিবুল হাসান কিভাবে সময় কোটাচ্ছেন, তা জানিয়ে বলেন,‘খারাপ লাগাতো অবশ্যই আছে। একম মাসের বেশি সময় ধরে মাঠে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্র্যাকটিসও করতে পারছি না। খেলার তো প্রশ্নই আসে না। কাজেই ভিতরে একটা অন্যরকম হতাশা আছে অবশ্যই। পাশাপাশি জীবন বাঁচানোর জন্য তো এখন বাসায় থাকাই উত্তম। বাসায় থাকা ছাড়া উপায়ও নেই। কাজেই নিজের জীবন, পরিবার-পরিজন এবং দেশের মানুষের কথা চিন্তা করলে ঘরে থাকাই শ্রেয়।
আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন। বাসায় থেকে যদি আমরা একটি নির্দিষ্ট সময় পার করতে পারি, তাহলে হয়ত এ দুঃসময় কেটে যাবে। সবকিছু আবার স্বাভাবিক হবে। তখন বাইরেও যাওয়া যাবে। খেলা আর প্র্যাকটিসও করতে পারবো। এখন বিসিবির গাইডলাইন দেয়া কিছু ফিজিকাল ট্রেনিং করার জন্য বলা হয়েছে। রিচার্ড স্টনিয়ে আমাদেরকে ইনস্ট্রগ্রামে লাইভে এসে কাজ করাচ্ছেন। সেটাও ভাল হচ্ছে। মোটকথা ফিজিক্যাল ট্রেনিংটা মোটামুটি ভালই হচ্ছে। তবে স্কিল ট্রেনিং তো আর করা যাচ্ছে না। সেটা খুব মিসিং। স্কিল ট্রেনিংটা যে খুব জরুরি।’
ভিডিও গেমস খেলেই অবসর কাটছে পারভেজ ইমনের
চট্টগ্রামের আন্দারকিল্লায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা। এখন সেখানেই নিজ পরিবারের সাথেই আছেন ওপেনার পারভেজ হোসেনে ইমন। তারপরও সময়টা খুব ‘বোরিং’ মনে হচ্ছে তার।
ইমন বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, আমার খুব বোরিং কাটছে। একদমই কোথাও বের হতে পারছি না। তবে এখন যেহেতু রোজার দিন, তাই একটু নামাজ-কালামের চেষ্টা করছি। আর পাশাপাশি আমি ভিডিও গেমস খেলতে খুব ভালবাসি। অন্য সময়ও গেমস খেলতে পছন্দ করি। এখন সেটা বেড়ে গেছে। গেমস খেলেও দিনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় পার করছি।
বোর্ড থেকে যা বলা হয়েছে, সেটাও মেনে চলার অনুস্মরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। সেটা তো করতেই হবে। কারণ নিজেকে ফিট রাখতে হবে। প্রতিদিন ফিজিক্যাল ট্রেনিং করি, আবার কখনো আসরের নামাজের পরে। আবার কোনোদিন রাত ১১ টার দিকে ফিজিক্যাল ট্রেনিং করে যাচ্ছি।’
এআরবি/আইএইচএস