আরও হামজা-জামালের খোঁজে ঢাকায় প্রবাসীদের ট্রায়াল, থাকছে চার নারীও

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০২:১১ পিএম, ২৭ মার্চ ২০২৫

২০১৩ সালে জামাল ভূঁইয়া, ২০২৫-এ হামজা দেওয়ান চৌধরী; বাংলাদেশ জাতীয় দলে প্রবাসী ফুটবলারের অন্তর্ভূক্তির এক যুগের বৃত্তপূরণ। ইংল্যান্ডের হামজা ও ডেনামর্কের জামালের মতো লাল-সবুজ জার্সিতে প্রবাসীদের তালিকায় আছেন তারিক কাজী, কাজিম কিরমানী। এর বাইরে আরো কয়েকজন প্রবাসী ফুটবলারের লাল-সবুজ জার্সিতে অভিষেক হয়েছে জাতীয় ও বয়সভিত্তিক দলে।

মঙ্গলবার ভারতের শিলংয়ে স্বাগতিকদের বিপক্ষে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে হামজা চৌধুরীর। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার অভিজ্ঞতা আছে হামজার।

লেস্টার সিটির এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার লোনে খেলছেন চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের ক্লাব শেফিল্ড ইউনাইটেডে। অভিষেক ম্যাচেই নিজের জাত চিনিয়েছেন হামজা, ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছেন তার নেতৃত্বে ছিলেন সিলেটের হবিগঞ্জের এই যুবক।

হামজার এই পারফরম্যান্স বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে উদ্বুদ্ধ করেছে জাতীয় দলে মানসম্পন্ন আরো প্রবাসী অন্তর্ভূক্তির। তবে বাফুফে এবার জাতীয় দলের চেযে বয়সভিত্তিক দলে বেশি প্রবাসী অন্তর্ভূক্ত করতে চায়, যাতে তারা জাতীয় দলের জন্য তৈরি হতে পারেন।

সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাফুফে আগামী জুনে প্রবাসী ফুটবলারদের মেলা বসাতে যাচ্ছে ঢাকায়। প্রায় ৫০ ফুটবলার নিয়ে বাফুফে আয়োজন করবে ট্রায়াল। সেই ট্রায়ালে কেবল পুরুষ ফুটবলারই নন, আসবেন নারী ফুটবরারও।

foreign footballer

বুধবার রাতে জাগো নিউজকে এ তথ্য জানিয়ে বাফুফের অন্যতম সহসভাপতি ফাহাদ এম করীম বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত যতটা আপডেট তাতে ৩২ জন ছেলে ও ৪ জন মেয়ে এই ট্রায়ালে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যাদের বেশিরভাগই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ আরো কয়েকটি দেশের ফুটবলারও আছে।’

বাংলাদেশে এই তরুণ প্রবাসী ফুটবলারদের ট্রায়ালের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন সাকিব মাহমুদ নামের ডেনমার্ক প্রবাসী এক বাংলাদেশি। সে জামাল ভূঁইয়ার বন্ধু। আড়াই বছর আগে বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং তখন এখানে জামালের ক্রেজ দেখে আরো ভালো প্রবাসী ফুটবলারকে জাতীয় দলে অন্তর্ভূক্তির পরিকল্পনা করেন। ঢাকার আরামবাগের এই যুবক ডেনমার্কে বাচ্চাদের ফুটবল কোচিং করান।

ডেনমার্ক থেকে সাকিব মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, “আড়াই বছর আগে ঢাকায় গিয়েছিলাম। তখন জামালসহ অনেকের সাথে ভালো সময় কাটিয়েছি। বসুন্ধরা কিংসসহ কয়েকটি ক্লাবের কর্মকর্তাদের সাথেও আমি বৈঠক করেছি। বাংলাদেশ দলের খেলা ইউরোপের স্টাইলে নেওয়া যেতে পারে মানসম্পন্ন প্রবাসী অন্তর্ভূক্ত করে। সেই ধারণা থেকেই ডেনমার্ক ফিরে তখন থেকে কাজ করছি। ‘বাংলাদেশিবলার্স’ নামের একটি ইন্সটাগ্রাম পেজের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক তৈরি করে আমি প্রতিভাবান বাংলাদেশের প্রবাসী ফুটবলারদের এক করেছি। এই ইনস্টাগ্রাম পেইজটি খুলেছেন জাহির উদ্দিন নামে লন্ডন প্রবাসী এক শিক্ষার্থী।”

৩২ জন ছেলের পাশাপাশি যে ৪ জন মেয়ে ঢাকায় এসে ট্রায়ালে দেবেন তাদের ৩ জন ইংল্যান্ড প্রবাসী ও অন্যজন সুইডেন প্রবাসী। এ ট্রায়ালে সবচেয়ে বেশি ১৫ জন আসছেন ইংল্যান্ড থেকে। যেখানে ৩ জন নারী। সুইডেন থেকে ১ নারীসহ আসছেন ৭ জন। যুক্তরাষ্টের ৩ জন, ইতালির একজন ফুটবলার আছেন। সাকিব মাহমুদ বলেন, ‘ফারহান নামের এক কানাডা প্রবাসী শুক্রবার ঢাকায় পৌঁছেছে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের জন্য ট্রায়াল দিতে। ডিফেন্সে খেলেন ফারহান। তিনি কানাডায় বার্সেলোনার একাডেমিতে ছিলেন। এর বাইরে জার্মানি ও এস্তোনিয়ার ফুটবলারও আছেন।’

Foreign Footballer

জুনে ঢাকায় ঠিক কবে ট্রায়াল হবে সেই দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত করেনি বাফুফে। তবে ১০ জন ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের এশিয়ার কাপ বাছাইয়ের পরের ম্যাচ। এই ম্যাচকে আগে-পিছে রেখে যেকোন দিন ট্রায়ালের জন্য নির্ধারণ হতে পারে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন বাফুফে সহসভাপতি ফাহাদ করীম।

যে প্রবাসী ফুটবলারদের ট্রায়ালে ডাকা হয়েছে তাদের বয়স ১৬ থেকে ২৯ বছর। সাকিব মাহমুদ বলেন, ‘ট্রায়ালের জন্য সবাই নিজ খরচে ঢাকায় যাবেন। আমারও আসার সম্ভাবনা আছে।’

আপনি যে বাচ্চাদের কোচিং করান তাদের কেউ কি আছেন এই তালিকায়? সাকিব বলেন, ‘না। কারণ, আমি শুধু ডেনিশ বাচ্চাদের ট্রনিং করাই। তাদের মধ্যে কেউ নেই।’

৫ বছর বয়স থেকে ডেনমার্কে থাকেন সাকিব। জামাল ভূঁইয়ার বেড়ে শহরেই তার বসবাস। বাংলাদেশ অধিনায়কের বাসা থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে সাকিবের বাসা। ৩৭ বছর বয়সী সাকিব তিন বছর ধরে সেখানে বাচ্চাদের ফুটবল কোচিং করাচ্ছেন।

হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশ জার্সিতে খেলার পর পড়শি দেশ ভারতও প্রবাসী ফুটবলার আনার উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে ভারতের ফুটবল গোলখরায় ভোগায় তার সমাধান হিসেবে এই পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটির ফুটবল ফেডারেশন।

বাংলাদেশে এক সময় প্রবাসী ফুটবলার অন্তর্ভূক্তির বিরুদ্ধে কথা বলতেন অনেকে। এখনো আছেন সেই মানসিকতার কিছু ব্যক্তি। তবে কাজী সালাউদ্দিনের হাত ধরে প্রবাসী ফুটবলারের যে পদচারণা শুরু জাতীয় দলে সেই পরিকল্পনা আরো বড়ভাবে আসছে তাবিথ আউয়াল যুগে। ৩৬ ফুটবলারের ট্রায়াল নিয়ে যদি হামজা, জামাল ও সাবিনাদের মতো একজন ফুটবলারও পাওয়া যায় সেটাই হবে এই উদ্যোগের বড় সাফল্য।

আরআই/আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।