মেসি-রোনালদো-এমবাপে–হালান্ড একসঙ্গে প্রথম ও শেষ বিশ্বকাপ

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০৪ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপ- ইতিহাসের সবচেয়ে অনন্য এক আসরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ফুটবল প্রেমিকরা। আগামী বিশ্বকাপ হবে বিশ্ব ফুটবলের এমন একটি অধ্যায়, যা আর কখনও পুনরাবৃত্তি হবে না।

কারণ এটাই হবে প্রথম এবং শেষ বিশ্বকাপ, যেখানে একসঙ্গে মাঠে দেখা যাবে লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, কিলিয়ান এমবাপে এবং আরলিং হালান্ডকে। বয়স, ক্যারিয়ারের ধাপ এবং আন্তর্জাতিক ফুটবলের সার্কেল- এসব কারণে এই ‘তারকামণ্ডলী’ আর কখনও একই মঞ্চে একসঙ্গে হাজির হবে না। এ কারণেই এটি হয়ে উঠছে ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিশ্বকাপের ইঙ্গিত।

মেসি ও রোনালদো— এক যুগের শেষ বিদায়

ফুটবল ইতিহাসের দুই সবচেয়ে আলোচিত তারকা— লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো— এবারই শেষবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাচ্ছেন। মেসির এবং রোনালদো- দু’জনই একসঙ্গে খেলতে নামবেন ৬ষ্ঠ বিশ্বকাপে। ২০০৬ সালে একসঙ্গে বিশ্বকাপে অভিষেক হয়েছিলো চির প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই ফুটবলারের। ২০২৬ বিশ্বকাপের সময় রোনালদোর বয়স হবে ৪১ বছর, মেসির বয়স হবে ৩৯। দুই দশকের ক্যারিয়ারে তারা একসঙ্গে যা অর্জন করেছেন, তা আর কোনো জুটি সম্ভবত কখনও পারবে না।

মেসি: সোনালি অধ্যায়ের শেষ পাতা

আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো (২০২২), কোপা আমেরিকা জয় (২০২১, ২০২৪), অগণিত ব্যালন ডি’অর (৮টি)— সব মিলিয়ে মেসির জাতীয় দলের ক্যারিয়ার এক মহাকাব্য; কিন্তু বয়সের কারণে এটিই হতে যাচ্ছে তার শেষ বিশ্বকাপ। তার পারফরম্যান্স এখনো উজ্জ্বল হলেও আরেকটি চার বছরের সাইকেল পার হওয়া তার জন্য বাস্তবসম্মত নয়।

রোনালদো: পর্তুগালের সর্বোচ্চ গোলদাতার শেষ মিশন

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও একই অবস্থায়। শারীরিক ফিটনেস এখনো ঈর্ষণীয় হলেও বয়স তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এটিই হতে যাচ্ছে তার ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ— যেখানে তিনি শেষবারের মতো নেতৃত্ব দেবেন পর্তুগালকে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ ১৪৩টি গোল করেন সিআর সেভেন। ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা মেসি বনাম রোনালদো— এই আসরেই চূড়ান্ত বিদায় জানাবে বিশ্বকে।

এমবাপে ও হালান্ড: নতুন প্রজন্মের আধিপত্যের সূচনা

অন্যদিকে মঞ্চে হাজির হচ্ছে পরবর্তী যুগের দুই নেতা— কিলিয়ান এমবাপে এবং আরলিং হালান্ড। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ জেতা এবং ২০২২ সালে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা এমবাপে এরইমধ্যে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি পরবর্তী দশকের মুখ। এবার, ২০২৬ বিশ্বকাপে তিনি আরেকটি আসরে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় মাঠে নামবেন।

২৬ বছরের অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটিয়ে এবারই নরওয়েকে বিশ্বকাপে তুলে আনলেন আরলিং হালান্ড। হালান্ডের জন্য এটি হবে প্রথম বিশ্বকাপ। নরওয়ে ১৯৯৮ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছে— যা ছিল হালান্ডের জন্মের আগের ঘটনা। তার উপস্থিতি এবার যেন নরওয়েজিয়ান ফুটবলের পুনর্জাগরণের ঘোষণা হয়ে এসেছে।

এ এক অনন্য প্রজন্মের মিলন—যা আর কখনো হয়তো দেখা যাবে না। এই বিশ্বকাপে একসঙ্গে থাকবে তিন প্রজন্মের প্রতিনিধি— শেষবারের মতো খেলবেন মেসি–রোনালদো, আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আরও একটি মঞ্চ পাচ্ছেন এবং এই মঞ্চে অভিষেক ঘটাবেন হালান্ড।

এটি এমন এক মেলবন্ধন যা ফুটবল ইতিহাসে আর দেখা যাবে না। একই আসরে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেরা প্রতিভার মিলন হতে যাচ্ছে— এই মুহূর্তটাই ফুটবলভক্তদের জন্য বিরল সৌভাগ্য। ফুটবল আর কখনো আমাদের এমন দৃশ্য উপহার দিতে পারবে না, যেখানে মেসি, রোনালদো, এমবাপে এবং হালান্ড— চারজনকে একই বিশ্বকাপে দেখা।

এই বিশ্বকাপ তাই শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং সময়ের সীমানা পেরোনো এক ঐতিহাসিক ঘটনা। ফুটবলের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে এই টুর্নামেন্ট।

আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।