ভবিষ্যতের ভার্চুয়াল পৃথিবী যেমন হবে

ভবিষ্যতের কথা ভাবলেই মনে আসে উড়ন্ত গাড়ি, রোবট বন্ধু কিংবা অন্য কোনো গ্রহে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য। কিন্তু বাস্তবতা আমাদের আরেকটি নতুন জগতে নিয়ে যাচ্ছে। একটি ভার্চুয়াল দুনিয়ায়, যেখানে বাস্তবতা আর কল্পনার মধ্যকার সীমারেখা ক্রমেই অস্পষ্ট হয়ে উঠছে। মেটাভার্স, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এবং অগমেন্টেড রিয়ালিটির মতো প্রযুক্তি সেই ভবিষ্যতের দ্বার খুলে দিয়েছে।
আজ আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করি মূলত তথ্য খোঁজার জন্য, কেনাকাটার জন্য কিংবা যোগাযোগের জন্য। কিন্তু মেটাভার্সের মাধ্যমে আমরা ইন্টারনেটের ভেতর ঢুকে পড়তে পারব একটি ত্রি-মাত্রিক (থ্রিডি) জগতে। যেখানে নিজের অবতার দিয়ে চলাফেরা করা যাবে, অফিস করা যাবে, বাজার করা যাবে, এমনকি ঘুরে বেড়ানোও যাবে। বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান যেমন মেটা, গুগল, মাইক্রোসফট এখন এ দিকেই বিশাল বিনিয়োগ করছে।
এই প্রযুক্তি শুধু বিনোদন বা কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। শিক্ষার ক্ষেত্রেও আসবে বিপ্লব। ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে বসে বিশ্বের সেরা শিক্ষকদের থেকে শিক্ষা নিতে পারবে। ইতিহাসের ক্লাসে তারা ভার্চুয়াল পিরামিডের মধ্যে ঘুরবে, বিজ্ঞানের ক্লাসে ভার্চুয়ালভাবে মানবদেহের ভেতর ভ্রমণ করবে।
চিকিৎসাক্ষেত্রেও এর ব্যবহার হতে শুরু করেছে। চিকিৎসকরা ভার্চুয়াল সিমুলেশনের মাধ্যমে জটিল অপারেশনের অনুশীলন করতে পারছেন। দূরবর্তী গ্রামাঞ্চলেও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে রোগীকে দেখা যাবে ভার্চুয়াল চেম্বারে বসে।
কাজের ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তন আসছে। অফিসগুলো বাস্তব দালান-কোঠার পরিবর্তে ভার্চুয়াল অফিসে রূপ নেবে। কর্মীরা বাড়িতে বসেই ভার্চুয়াল মিটিং, দলগত কাজ, এমনকি প্রেজেন্টেশনও করতে পারবে। এতে করে ভৌগোলিক দূরত্ব কোনো বাধা হবে না। একই কোম্পানিতে ঢাকা, লন্ডন ও নিউইয়র্কের কর্মীরা একই রুমে বসে কাজ করতে পারবে, যদিও তারা থাকবে হাজার মাইল দূরে!
তবে প্রযুক্তির এই বিস্তারে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। ভার্চুয়াল আসক্তি, তথ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি এবং বাস্তব সামাজিক সম্পর্কের দুর্বলতার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে প্রকাশ করেছেন। অতিরিক্ত সময় ভার্চুয়াল জগতে কাটালে মানসিক চাপ এবং একাকীত্ব বাড়তে পারে। আবার সবার পক্ষে এই প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করা সহজ হবে না, কারণ এতে প্রয়োজন উন্নত ডিভাইস ও দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ যা এখনো সবার নাগালের মধ্যে নেই।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে একটি সত্য হলো প্রযুক্তির পথ রোধ করা যাবে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ভার্চুয়াল জগত আরও সহজলভ্য, নিরাপদ ও বাস্তবসম্মত হয়ে উঠবে। বিশেষ করে ওয়েব ৩.০-এর যুগে ইন্টারনেট আরও ব্যক্তিকেন্দ্রিক হবে, যেখানে ব্যবহারকারীরাই নিয়ন্ত্রণ রাখবে তাদের তথ্যের উপর।
একদিন হয়তো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বড় অংশই কেটে যাবে এই ভার্চুয়াল জগতে। অফিস, শিক্ষা, বিনোদন সবকিছুই এক অদৃশ্য জগতে একত্রিত হবে। বাস্তব এবং কল্পনা তখন হাত ধরে এগোবে।
ভবিষ্যতের ভার্চুয়াল দুনিয়া হবে এক নতুন বাস্তবতা। যেখানে সীমা থাকবে না, থাকবে কেবল সম্ভাবনা। আর সেই সম্ভাবনার হাত ধরে আমরা হয়তো পৌঁছে যাব এমন এক জগতে, যা আজকের কল্পনাকেও হার মানাবে।
- আরও পড়ুন
- বাংলাদেশের গেমিং ইন্ডাস্ট্রি: বিলিয়ন ডলারের ভবিষ্যৎ
- ১০০ ফুট লম্বা, বিশ্বের সবচেয়ে দৈর্ঘ্যের গাড়ি
তথ্যসূত্র: মেটা ওয়েবসাইট, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি সোসাইটি, মাইক্রোসফট টিমস, ডব্লিউইএফ, ফোর্বস
কেএসকে/এএসএম