বাইকের মাইলেজ বাড়ানোর ১০ কৌশল জেনে রাখুন
বর্তমান সময়ে যখন জ্বালানির দাম ক্রমাগত বাড়ছে, তখন বাইকের মাইলেজ নিয়ে চিন্তা করা একেবারেই স্বাভাবিক। অনেক রাইডারই ভাবেন, বাইক তো ঠিকই আছে, কিন্তু মাইলেজ কমে যাচ্ছে কেন? আসলে বাইকের ফুয়েল ইফিসিয়েন্সি শুধু ইঞ্জিনের উপর নির্ভর করে না এটা অনেকটা রাইডারের চালানোর অভ্যাস, রক্ষণাবেক্ষণ, এমনকি বাইকের ছোটখাটো সেটিংসের উপরও নির্ভরশীল।
আসুন বাইকের মাইলেজ বাড়ানোর ১০টি টিপস বা কৌশল জেনে নেওয়া যাক। যা মেনে চললে আপনি সহজেই প্রতি লিটারে ৫-১০ কিমি পর্যন্ত মাইলেজ বাড়াতে পারেন।
- ধীরে ধীরে অ্যাক্সিলারেশন দিন
অনেকেই বাইক চালু করার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করে থ্রটল ঘুরিয়ে দেন। এতে ইঞ্জিনে অতিরিক্ত জ্বালানি পুড়ে যায় এবং ফুয়েল ইফিসিয়েন্সি কমে যায়। চেষ্টা করুন বাইকটি ধীরে ধীরে স্পিডে নিতে। মসৃণভাবে গিয়ার বদলালে ইঞ্জিন কম চাপ নেয়, ফলে মাইলেজ বাড়ে।
- নির্দিষ্ট স্পিডে চালান
বেশিরভাগ বাইক ৪০ থেকে ৬০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে সবচেয়ে ভালো মাইলেজ দেয়। অতিরিক্ত স্পিডে বাইক চালালে এয়ার রেসিস্ট্যান্স বাড়ে, ইঞ্জিনকে বেশি কাজ করতে হয়, ফলে জ্বালানি খরচও বেড়ে যায়। তাই নির্দিষ্ট গতি বজায় রাখুন এটাই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল।
- সময়মতো ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করুন
পুরোনো বা নোংরা ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স কমিয়ে দেয়। এতে ফুয়েল বার্নিং প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হয় না। সাধারণত প্রতি ২,০০০ থেকে ২,৫০০ কিমি পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা ভালো। ভালো ব্র্যান্ডের অয়েল ব্যবহার করলে ইঞ্জিনের ঘর্ষণ কমে, মাইলেজ বাড়ে।
- সঠিক টায়ার প্রেশার বজায় রাখুন
টায়ারে বাতাস কম থাকলে ঘর্ষণ বেড়ে যায়, ফলে ইঞ্জিনকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। এতে জ্বালানি খরচ বাড়ে। প্রতি সপ্তাহে একবার টায়ার প্রেশার চেক করুন। বাইকের ম্যানুয়ালে উল্লেখিত পিএসআই অনুযায়ী বাতাস দিন।
- অতিরিক্ত ওজন বহন করবেন না
বাইকে বাড়তি ওজন মানে ইঞ্জিনের ওপর বাড়তি চাপ। পেছনে ভারী লাগেজ বা বাড়তি যাত্রী থাকলে মাইলেজ কমে যায়। তাই যতটা সম্ভব হালকা রাখুন বাইকটি। বিশেষ করে দীর্ঘ ভ্রমণে অতিরিক্ত ব্যাগেজ এড়িয়ে চলুন।
- ক্লাচে অপ্রয়োজনীয় চাপ দেবেন না
অনেকেই রাইডিংয়ের সময় অর্ধেক ক্লাচ চেপে রাখেন, যা ইঞ্জিনে অতিরিক্ত লোড সৃষ্টি করে। এতে শুধু মাইলেজ কমে না, ক্লাচ প্লেটও দ্রুত নষ্ট হয়। তাই প্রয়োজন ছাড়া ক্লাচে হাত রাখবেন না।
- নিয়মিত সার্ভিসিং করুন
বাইকের এয়ার ফিল্টার, স্পার্ক প্লাগ, কার্বুরেটর ও চেইন-স্প্রকেট ঠিক আছে কি না নিয়মিত পরীক্ষা করুন। এয়ার ফিল্টার বন্ধ হয়ে গেলে ইঞ্জিনে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়, ফলে ফুয়েল পুরোপুরি বার্ন হয় না-যার সরাসরি প্রভাব পড়ে মাইলেজে।
- স্টপেজে ইঞ্জিন বন্ধ রাখুন
সিগন্যাল বা লম্বা ট্রাফিকে দাঁড়িয়ে থাকলে ইঞ্জিন বন্ধ করে দিন। অনেকেই ২-৩ মিনিটের জন্যও ইঞ্জিন চালু রাখেন, এতে অপ্রয়োজনীয় ফুয়েল নষ্ট হয়। শুধু এই অভ্যাস বদলালেই মাসে ৫-১০ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয় করা যায়।
- মানসম্মত জ্বালানি ব্যবহার করুন
অপরিষ্কার বা নিম্নমানের পেট্রোল বাইকের ইঞ্জিনে কার্বন জমায়, ফলে কম্বাশন ঠিকভাবে হয় না। সবসময় বিশ্বস্ত পেট্রোল স্টেশন থেকে ফুয়েল নিন এবং প্রয়োজনবোধে ফুয়েল ফিল্টার পরিষ্কার করুন।
- বাইক চালানোর ধরন ঠিক করুন
অপ্রয়োজনে বারবার ব্রেক-অ্যাক্সিলারেশন দেওয়া, দ্রুত গিয়ার পরিবর্তন করা বা হঠাৎ স্পিড বাড়ানো এসব অভ্যাস মাইলেজের সবচেয়ে বড় শত্রু। শান্তভাবে, পরিকল্পিতভাবে চালালে বাইক শুধু কম ফুয়েল খায় না, দীর্ঘদিন ভালো পারফরম্যান্সও দেয়।
আরও পড়ুন
বৃষ্টিতে বাইকের সাইলেন্সারে পানি ঢুকলে কী করবেন?
বাইকের ‘এবিএস সিস্টেম’ আসলে কী জানেন?
সূত্র: জিসিএন টেক
কেএসকে/জিকেএস