ড্রাইভিং নিরাপত্তায় স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন তো

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫৬ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২৫

প্রতিদিনের খবর খুললেই চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনার খবর। কখনও স্কুলছাত্র, কখনও ডেলিভারি রাইডার। কারও না কারও পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। কিন্তু কিছু আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারেই দুর্ঘটনার হার অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

ধীরে ধীরে বাংলাদেশেও স্মার্ট রোড সেফটি প্রযুক্তি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আসুন জেনে নিই কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি যেগুলো সড়ক নিরাপত্তায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

১. স্মার্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম

স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম রাস্তার নিয়ন্ত্রণকে সহজ ও নিরাপদ করে। সিগন্যাল ও রাস্তার বিভিন্ন স্থানে বসানো সেন্সর ও ক্যামেরার মাধ্যমে দ্রুত শনাক্ত করা যায় কোনো যানবাহন অতিরিক্ত গতিতে চলছে কিনা বা কোনো গাড়ি লেনের নিয়ম ভঙ্গ করছে কিনা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রিয়েল টাইমে তথ্য বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনার সম্ভাব্য এলাকা চিহ্নিত করে, যাতে ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই সতর্ক ব্যবস্থা নিতে পারে। এছাড়া স্মার্ট সিগন্যাল লাইটের সময় পরিবর্তন করে যানজট কমায় এবং গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

২. গাড়ি নিরাপত্তা প্রযুক্তি

আধুনিক গাড়ি ও মোটরবাইকে অনেক নতুন নিরাপত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। 'অটোমেটিক ব্রেকিং সিস্টেম' হঠাৎ ব্রেক দেওয়ার সময় গাড়িকে নিয়ন্ত্রিতভাবে থামতে সাহায্য করে। 'লেন ডিপারচার ওয়ার্নিং' চালককে সতর্ক করে যখন গাড়ি নিজের লেন থেকে সরে যায়। 'ব্লাইন্ড স্পট ডিটেকশন সেন্সর' অদৃশ্য পাশে কোনো যানবাহন থাকলে তা জানান দেয়। 'ওভারস্পিড অ্যালার্ট' নির্ধারিত গতির বেশি হলে চালককে সতর্ক করে। এই সব প্রযুক্তি দুর্ঘটনা কমাতে এবং চালকের সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে।

৩. স্মার্ট হেলমেট

মোটরবাইকের জন্য স্মার্ট হেলমেট হলো এক ধরনের চলন্ত গ্যাজেট। এটি শুধু মাথা রক্ষা করে না, বরং এতে থাকে জিপিএস, ব্লুটুথ, স্পিড সেন্সর, দুর্ঘটনা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা। দুর্ঘটনা ঘটলে হেলমেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে জরুরি নম্বরে চালকের অবস্থান পাঠায়। কিছু হেলমেটে এমনকি ফেস রিকগনিশন ফিচার থাকে, যা ব্যবহারে হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো সম্ভব হয় না। ফলে নিরাপত্তার সঙ্গে চালকের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত হয়।

৪. জিপিএস ও টেলিম্যাটিক্স ট্র্যাকিং

জিপিএস ও টেলিম্যাটিক্সের মাধ্যমে গাড়ির অবস্থান, গতি ও রুট রিয়েল টাইমে জানা যায়। অনেক লজিস্টিক ও ডেলিভারি কোম্পানি এই সিস্টেম ব্যবহার করে। টেলিম্যাটিক্স ডিভাইস চালকের আচরণ যেমন হঠাৎ ব্রেক, তীব্র মোড় নেওয়া ইত্যাদি রেকর্ড করে, যাতে ঝুঁকিপূর্ণ চালনা সহজে শনাক্ত করা যায়।

৫. সেফ রাইডিং ও সচেতনতা অ্যাপ

নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের জন্য বেশ কিছু অ্যাপ চালু হয়েছে। যেমন: আই ট্রেকার, হ্যালো এইচপি, রোড সেইফটি ইত্যাদি। এগুলো চালকের গতি, রাইডের ধরন এবং আচরণ বিশ্লেষণ করে। রাইড শেষে অ্যাপ চালককে রিপোর্ট দেয় কোথায় ভুল হয়েছে তা দেখায়। তবে আমাদের দেশে এ ধরণের এপসের ব্যবহারবিধি কম।

৬. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

এআই দুর্ঘটনা পূর্বাভাস ও ট্রাফিক বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। রাস্তার আলো, আবহাওয়া, যানবাহনের ঘনত্ব ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে। এছাড়া ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ট্রেনিং সিমুলেটর চালক প্রশিক্ষণে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। এতে নতুন চালকরা নিরাপদ পরিবেশে ট্রাফিক নিয়ম এবং বাস্তব রোড পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা নিতে পারে।

বাংলাদেশে ইতিমধ্যে কিছু প্রযুক্তি যেমন স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম, জিপিএস ও টেলিম্যাটিক্স ব্যবহার হচ্ছে। তবে স্মার্ট হেলমেট, এআই ভিত্তিক দুর্ঘটনা পূর্বাভাস এবং গাড়ি নিরাপত্তা প্রযুক্তি এখনও ব্যাপকভাবে নেই। ধীরে ধীরে এগুলো বিস্তৃত হলে দেশের সড়ক নিরাপত্তায় ব্যাপক উন্নতি ঘটবে।

তথ্যসূত্র: ইউএনবি, পিএমসি, সাইন্স ডাইরেক্ট, জিআর‌এস‌এফ, জুনিপার রিসার্চ

মামুনূর রহমান হৃদয়/এএমপি/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।