সমুদ্রসৈকতে বর্ষার ভিন্ন রূপ দেখবেন যেভাবে

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:২০ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২৫

আরিফুল ইসলাম তামিম

যান্ত্রিক শহুরে জীবনের প্রতিদিনকার ব্যস্ততার একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে কার না ইচ্ছে করে? ইচ্ছে করে প্রকৃতির খুব কাছে, নির্জন কোনো সমুদ্রের ধারে সময় কাটাতে! শহরের মধ্যে এমন সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায় না। তাই প্রকৃতির কোলে নিজেকে মেলে ধরতে চাইলে যেতে পারেন কক্সবাজারের ‘ক্যাম্প ইন কক্স’ পর্যটনকেন্দ্রে। যা অনেকে ‘জাদুঘর মায়ের বাড়ি’ নামেও চেনেন।

ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এরই মধ্যে স্থানটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম শহর থেকে বাসযোগে কক্সবাজার যেতে হবে। সেখান থেকে টমটম বা সিএনজিযোগে আরও ১০-১২ কিলোমিটার ভ্রমণ করে পৌঁছে যাবেন ক্যাম্প ইন কক্সে। ভাড়া পড়বে প্রায় ২০০-২৫০ টাকা।

সমুদ্রসৈকতে বর্ষার ভিন্ন রূপ দেখবেন যেভাবে

সারি সারি ১০টি ইকো পড হাউজ, লেকের পাড়ে আরও ১০টি লেক পড এবং সবচেয়ে নজরকাড়া ‘স্কাই পড’—সব মিলিয়ে জায়গাটির নকশা ও প্রকৃতিপ্রেমী পরিবেশ সত্যিই প্রশংসনীয়। সুবিশাল জায়গাজুড়ে সবুজ অরণ্য, বিশাল নারকেল গাছ আর প্রতিটি গাছেই হ্যামক বাঁধা। অতিথিরা এখানে হ্যামকে শুয়ে প্রকৃতির নিচে একরাশ শান্তি খুঁজে নিচ্ছেন।

ক্যাম্প সাইটজুড়ে আছে ফুল ও ফলের অসংখ্য গাছ। আছে ব্যতিক্রমধর্মী বিভিন্ন গেম অ্যাক্টিভিটিও। মূলত শীত ও বর্ষায় ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় এ জায়গা থেকে। শীতকালে সবচেয়ে বেশি ভিড় হলেও বর্ষাকালের প্রকৃতি এক অন্যরকম রূপে ধরা দেয়। কেউ কেউ নির্জনতায় বর্ষার রূপ দেখতে ছুটে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে।

সমুদ্রসৈকতে বর্ষার ভিন্ন রূপ দেখবেন যেভাবে

এখানে ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, পুল, ক্রিকেটসহ নানা খেলাধুলার সুযোগ আছে। চাইলে লেকের জলে নেমেও প্রশান্তি খুঁজে নিতে পারেন। নিরাপত্তার জন্য আছে লাইফ জ্যাকেট ও টিউব। লেকের পাশেই আছে টং দোকান ‘ক্যাম্প শপ’। এখানে চা-কফির পাশাপাশি বিক্রি হয় শুকনো খাবারও। বিকেল হলেই ক্যাম্প শপ ঘিরে বেড়ে ওঠা বাঁশঝাড়ের নিচে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে অতিথিরা জমে ওঠেন আড্ডায়।

ক্যাম্পিং সাইট থেকেই দেখা যায় জোয়ার-ভাটার অপূর্ব দৃশ্য। সকালবেলা জোয়ারে রেজুখালের পানি ভরে ওঠে। তখনই চলে স্থানীয়দের মাছ ধরার তোড়জোড়—ঝাকি জাল বা টানা জালে চলে তাদের কার্যক্রম। সমুদ্রের গর্জন ও বিশাল ঢেউয়ের শব্দে আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। তবে ভাটার সময় সমুদ্রে নামতে হলে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ তখন রেজুখালে সমুদ্রের পানি ঢুকে তীব্র স্রোত সৃষ্টি করে, যা সাঁতার জানা থাকলে বিপজ্জনক হতে পারে।

সমুদ্রসৈকতে বর্ষার ভিন্ন রূপ দেখবেন যেভাবে

আরও পড়ুন

সমুদ্রকে নিজের মতো করে উপভোগ করতে চাইলে নিঃসন্দেহে ক্যাম্প ইন কক্স একটি আদর্শ জায়গা। সম্প্রতি আমরা তিন বন্ধু মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম। এখানকার পড হাউজগুলোর ভাড়া একেক সময়ে একেক রকম হয়। তবে জনপ্রতি ১০০০-১২০০ টাকার মধ্যেই থাকা, ৩ বেলা খাবার ও সব অ্যাক্টিভিটি ফ্রি পাওয়া যায়।

শীত মৌসুমে ক্যাম্প ফায়ার, বারবিকিউ, সার্ফেস, রেজুখালে কায়াকিং, চাঁদ নৌকা ভ্রমণের মতো বিশেষ আয়োজন থাকলেও বর্ষাকালে এসব পাওয়া যায় না। লেকের ধারে আছে দোলনা। দোলনায় দোল খাওয়ার পাশাপাশি চাইলে ক্যাম্পিং সাইট থেকে ১০ মিনিট হাঁটলেই দেখা মিলবে নির্জন সমুদ্র। যাওয়ার পথে পড়বে নৈসর্গিক ঝাউ বাগান, রেজুখালের জলে ভেসে আসা মাছ আর স্থানীয়দের মাছধরার দৃশ্য।

আমরা একদিন থাকার পরিকল্পনা করলেও প্রকৃতির টানে থেকে যাই দুইদিন। প্রথমদিন স্কাই পডে ছিল এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা—প্রচুর বৃষ্টি, বাতাস আর রুমে বসেই শোনা যাচ্ছে সমুদ্রের গর্জন ও জানালায় পড়ছে বৃষ্টির ফোঁটা। দ্বিতীয় দিন ছিল লেক পডে—টিনের চালের ওপর বৃষ্টির শব্দে এক অসাধারণ ঘুমের অনুভূতি।

সমুদ্রসৈকতে বর্ষার ভিন্ন রূপ দেখবেন যেভাবে

এ ক্যাম্পিং সাইটের সূর্যাস্ত এতটা মনোমুগ্ধকর যে, আপনি মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। সময় থাকলে পাশেই হেঁটে ঘুরে আসতে পারেন ‘মারমেইড বিচ রিসোর্ট’ বা ‘মুননেস্ট’। চাইলে জনপ্রতি ৩০-৪০ টাকা ভাড়ায় টমটমে চড়ে পাটুয়ারটেক বা ইনানী সমুদ্রসৈকতও দেখে নিতে পারেন। মেরিন ড্রাইভ রোডের একপাশে সমুদ্রের ঢেউ, আরেক পাশে পাহাড়ের বিশালতা—এ যাত্রা হবে পরম শান্তির।

ক্যাম্প ইন কক্সে আসতে হলে অবশ্যই অনলাইনে বুকিং দিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া অনেক সময় পড হাউজগুলো খালি না-ও থাকতে পারে।

লেখক: শিক্ষার্থী, চতুর্থ বর্ষ, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।