পর্যটকদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সুবলং ঝরনা
বর্ষায় যেন ভরা যৌবনে ফিরেছে রাঙ্গামাটির সুবলং ঝরনা। প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরা আকর্ষণীয় এ জলপ্রপাত। নৈসর্গিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে ঝরনার চারপাশে। শুষ্ক মৌসুমে কিছুটা নির্জীব হয়ে পড়লেও বর্ষা এলেই আপন রূপে প্রকৃতির বুকে জানান দেয় নিজের সরব উপস্থিতি। ঝরনার সৌন্দর্যে পর্যটকদের ঢল নামে এখানে। বৈচিত্র্যময় পরিবেশের টানে প্রতিদিনই এখানে ছুটে আসেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
ঝরনার অপূর্ব সৌন্দর্য দেখার সুবিধার্থে ছোট একটি সেতুও বানানো হয়েছে ঝরনার পাশে। সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি আর ভিডিও ধারণে ব্যস্ত হন পর্যটকরা। কেউ কেউ ঝরনার শীতল জলে নিজেদের ভিজিয়ে নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন।
আনুমানিক ২০০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম জলধারা আছড়ে পড়ছে পাহাড়ের বুকে। শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে গেলেও বর্ষা এলে যৌবন ফিরে পায় ওই এলাকার ছোট-বড় অনেক প্রাকৃতিক ঝরনা। ঝরনার অবিরাম বয়ে চলা দেখতে দূরের পর্যটকদের পাশাপাশি রাঙ্গামাটির স্থানীয়রাও এ সময় ছুটে আসেন। রাঙ্গামাটি শহর থেকে এক ঘণ্টারও কম সময়ে নৌযানে করে সুবলং ঝরনায় পৌঁছানো যায়।
স্থানীয় পর্যটক মিলন ধর বলেন, ‘শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমরা সবাই প্রশান্তির খোঁজ করি। প্রশান্তি লাভের জন্য সুবলং ঝরনাটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। আমরা প্রতি বছরই দুই-একবার এখানে আসি। এখানে আসা খুবই সহজ হওয়ায় স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।’

বেড়াতে আসা একাধিক পর্যটক জানান, সুবলং ঝরনা ছবিতে যতটা না, বাস্তবে তার সৌন্দর্য আরও অনেক বেশি। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। পাহাড়ের ওপর থেকে বয়ে চলা ঝরনা ধারার অবিরাম ঝরে পড়ার দৃশ্য দেখতে। বর্ষায় পাহাড়ের প্রকৃত সৌন্দর্য জেগে ওঠে। প্রকৃতি এখানে ঘন সবুজে ঢেকে যায়। ঝরনাগুলো থেকে অনবরত পানি বইতে থাকে। পর্যটকদের প্রশান্তি দিতে হ্রদ-পাহাড়ের রাঙ্গামাটির তুলনা হয় না।
আরও পড়ুন
ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি আসা পর্যটক দলের প্রধান মুজাহিদ বাবু বলেন, ‘আমরা ২০ জনের একটি দল রাঙ্গামাটি বেড়াতে এসেছি। বর্ষার এ সময়ে পাহাড়ের প্রকৃতি অনেক সতেজ থাকে। পাশাপাশি ঝরনাগুলো জেগে ওঠে। লেকে ঘুরে বেড়ানো, পাহাড় দেখা আর ঝরনার জলে শীতল হওয়ার জন্য রাঙ্গামাটির বিকল্প নেই। সুবলং ঝরনাটি খুবই সুন্দর। যাতায়াত সহজ এবং রাঙ্গামাটির খুব কাছে হওয়ায় পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।’
পর্যটন উদ্যোক্তা হিমু বাপ্পী বলেন, ‘এ সময়ে রাঙ্গামাটিতে যারা বেড়াতে আসেন, সবারই গন্তব্য সুবলং ঝরনা। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে অসংখ্য ঝরনা এখন জেগে উঠেছে। সুবলং ঝরনায় যাতায়াত সুবিধাজনক হওয়ায় পর্যটকরা অনায়াসে এখানে আসতে পারেন। আমরা চাই সারাবছর পর্যটকরা রাঙ্গামাটি বেড়াতে আসুক। পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করুক।’

স্থানীয় পরিবেশকর্মী প্রান্ত রনি বলেন, ‘বর্ষায় পাহাড় খুব সুন্দর হয়ে ওঠে। এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে যারা পাহাড়ে আসেন, বিশেষ করে রাঙ্গামাটিতে যারা আসেন; তারা কাপ্তাই হ্রদে ঘুরে বেড়ান। হ্রদের জলে প্লাস্টিকের খাবারের প্যাকেট ও পানির বোতল ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া লাইফ জ্যাকেট পরিধানে সচেতন হতে হবে। পাহাড়ের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করেই পর্যটনের বিকাশে ভূমিকা রাখতে হবে।’
সুবলং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তরুণ জ্যোতি চাকমা বলেন, ‘বর্তমানে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পর্যটক এখানে আসছেন। পর্যটকদের সুবিধার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে সৌন্দর্যবর্ধন, অবকাঠামো উন্নয়ন, সিঁড়ি ও টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে এখানে কোনো সমস্যা নেই।’
রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশন ও পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মূল আকর্ষণ সুবলং ঝরনা। পর্যটকরা সুবলং ঝরনায় মুগ্ধ হন, তারা প্রশান্তি খুঁজে পান। বর্ষা মৌসুম এলে সুবলং ঝরনাটির আসল রূপ দেখা যায়। সারাবছরই রাঙ্গামাটিতে বেড়ানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা। এখানে পর্যটকদের নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই।’
এসইউ/এমএস