পুরোনো ১০ টাকা নোটের সেই আতিয়া মসজিদে একদিন

ভ্রমণ আমার প্রিয়। একটু অবসর পেলেই বেরিয়ে পড়ি ঘুরতে। তেমনই এক অবসর সময়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের ৮ তারিখে গেলাম ছোট মামার কর্মস্থল টাঙ্গাইলে। সেখানে তিনি একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সেই সুবাদে তিনি টাঙ্গাইলেই থাকেন।
মামা তখনো বিয়ে করেননি। এ কারণে এক ব্যাচেলর বাসায় থাকেন। সকালে উঠেই তাকে অফিসে যেতে হয়। অফিসে যাওয়ার আগে মামাকে বললাম, ‘আমি আজ ঘুরতে বের হবো।’
মামা বললেন, ‘আচ্ছা সাবধানে যেও।’ তিনি কিছু দিকনির্দেশনাও দিলেন। কোথায় কোথায় সুন্দর জায়গা আছে দেখার মতো, তা জানালেন। আমিও সেই দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বেরিয়ে পড়লাম।
বেরিয়েই টাঙ্গাইল পুরাতন বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে সেখানকার বিখ্যাত খাবার, আলু ভর্তা দিয়ে চাপড়া খেয়ে সকালের নাস্তা শেষ করলাম। তারপর সেখান থেকে একটা অটোরিকশা নিয়ে চলে গেলাম দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়া গ্রামে।
মামা অফিসে যাওয়ার আগেই বলেছিলেন, ‘দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়া গ্রামে আতিয়া মসজিদ আছে।’ এই মসজিদেরই ছবি আমরা দেখতে পাই পুরোনো ১০ টাকার নোটে। মূলত সেখানেই যাওয়ার জন্য বেরিয়েছি।
ছায়া শোভিত গ্রামের আঁকাবাঁকা পথে অটোরিকশায় করে যেতে থাকলাম মসজিদের কাছে। পথিমধ্যেই কয়েক মিটার দূর থেকে দেখতে পেলাম মসজিদটিকে। টাঙ্গাইল সদর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটারের পথ। মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে লৌহজং নদী।
মসজিদের সামনে আছে একটি পুকুর। আতিয়া মসজিদটির আকৃতি চারকোণা। চারটি বড় পিলারের মাঝে বিভিন্ন কারুকার্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মসজিদটির দেওয়াল।
মসজিদটিতে একটি বড় গম্বুজ ও তিনটি ছোট গম্বুজ আছে। এছাড়া বাইরের অংশে অনেক টেরাকোটার কাজ দেখতে পেলাম। অধিকাংশই বিভিন্ন ফুলের নকশা। মসজিদটিতে মোগল ও সুলতানি আমলের স্থাপত্যরীতির নিদর্শন পাওয়া যায়।
মসজিদটির চারদিকে ঘুরতেই লক্ষ্য করলাম, মসজিদের তিন পাশে মোট ৭টি প্রবেশপথ। পূর্বদিকে তিনটি প্রবেশ পথ ছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণে আরও দুটি করে প্রবেশপথ আছে। লাল ইটের তৈরি মসজিদটি দেখতে অনেকটা ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে।
মসজিদটি আকৃতিতে বেশ ছোট। পকেট থেকে পুরোনো দশ টাকার একটি নোট বের করে ভালো করে মিলিয়ে দেখলাম। সেই সময় মনের মধ্যে দারুণ এক আনন্দ খেলা করছিল।
এ সময় এক ছেলের সঙ্গে দেখা হলো। বয়স বোধহয় ৭-৮ বছর। সে এ মসজিদে নামাজ পড়তে এসেছে। হঠাৎ ঘড়িতে খেয়াল করলাম আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই জোহরের নামাজের সময় হয়ে যাবে।
তাকে আমার ফোন দিয়ে বললাম মসজিদের সামনে কয়েকটি ছবি তুলে দাও। সে বলল, আমি তো ছবি তুলতে পারি না। পরে তাকে ছবি তোলার বেসিক নিয়ম শেখালাম। কয়েকবারের চেষ্টায় দেখি সে বেশ ভালো ছবি তুলতে পেরেছে। ছবি তোলা হলে তার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম।
জানা যায়, আতিয়া পরগনার শাসনকর্তা সাঈদ খান পন্নী ১৬০৮ সালে এ মসজিদ নির্মাণ করেন। ষোড়শ শতকে মসজিদটি নির্মাণ হলেও এখনো মসজিদে মানুষ নামাজ আদায় করে। প্রায় ৪১৪ বছর ধরে মসজিদে জামাত হয়।
মসজিদটি ঘুরে দেখতে দেখতে নামাজের সময় হয়। এর মধ্যেই অনেক মুসল্লি সেখানে উপস্থিত হয়। মসজিদ দেখা শেষ হলে, চলে আসার সময় এক ব্যক্তি জানায় মসজিদে মন্তব্য বই আছে।
মসজিদটি ঘুরে কেমন লাগলো তা মন্তব্য বইয়ে জানাতে। আমি মন্তব্য বইয়ে আমার মন্তব্য জানিয়ে চলে আসলাম টাঙ্গাইলে।
ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন
ঢাকা মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নিরালা, বিনিময়, ধলেশ্বরী ইত্যাদি বাসে সরাসরি টাঙ্গাইলে যাওয়া যায়। বাস ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। এরপর টাঙ্গাইল বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি বা অটো রিকশায় সরাসরি আতিয়া মসজিদে যাওয়া যায়।
লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী
জেএমএস/এসইউ/এমএস