কলমাকান্দা গিয়ে মেঘালয় ভ্রমণ

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:০৩ পিএম, ১১ আগস্ট ২০২৩

মো. মোমিনুল ইসলাম

বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বরাবরই দারুণ। হঠাৎ করেই একদিন সবাই মিলে ঠিক করা হলো কলমাকান্দা যাবো। যেই চিন্তা, সেই কাজ! বলে রাখা ভালো, অনেকে প্রথমে রাজি না থাকলেও সকালে তারাই সবার আগে হাজির হয়ে যায়, যা এ ভ্রমণে বাড়তি আমেজ তৈরি করেছিলো।

jagonews24

নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলার পাহাড়ি সৌন্দর্যে ঘেরা একটি এলাকা হলো পাঁচগাঁও। যা রংছাতি ইউনিয়নে অবস্থিত। আমরা পরদিন সকাল ৫ টা ৪০ মিনিটে মোহনগঞ্জ লোকাল ট্রেনে করে ময়মনসিংহ থেকে রওনা করলাম কলমাকান্দায়।

আরও পড়ুন: ছুটির দিনে ঘুরে আসুন ৪০০ বছরের পুরোনো নগরীতে

ট্রেনে যাত্রা শুরু হলো সকালবেলা। ট্রেনের মধ্যে আড্ডা ও বাইরের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে একের পর এক স্টেশন শম্বুগঞ্জ,বিসকা, গৌরীপুর, শ্যামগঞ্জ, হিরণপুর, চল্লিশা নগর, নেত্রকোনা, নেত্রকোনা কোর্ট ও বাংলা পার করে ঠাকুরাকোনায় এসে পৌঁছালাম।

সবাই দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। তারপর একটা লেগুনা ভাড়া করে সবাই চাপাচাপি করে বসে আমরা কমলাকান্দার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। অনেক দূর থেকে পাহাড়গুলো দেখা যাচ্ছিলো। দূর থেকেই পাহাড়গুলোকে দেখে মনে হচ্ছে এগুলো মেঘের সঙ্গে একাকার হয়ে আছে।

jagonews24

অনেকে পাহাড় দেখে আনন্দে চিৎকার করলো অনেক বন্ধুরা। সকাল ৯টায় কলমাকান্দা বাস স্টেশনে নেমে সবাই হোটেলে নাস্তা করলাম। তারপর কয়েকটি অটো রিকশা নিয়ে আমরা পাঁচগাঁও গ্রামের দিকে রওনা করলাম।

আরও পড়ুন: ৩ দিনের সিলেট ভ্রমণে ইউএস বাংলার আকর্ষণীয় প্যাকেজ

সড়কের দু’পাশেই বিল আর সামনের দিকে পাহাড়গুলো দেখা যাচ্ছিলো। যতই মনে হয় আর একটু পরেই পাহাড় পরক্ষণেই মনে হয়, না আরো অনেক দূর! অনেক প্রতীক্ষার পরে আমরা পাঁচগাঁওয়ে পৌঁছাই।

jagonews24

এর উত্তরে গারো পাহাড়ের পাদদেশে ডিঙ্গাসদৃশ পাহাড়টি চন্দ্রডিঙ্গা নামে প্রাচীনকাল থেকেই পরিচিত। বর্তমানে স্থানটিতে ৭টি পাথরের নৌকার আকৃতি টিলা আছে। গারো পাহাড়ের ছোট ছোট অংশগুলো স্থানীয়ভাবে টিলা নামেও পরিচিত। চারপাশে সমতল ভূমির মাঝখানে অবস্থিত এই টিলা।

এই টিলার পাদদেশেই বাস করে হাজং ও গারো উপজাতীরা। টিলাগুলো অনেক সুন্দর একেবারে সবুজের সমারোহ বললেই চলে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ভারতের পাশে পাহাড়ে এখনও হাতির দেখা মেলে। ছোট-বড় কিছু প্রাণী আছে এই টিলাগুলোতে।

jagonews24

আরও পড়ুন: যে দেশে রাতেও ঝলমল করে সূর্যের আলো

টিলার পাদদেশের মেঠো পথ ধরে বিখ্যাত বটগাছের কাছে যাই। সবাই এখানে একটু জিরিয়ে নিই ও ছবি তুলি। তারপর আমরা ঝিরিপথ দিয়ে ছোট মাঝারি সাইজের বেশ কিছু ছোট ঝরনার দিকে চললাম, ঝিরিতে পা রাখা মাত্রই আমাদের ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো!

jagonews24

এতো শীতল, নির্মল, আরামদায়ক একটা পরিবেশ। ঝরনার অবিরাম স্রোতধারা আর মনোরম দৃশ্য আমাদের মনকে জুড়িয়ে দেয়। ঝরনার পানিতে মন ভরে সবাই ভিজলাম। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বিএসএফ ক্যাম্প, পাহাড়ের বুক চিরে বর্ডার কাঁটাতারের বেড়াগুলো দেখা যাচ্ছিলো।

jagonews24

অতঃপর আমরা কয়েকটা ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে বড় ঝরনার গায়ে পাথুরে প্রাকৃতিক সিঁড়ি বেয়ে টিলার উপরে উঠতে শুরু করলাম। আমরা ছাড়াও আরো অনেকেই এখানে ঘুরতে এসেছে। দূরন্ত পর্যটকেরা দিচ্ছে আনন্দের হাতছানি, চলছে সেলফি।

আরও পড়ুন: যে শহরের বাসিন্দা মাত্র ২৭ জন

টিলার উপরে দাঁড়িয়ে আছে নাম না জানা কতশত বিভিন্ন রকমের গাছপালা (কলা,কলমি,ডুমুর ইত্যাদি গাছ)। সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৌন্দর্য কাছ থেকে না দেখলে বোঝার উপায় নেই! ঘণ্টাখানেকের মতো ঝিরিপথ ধরে উপরে উঠলাম, মনে হচ্ছিলো আর একটু উপরে হয়তো ঝরনার দেখা পাবো!

jagonews24

আমাদের অনেকে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল তারা আর সামনের দিকে যেতে পারলো না (আঁকা-বাঁকা উঁচু নিচু পাথুরে পথ আমরা কেউই অভ্যস্ত নই)। আমরা কয়েক জন আরও উপরের দিকে অগ্রসর হলাম। উপরের দিকের ঝিরিপথটা আরও বেশি উঁচু ছিল, কি অনিন্দ্য সৌন্দর্য তার!

কিছুক্ষণ পর আমি একা হয়ে গেলাম, কাউকেও দেখতে পাচ্ছিলাম না! কয়েকজন বন্ধু উপরে উঠে গেছে তাদেরকে দেখা যাচ্ছিলো না। এই নিস্তব্ধ পাহাড় কি ভয়ংকর সুন্দর! সেই মুহূর্তে আমার বুকটা ধরফর করতেছিল! এই যেন পড়ে যাই পিচ্ছিল পাথর থেকে!

jagonews24

আরও পড়ুন: পৃথিবীর রহস্যময় এক স্থান, যেখানে আজও পৌঁছাতে পারেনি কেউ

বর্ডার কাছাকাছি থাকাই বিএসএফ টহল দলেরও একটা ভয় ছিল মনে! তখন আমরা মেঘালয় রাজ্যের অনেকটা ভেতরে প্রবেশ করেছিলাম। আমি আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উপরের দিকে উঠলাম না। দুপুরের পর সবাই নিচে নেমে এসে স্থানীয় উপজাতিদের দোকান থেকে চা-বিস্কুট খেয়ে আবার স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম।

jagonews24

এসে দেখি ঠাকুরাকোণা স্টেশন থেকে ট্রেনটা চলে গেছে আগেই। স্টেশনেই বসে রইলাম সারা বিকাল প্রচুর আড্ডা, খোশ গল্প ও পুকুর থেকে মাছ ধরা অনেক কিছুই উপভোগ করলাম সবাই। সন্ধ্যার পরে ট্রেন আসলে আমরা ট্রেনে করে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম।

jagonews24

পাহাড় ঝরনা আর সবুজ সমতলের এই ছোট্ট সুন্দর গ্রামটি আমাদেরকে নিরাশ করেনি। তবে পাহাড়ের চূড়ায় উঠার অপূর্ণতা আমার মনে রয়েই গেল!

লেখক: বি.এসসি ফুড ইন্জিনিয়ারিং, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,ময়মনসিংহ।

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।